DESHERPATRO

Saturday, January 11, 2014

বাংলা ভাষায় প্রবিষ্ট আরবী শব্দের বিকৃতি

বাংলা ভাষায় প্রবিষ্ট আরবী শব্দের বিকৃতি

রবিবার, অক্টোবর 20, 2013, (দেশেরপত্র) 

মোহাম্মদ রিয়াদুল হাসান

এ কথা সর্বজনবিদিত যে, বর্তমান বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশী ভাষার শব্দ যেমন- আরবি, ফারসি, উর্দু, ইংরেজি, চাইনিজ ইত্যাদির উচ্চারণ রীতিতে যথেষ্ট ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হোচ্ছে। শুধু বলার সময় উচ্চারণে ভুল হোলে কথা ছিল না, লেখার বেলায়ও যদি ভুল হয় তবে তা কোন ক্রমেই গ্রহণযোগ্য হোতে পারে না। বর্তমানে ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, সর্বত্র ইংরেজির জয়জয়কার। তাই ইংরেজি শব্দের বাংলা বানানের বিভ্রাট অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ কোরেছে। কিন্তু এটা ইতিহাস যে, এ দেশে ইংরেজি ভাষা প্রবেশের বহু পূর্বেই আরবি ও ফারসি ভাষাভাষীরা শত শত বছর এ দেশ শাসন কোরেছেন, তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি দিয়ে এদেশের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ কোরেছেন্য। তাদের ভাষা থেকে শত শত শব্দ বাংলা ভাষায় ঠাঁই কোরে নিয়েছে। কাজী রফিকুল হক এর সম্পাদনায় বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত অভিধানে ১৭১৭ টি আরবি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়। ফার্সী ভাষা আছে এর চেয়েও বেশী। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বাংলায় ব্যবহৃত অধিকাংশ আরবি শব্দের যথাযথ উচ্চারণ এবং বাংলা বানান এর মূল ভাষার ধারে-কাছেও রাখা হয় নি যেটা সম্পূর্ণ অনুচিত। কিছু কিছু শব্দ বানানের ক্ষেত্রে সঠিক থাকলেও ব্যবহারিকভাবে তার উচ্চারণ করা হোচ্ছে অশুদ্ধভাবে। অনেক শব্দ এই উভয় দোষেই দুষ্ট।

ইংরেজি শব্দের সঠিক বানান নিয়ে যেমন কেউ কেউ লিখছেন, বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত আরবি শব্দের সঠিক ব্যবহার নিয়ে তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হোচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের জন্য যিনি প্রথম উদ্যোগ নেন তিনি হেযবুত তওহীদের এমাম, এ যামানার এমাম, ঞযব খবধফবৎ ড়ভ ঃযব ঞরসব জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি এ সব শব্দের সঠিক বানান ও উচ্চারণ ব্যবহার কোরেছেন তাঁর লিখিত বইগুলিতে।আরবি শব্দ সমূহের বাংলা বানানরীতির কয়েকটি নিয়ম যেমনÑ (১) আরবি স্বরবর্ণ ‘যের’ এর জন্য বাংলায় ‘এ’-কার ব্যবহার হয়। যেমনÑ বেসমেল্লাহ (২) ‘যবর’ এর জন্য ব্যবহার হয় ‘আ’-কার। যেমনÑ আলহামদুলেল্লাহ (৩) ‘পেশ’ এর জন্য ‘ও’-কার ব্যবহার হয়। যেমনÑ মোস্তাকেম, মোহাম্মদ (৪) ‘খাড়া যের’ এবং ‘যের এর পরে যদি ইয়া সাকিন’ থাকে তাহলে ‘ি ’-কার ব্যবহার হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে ‘ ী’-কার ব্যবহার হয়। যেমনÑ রহিম, দোয়াল্লিন, (৫) আরবি ব্যঞ্জনবর্ণ ‘ইয়া’ এর উচ্চারণ বাংলায় ‘ই’ হবে ‘এ’ হবে না। যেমনÑ ‘ইয়াতিম’, ‘এতিম’ নয়, ‘ইয়ামেন’, ‘এয়ামেন’ নয়।বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত আরবি, ফারসি, তুর্কী, হিন্দী, ও উর্দু শব্দের বাংলা ভাষার অভিধানে আরবি শব্দগুলির যে বানান রীতি প্রণয়ন কোরছে সেখান থেকে কয়েকটি শব্দ সুচিন্তিত পাঠকদের জন্য উল্লেখ করা হলো।

