রসুলাল্লাহর প্রকৃত সুন্নাহ কী?
বুধবার, অক্টোবর 16, 2013, 15:15
বিশেষ নিবন্ধ মন্তব্য যোগ করুন (দেশেরপত্র)
>রসুলের এই প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জেহাদ ছেড়ে দেবার পর নবীর সুন্নাহর বিকল্প হিসাবে নেয়া হোল তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস-অনভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি যেগুলোর সাথে তাঁর জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য, তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বের কোন সম্বন্ধই নেই; যেগুলো নেহায়েত ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিষ্ঠুর পরিহাস এই যে, আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ ত্যাগকারীদের কাছে মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বিপ্লবীর সুন্নাহ হোয়ে দাঁড়ালো, তাঁর বিপ্লব নয়, তাঁর মেসওয়াক করা, খাবার আগে জিহ্বায় একটু নিমক দেওয়া, খাবার পর একটু মিষ্টি খাওয়া, ডান পাশে শোয়ার মত ছোট-খাট অসংখ্য তুচ্ছ ব্যাপার? মানুষের ইতিহাসে কোন জাতি তার নেতার এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন কোরেছে বোলে আমার জানা নেই। রসুলুল্লাহ (দ:) বোলেছেন- আমার আসহাবরা উজ্জ্বল তারকার মত- তাদের যে কাউকে মানুষ অনুসরণ কোরতে পারে [হাদীস ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে রাযিন মেশকাত]। এর অর্থ হোচ্ছে মহানবী স্বয়ং তার আসহাবদের, তার সঙ্গীদের এসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া, সুন্নাহ কি সবই শিক্ষা দিয়েছেন সুতরাং প্রকৃত এসলাম কি তা তাঁর সঙ্গী-সাথী, আসহাবদের চেয়ে বেশী কেউ জানতে বুঝতে পারতে পারে না, তা অসম্ভব। কারণ তারা সর্বদা আল্লাহর রসুলের সঙ্গে থেকে, অবিরত তার সঙ্গে থেকে সংগ্রাম কোরে তার প্রতিটি সুখ-দুঃখে অংশীদার হোয়ে প্রকৃত এসলামের শিক্ষা গ্রহণ কোরেছিলেন, যে শিক্ষা অর্জন পরবর্তীতে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আরেকটি হাদীসে বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন আমার উম্মাহ ভবিষ্যতে তেহাত্তর ভাগে (ফেরকায়) বিভক্ত হোয়ে যাবে। এবং ঐ তেহাত্তর ফেরকার মধ্যে একটি ফেরকা জান্নাতী (অর্থাৎ সঠিক এসলামে থাকবে) আর বাকি বাহাত্তর ফেরকাই জাহান্নামী। ঐ একমাত্র জান্নাতি ফেরকা কোনটা এই প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রসুল (দঃ) বোললেন, যার ওপর আমি ও আমার সাহাবীরা আছি [হাদীস- আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে- তিরমিযি, মেশকাত]।
এ ব্যাপারে অগুনতি হাদীস উল্লেখ করা যায় যা থেকে প্রমাণ হোয়ে যায় যে মহানবী (দঃ) তার আসহাবদের প্রকৃত দ্বীন শিক্ষা দিতে সমর্থ হোয়েছিলেন, আর তা যদি নাই হয় তাহোলে তো মহানবীর সমস্ত শিক্ষাই ব্যর্থ হয়, আর এটা কখনো হতে পারে না।তাইতো ইতিহাসে দেখি ঐ সদ্য প্রসূত জাতি, যার নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু মিলিয়ে পাঁচ লাখও সংখ্যায় হবে না, টাকা নাই, পয়সা নাই, প্রাকৃতিক সম্পদ নাই, কিছুই নাই, প্রায় নিরস্ত্র, তবুও তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাদের রসুলের শিক্ষা, রসুলের দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য দেশ থেকে বের হোয়ে যেয়ে তদানীন্তন পৃথিবীর দুই বৃহৎ শক্তি- যাদের আমরা বলি পরাশক্তি (ঝঁঢ়বৎ চড়বিৎ) তাদের অপরিমীত সম্পদ, অসংখ্য লোকবল, উন্নত প্রযুক্তি এবং বিরাট সুসজ্জিত, সুশিক্ষিত সামরিক বাহিনীগুলির সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। সামরিক দৃষ্টিকোণ এটা ছিলো এক আত্মহত্যার মত। যে মুজাহিদরা আরব থেকে বেরে হোয়ে ঐ বিশ্ব শক্তিগুলির সামনে দাঁড়িয়ে তাদের নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী তিন শর্ত দিয়েছিলেন শুধু তাদের আত্মহত্যাই নয়, রসুলের ঐ নতুন জাতিটিরও আত্মহত্যা। কারণ যদি তারা ঐ অসম যুদ্ধে হেরে যেতেন তবে তাদের ঐ দুঃসাহসের শাস্তি দিতে ঐ বিশ্বশক্তি দু’টো আরবের ভেতরে ঢুকে ঐ নতুন রাষ্ট্রটাকে ধ্বংস কোরে দিতে পারতো এবং তাহোলে আজ এসলাম বোলে কোন দীন থাকতো না এবং মোসলেম বোলে কোন জাতিও থাকতো না।কিন্তু ইতিহাস হোল, ঐ বিশ্ব শক্তি দু’টি উম্মতে মোহাম্মদীর তিন শর্তের মধ্যে শেষ শর্তটিই বেছে নিয়েছিলো এবং নিজেরা টুকরো টুকরো হয়ে ধ্বংস হোয়ে গিয়েছিলো।
উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে মাত্র ৬০/৭০ বছরের মধ্যে পশ্চিমে মরক্কোতে, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল থেকে পুর্বে চীনের সীমান্ত আর উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিরাট এলাকায় এই শেষ জীবন-ব্যবস্থা আল্লাহর দেওয়া সত্য দীন প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব এই মহা বিজয় কি কোরে সম্ভব হোল তা এক বিরাট প্রশ্ন। এর উত্তর হোল, যেহেতু ঐ উম্মাহ, জাতি আল্লাহর শেষ নবীর (দঃ) অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ কোরতে জীবনের সব কিছু ত্যাগ কোরে বের হোয়ে পড়েছিলেন কাজেই আল্লাহ স্বয়ং ঐ উম্মাহর সঙ্গে থেকে তাদের সাহায্য করেছিলেন, আর আল্লাহ যাদের সাহায্যকারী, অভিভাবক হন তাদের পরাজিত করে কোন শক্তি? ঐ উম্মাহও জানতেন আল্লাহ যে কারণে পৃথিবীতে তার নবীদের বিশেষ কোরে তার শেষ নবীকে (দঃ) পাঠিয়েছিলেন- অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া দ্বীন প্রতিষ্ঠা, তাই কোরতে তারা অগ্রসর হোয়েছেন কাজেই তাদের সাহায্য কোরতে আল্লাহ ওয়াদাবদ্ধ (কোরান- সুরা বাকারা ২৫৬)।সংক্ষেপে বোললে বোলতে হয় রসুলাল্লাহর (দঃ) আসহাবরা (রাঃ) অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদী হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি কোরেছিলেন যে, তাদের অস্তিত্বের অর্থই হোলো তাদের নেতা বিশ্বনবী মোহাম্মদের (দঃ) সুন্নাহ অনুসরণ করা, অর্থাৎ তিনি সারাজীবন ভর যে কাজটি কোরেছেন সেই কাজ চালিয়ে যাওয়া। সে কাজটি হোচ্ছে, যেহেতু তিনি (দঃ) সমস্ত পৃথিবীর জন্য প্রেরিত হোয়েছেন কাজেই পৃথিবীময় এই শেষ এসলাম প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করা। সে সংগ্রাম মানুষকে বুঝিয়ে, কথা বোলে, লিখে এবং সশস্ত্রভাবে, সর্বতোভাবে। মহানবীর (দঃ) জীবিতকালে তারা তাদের পার্থিব যা কিছু ছিলো সব দিয়ে এবং শেষে প্রাণটুকু দিয়ে তাকে তার দায়িত্ব পুরণে সাহায্য কোরেছেন, তার প্রতি কাজে প্রতি প্রচেষ্টায় তার সাথে থেকে তাকে আপ্রাণ সাহায্য কোরেছেন। তার প্রতিটি সুখ-দুঃখের তারা অংশীদার হোয়েছেন। তারপর যখন তিনি তাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন তখন তারা তাদের নেতার কাজে যেন কোন বিরতি না হয় সেজন্য সেই সংগ্রাম পূর্ণভাবে চালু রাখলেন। সেই কাজের বিরাটত্ব, সংকট, বিপদ তাদের এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধাগ্রস্থ কোরতে পারলো না। কারণ তারা তাদের নেতার (দঃ) পবিত্র মুখে শুনেছিলেন, যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে আমাদের কেউ নয় (হাদীস)।
তারা বুঝেছিলেন ‘তাঁর (দঃ) বা তাদের কেউ নয়’ অর্থ উম্মতে মোহাম্মদীই নয় এবং তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ হোল পৃথিবীতে এই জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বিশ্বনবীর (দঃ) আসহাব তাদের নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী হবার অর্থ, রসুলের সুন্নাহ, রসুলের রেখে যাওয়া কাজ বোলতে কী বুঝেছিলেন এবং ঐ উম্মাহ কিসের প্রভাবে একটা অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত জাতি থেকে এক রাতে বিশ্বজয়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হোয়েছিলেন তা দেখাতে ইতিহাস থেকে দু’একটা ঘটনা পেশ কোরছি।