এই বানানগুলিও বিকৃত আরবি বানান রীতির কবলে পড়ে এখন প্রায়সই ভুলভাবে লেখা হোচ্ছে এবং সেই ভুলগুলি রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ কোরেছে। বলা হোচ্ছে আরবিতে নাকি এ-কারের এবং ও-কারের উচ্চারণই নেই যা সম্পূর্ণ অসত্য। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক।বাংলা একাডেমির “আরবি, ফারসি, তুর্কী, হিন্দী, ও উর্দু শব্দের বাংলা অভিধান” থেকে নিচের তালিকাটি দেওয়া হোল।এমন উদাহরণ আমরা আরও বহু দিতে পারবো কিন্তু যুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন পাঠকের জন্য এ ক’টি উদাহরণই যথেষ্ট। আরব বিশ্বে ও বিভিন্ন মোসলেম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আরবী শব্দের উচ্চারণে যেরের স্থলে এ-কারের ন্যায় উচ্চারণ করার কয়েকটি নমুনা তুলে ধোরছি। বর্ত্তমানে পত্রপত্রিকায় মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃবৃন্দের ও কয়েকটি স্থানের নামের বানান লক্ষ্য কোরুন:১. ওসামা বিন লাদেন, ‘লাদিন’ লেখা হয় না।২. বেন আলী (তিউনেশিয়ার সাবেক প্রধান), ‘বিন আলী’ লেখা হয় না।৩. বেন বেল্লাহ (আলজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট), ‘বিন বিল্লাহ’ লেখা হয় না।৪. আলী আব্দাল্লাহ সালেহ (ইয়ামেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট), ‘সালিহ’ লেখা হয় না।৫. বেন গাজী (লিবিয়ার শহর), ‘বিন গাজী’ লেখা হয় না।৬. এল বারাদি (মিশরীয় কুটনীতিক), ইল বারাদি লেখা হয় না।আবার খেয়াল কোরুন ইয়াকীন শব্দটি। আরবি ইয়া’র উপরে যবর। ইয়া একটি স্বরবর্ণ। এর উপরে যবর হওয়ার ফলে স্বভাবতই শব্দটির প্রথম অংশের উচ্চারণ ও বানান হবে ‘ইয়া’। তবে ক্বাফ-এর নিচে যের থাকায় এর উচ্চারণ এ-কার দিয়ে হবে। অর্থাৎ ইয়াকিন শব্দটির সঠিক উচ্চারণ হবে ইয়াকেন। ঠিক যেভাবে হয় ইয়ামেন, ইয়ামিন হয় না। একইভাবে ইয়াসির এর সঠিক উচ্চারণ ও বানান হবে ইয়াসের। আইন একটি স্বরবর্ণ। এর নিচে যের হোলেও ই-কার হবে। বর্ত্তমানে লেখার ক্ষেত্রে ইয়া বর্ণের বেলায় ‘ই’ কার অর্থাৎ ‘ি ’ ব্যবহৃত হয়। আবার যের এর জন্যও ‘ই’ ব্যবহৃত হয় যা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।মাত্র ৩০/৪০ বছর আগেও সর্বত্র আরবি ‘যের’ এর উচ্চারণ এ-কার দিয়েই করা হোত। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মওলানা আকরাম খাঁ রচিত বিখ্যাত ‘মোস্তফা চরিত’ গ্রন্থটিতেও এসলামের বানান ‘এছলাম’। তার সমসাময়িক সবাই এভাবেই লিখতেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার নামের বানানে ‘এসলাম’ লিখতেন। তখনকার একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকার নাম ছিলো ‘মোসলেম ভারত’, ‘মুসলিম ভারত’ নয়। এমনকি আমরাও অনেক আরবি শব্দ এ-কার এবং ও-কার দিয়ে উচ্চারণ কোরি যা এগুলি অভিধান মোতাবেক শুদ্ধ উচ্চারণ। যেমন: কায়েম, মোবারক, মোকাবেলা, মেহরাব, কাফেলা, কাফের, মোশরেক, আলেম, জালেম, এবাদত, জামে মসজিদ, এজাহার, এতেকাফ, গায়েব, এশা, হাফেজ ইত্যাদি।