উম্মতে মোহাম্মদীর মুজাহিদ বাহিনী শেষ এসলাম পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা কোরতে কোরতে আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে যখন যেয়ে পৌঁছলেন তখন তারা দেখলেন তাদের সম্মুখে মহাসমুদ্র, আর সামনে এগোবার পথ নেই। তখন নেতার (দঃ) ও উম্মাহর উদ্দেশ্য সাধনে নিবেদিত প্রাণ সেনাপতি উকবা বিন না’ফে আটলান্টিক মহাসমুদ্রে তার ঘোড়া নামিয়ে দিলেন এবং যতদূর পর্যন্ত ঘোড়ার পায়ের নীচে মাটি পাওয়া গেলো ততদূর এগিয়ে গেলেন এবং তারপর আসমানের দিকে দু’হাত তুলে বোললেন- ইয়া আল্লাহ! এই মহাসমুদ্র বাধা না দিলে আমরা তোমার রাস্তায় আরও সম্মুখে অগ্রসর হোতাম। অন্যদিকে পশ্চিমদিকে মুজাহিদ বাহিনীর সেনাপতি আমর (রাঃ) মিশরের আর্চ বিশপের কাছে যে প্রতিনিধি দল পাঠালেন তার দলপতি নিগ্রো উবায়দা (রাঃ) আর্চ বিশপকে কী বোললেন। একজন নিগ্রোর সাথে ঘৃণাভরে আর্চ বিশপ প্রথমে কথাই বোলতে চান নি। পরে যেহেতু সেনাপতি আমর (রাঃ) ঐ নিগ্রোকেই দলপতি কোরে পাঠিয়েছেন কাজেই বাধ্য হোয়ে তার সাথে কথা বোলতে হোল। উবায়দা (রাঃ) আর্চ বিশপকে বোললেন, “আমাদের বাহিনীতে আমার মত এক হাজার কালো লোক আছে। আমরা শত শত্র“ বাহিনীর সাথে একসাথে যুদ্ধ কোরতে তৈরি আছি। আমরা বেঁচেই আছি শুধু আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্য। আমরা ধন দৌলতের কোন পরওয়া করি না। আমাদের শুধু পেটের ক্ষুধা মেটানো আর পরার কাপড়ের বেশী আর কিছুই চাই না। আমাদের কাছে এই পৃথিবীর জীবনের কোন দাম নেই। এর পরের জীবনই আমাদের কাছে সব।” এ ঘটনা এসলামের ইতিহাসে তো আছেই যারা আমাদের কোন কিছুই ভালো দেখেন না তাদের ইতিহাসবেত্তারাও এই ঘটনাকে সত্য বোলে গ্রহণ কোরেছেন (দেখুন ঝ.ঝ. খববফবৎ এর ঠবরষবফ গুংঃবৎরবং ড়ভ ঊমুঢ়ঃ ৩৩২ পৃঃ থেকে ৩৩৫ পৃঃ )। উম্মতে মোহাম্মদীর অবিশ্বাস্য বিজয়ের মূলে ছিলো রসুলের শেখানো এসলামের সঠিক আকীদা, এসলামের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং এই আকীদা, এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের পরিণত কোরেছিল এক দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, অপরাজেয়, ঐক্যবদ্ধ, সুশৃংখল জাতিতে যাদের নাম শুনলে অমুসলিমের আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠতো।
বিশ্বনবীর (দঃ) উম্মাহ এবং প্রতিনিধি হিসাবে সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে এই শেষ এসলামকে মানুষের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগত জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠাই হোচ্ছে শেষ এসলামের সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম লক্ষ্য এবং রসুলাল্লাহর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ।রসুলাল্লাহর এই প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জেহাদ ছেড়ে দেবার পর নবীর সুন্নাহর বিকল্প হিসাবে নেয়া হোল তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস-অনভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি যেগুলোর সাথে তাঁর জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য, তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বের কোন সম্বন্ধই নেই; যেগুলো নেহায়েত ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিষ্ঠুর পরিহাস এই যে, আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ ত্যাগকারীদের কাছে মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বিপ্লবীর সুন্নাহ হোয়ে দাঁড়ালো, তাঁর বিপ্লব নয়, তাঁর মেসওয়াক করা, খাবার আগে জিহ্বায় একটু নিমক দেওয়া, খাবার পর একটু মিষ্টি খাওয়া, ডান পাশে শোয়ার মত ছোট-খাট অসংখ্য তুচ্ছ ব্যাপার? মানুষের ইতিহাসে কোন জাতি তার নেতার এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন কোরেছে বোলে আমার জানা নেই।[যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১৮৫৩৯৯৩২২২, ০১১৯১৩৬৭১১০, ০১৭৮২১৮৮২৩৭, ০১৫৫৯৩৫৮৬৪৭]
Share
- See more at: http://desherpatro.com/2013/10/16/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b7-%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%b0%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%b0-%e0%a6%aa/#sthash.Lwbqokeb.dpuf
No comments:
Post a Comment