কিছুদিন হোল আরবি থেকে এ-কার (ে ) এবং ও-কার (ে া) এর ব্যবহার বাদ দেওয়া হোচ্ছে। এ পদ্ধতি যারা চালু কোরেছেন তারা শুধু যে একটি ভুলই কোরেছেন তাই নয়, তারা পুরো আরবি ভাষা থেকে দু’টি উচ্চারণই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই আরবি ভাষা উচ্চারণের (চযড়হবঃরপং) দিক থেকে খুব বেশী সমৃদ্ধ নয়; চ, ট, ঠ, থ, প, ড় ইত্যাদি অনেক উচ্চারণই এ ভাষায় নেই। তার মধ্যে এ ভাষা থেকে ‘এ’ (অ) এবং ও (ঙ)-কারের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চারণ উঠিয়ে দিয়ে আরবি ভাষাকে আরো দরিদ্র করা হোচ্ছে।বাংলাদেশে সম্প্রতি একটি আন্দোলনের নাম ‘হেফাজতে ইসলাম’ রাখা হোয়েছে। লক্ষণীয় এ আন্দোলনের উদ্যোক্তারা প্রায় সবাই বড় বড় মাদ্রাসা শিক্ষিত ব্যক্তি। এই ক্ষেত্রে আলেমরা ‘হিফাজত-ই-ইসলাম’ না লিখে ‘হেফাজতে ইসলাম’ লিখেছেন অর্থাৎ একই শব্দের মধ্যে দুইটি এ-কার ব্যবহার কোরেছেন; প্রকৃতপক্ষে তারা ‘হেফাজত’ বানান ঠিকই লিখেছেন। কিন্তু যে কারণে তারা ‘হেফাজত’ লিখেছেন সেই একই কারণে তাদের ‘ইসলাম’ না লিখে ‘এসলাম’ লেখা উচিৎ ছিল। কারণ এখানেও আলিফের নিচে যের রোয়েছে। হা-এর নিচে ‘যের’ থাকায় যদি ‘হেফাজত’ উচ্চারণ হয়, আলিফের নিচে যের থাকলে ভিন্ন সিদ্ধান্ত হোতে পারে না। সুতরাং এখানেও ‘ইসলাম’ না হোয়ে সঠিক উচ্চারণ হবে ‘এসলাম’।উচ্চারণ তত্ত্বে (চযড়হবঃরপং) এমনিতেই আরবি দরিদ্র ভাষা তার মধ্যে যদি নির্দিষ্ট উচ্চারণ বাদ দেওয়া হয় তবে কালক্রমে এই ভাষা আরো দরিদ্র হোয়ে পড়বে এবং এক সময় পূর্ণ বিকৃত হোয়ে যাবে। তাই এখনই সময় এসেছে আরবি ভাষাকে বাংলায় লেখা এবং বলার সময় সঠিকভাবে বলা এবং সঠিক উচ্চারণটি লেখা।[যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ, ফোন: ০১৬৭০ ১৭ ৪৬ ৪৩, ০১৭১১ ০০ ৫০ ২৫]-

See more at: http://desherpatro.com/2013/10/20/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f-%e0%a6%86%e0%a6%b0-3/#sthash.dxLGSulW.dpuf

No comments:

Post a Comment