বিবাহ কাকে করা যাবে তার বিধান
২৩:০৫-০৬ এর আনুষঙ্গিক আলোচনাঃ (ক) আযওয়ায = normal married women / normal wife. মা মালাকাত আইমান = MMA married women / MMA wife. অর্থাৎ আযওয়ায হচ্ছে স্বাধীন নারীদের মধ্য থেকে বিবাহিত স্ত্রী। আর ‘মা মালাকাত আইমান’ হচ্ছে ‘যাকে নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতির আওতায় তার অভিভাবকত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়েছে সেই নারীদের মধ্য থেকে বিবাহিত স্ত্রী। এ বিষয়টি বিস্তারিত বুঝার জন্য প্রথমত আমরা যেসব আয়াতে ‘মা মালাকাত আইমান’ ইত্যাদি শব্দ আছে তার তালিকা উল্লেখ করছি। মা মালাকাত ইয়ামীনুকা = ৩৩:৫০, ৩৩:৫২। মা মালাকাত আইমানুকুম = ০৪:০৩, ০৪:২৪, ০৪:২৫, ০৪:৩৬, ২৪:৩৩, ৩০:২৮। মা মালাকাত আইমানুহুম = ১৬:৭১, ২৩:০৬, ৩৩:৫০, ৭০:৩০। মা মালাকাত আইমানুহুন্না = ২৪:৩১, ৩৩:৫৫। আল্লাযীনা মালাকাত আইমানুকুম = ২৪:৫৮। আল্লাযীনা আক্বাদাত আইমানুকুম = ০৪:৩৩। সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে, ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’ বলতে যুদ্ধবন্দী ও দাস-দাসী/ চাকর-চাকরানী বুঝায় আবার কেউ বলেন শুধু দাসী/ চাকরানী বুঝায়। আমরা প্রথমে দেখবো যে, এটি দ্বারা কি নারী পুরুষ উভয়কে বুঝায় না শুধু নারীকে বুঝায়? তারপর দেখবো যে, এটি দ্বারা যুদ্ধবন্দী ও দাস-দাসীকে/ চাকর-চাকরানীকে বুঝায় কিনা? ২৪:৩৩ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘ওয়াল্লাযীনা ইয়াবতাগূনাল কিতাবা মিম্মা মালাকাত আইমানুকুম ফাকাতিবূহুম ইন আলিমতুম ফীহিম খায়রান’। আয়াতটিতে ‘ওয়াল্লাযীনা, ইয়াবতাগূনা, ফাকাতিবূহুম এবং ফীহিম’ এই চারটি শব্দ ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যার প্রতিটি পুংলিঙ্গের শব্দ। আরবী ব্যাকরনের নিয়মে পুংলিঙ্গের শব্দ ব্যবহৃত হয় পুংলিঙ্গের জন্য এবং উভয়লিঙ্গের জন্য কিন্তু কখনো তা শুধু স্ত্রীলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় না। যদি ‘মা মালাকাত আইমান’ বলতে শুধু নারীদেরকে বুঝাতো তাহলে শব্দগুলো হতো ‘ওয়াল্লাতী/ ওয়াল্লায়ী, ইয়াবতাগুনাল (অর্থাৎ ‘ওয়াও’ থাকতো না), ফাকাতিবুহুন্না, ফীহিন্না’। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, ‘মা মালাকাত আইমান’ বলতে নারী-পুরুষ উভয়কে বুঝায়। এখন প্রশ্ন হলো যে, ‘মা মালাকাত আইমান’ বলতে ‘যুদ্ধবন্দী ও দাস-দাসী/ চাকর-চাকরানী’কে বুঝায় কিনা? কুরআনের আলোকে যুদ্ধবন্দী = ‘আসরা, আসিরা, উসারা’ (০২:৮৫, ০৮:৬৭, ০৮:৭০, ৩৩:২৬, ৭৬:০৮)। দাস = ‘আবদুন, ইবাদ’ (০২:২২১, ১৬:৭৫, ২৪:৩২)। দাসী = ‘আমাতুন, ইমাউন’ (০২:২২১, ২৪:৩২)। ডানহাত = ইয়ামিন (১৭:৭১, ২০:১৭, ৫৬:২৭, ৩৮:৯০-৯১, ৭৪:৩৯) ডানহাত = মাইমানাহ (৫৬:০৮, ৯০:১৮)। অঙ্গীকার/ প্রতিশ্রুতি = আইমান (০২:২২৪-২২৫, ০৫:৮৯, ১৬:৯২, ১৬:৯৪, ৬৬:০২) ০৪:৩৬ অনুসারে, ‘মা মালাকাত আইমান’ অবশ্যই ‘ইয়াতিম, মিসকীন ও ইবনে সাবীলের’ চেয়ে ভিন্ন। মু’মিন = মু’মিন পুরুষ বা মু’মিন নারী যে কেউ (০৪:১২৪) আযওয়ায = স্বামীর জন্য স্ত্রী, স্ত্রীর জন্য স্বামী (০২:২৩২, ০২:২৩৪) ১২:২৪ এবং ১২:২৯-৩৪ অনুসারে দাসের (বা দাসীর) সাথে বিবাহ বহির্ভুত যৌন কর্ম হচ্ছে ফাহেশা/ অশ্লীলতা, অপরাধ ও মন্দকর্ম। এবং উপরোক্ত সমস্ত বিবেচনায় রাখলে স্পষ্টত: প্রতীয়মান হয় যে, ‘মা মালাকাত আইমান’ অর্থ ‘যুদ্ধবন্দীও নয়, দাস-দাসী/ চাকর-চাকরানীও নয়’। বরং ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’ হচ্ছে ‘যাদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতির আওতায় স্বীয় অভিভাবকত্বাধীনে গ্রহণ করা হয়েছে। ৩৩:৫০ আয়াতে আছে ‘’মা মালাকাত ইয়ামীনুকা মিম্মা আফাআল্লাহু আলাইকা’। আয়াতটিতে ‘মিম্মা’ শব্দটি প্রমাণ করে যে, ‘ফায়’ হিসাবে যেসব নারী এসেছে তারা সবাই ‘মা মালাকাত ইয়ামীনুকা’ বলে চিহ্নিত হয়নি, বরং তাদের মধ্যে যাকে ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ নিজে তাঁর তত্ত্বাবধানের আওতায় গ্রহণ করেছেন তারাই ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ‘মা মালাকাত ইয়ামীন’। ‘ফায়’ এর ব্যাখ্যা ৩৩:৫০ এর আনুষঙ্গিক আলোচনায় উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ। যারা বিবাহ ছাড়াই ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীর সাথে সহবাস করার মত প্রকাশ করেন তাঁরা কিন্তু বিবাহ ছাড়াই ‘মা মালাকাত আইমান’ পুরুষের সাথে সহবাস করার কথা বলেন না, যা তাঁদের একটি স্ববিরোধিতা এবং ভিত্তিহীন মতবাদ। অথচ ২৪:৩১, ৩৩:৫৫ আয়াত অনুসারে নারীদেরও ‘মা মালাকাত আইমান’ হয়। কারণ ‘মা মালাকাত আইমানুহুন্না’ বাক্যাংশে ‘হুন্না’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গের এবং এর দ্বারা বুঝায় নারীদের ‘মা মালাকাত আইমান’। আর আমরা আগেই দেখেছি যে, ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীও হয়, পুরুষও হয়। সুতরাং নারীদেরও এমন ‘মা মালাকাত আইমান’ থাকতে পারে যারা পুরুষ। আসলে, বিবাহ ছাড়া ‘মা মালাকাত আইমানের’ সাথে সহবাস করা যাবে না, বরং ‘মা মালাকাত আইমানের’ সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে তাদেরকে বিবাহ করতে হবে (০৪:০৩, ০৪:২৫)। পুরুষের জন্য বিশেষ প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে একাধিক নারীকে বিবাহ করা বৈধ রাখা হয়েছে কিন্তু কোন নারী একাধিক পুরুষের সাথে একই সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই কোন নারী তার স্বামী থাকা সত্ত্বেও ‘মা মালাকাত আইমান’ পুরুষকে বিবাহ করতে পারে না। এমনকি কোন নারী শুধুমাত্র ‘মা মালাকাত আইমান’ শ্রেণী থেকেও একাধিক পুরুষকে বিবাহ করতে পারে না।
হেদায়াহ এবং তাকওয়া দীনুল এসলামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে বর্তমানে আমাদের আকিদা যেমন বিকৃত ও ভুল, তেমনি তাক্ওয়া ও হেদায়াহ সম্বন্ধেও আমাদের ধারণা ভুল। কোন দুষ্ট প্রকৃতির গোনাহগার লোককে যদি উপদেশ দিয়ে মদ খাওয়া ছাড়ানো যায়, চুরি-ডাকাতি ছাড়ানো যায়, তাকে মুসল্লী বানানো যায়, সওম রাখানো যায় তবে আমরা বলি- লোকটা হেদায়াত হোয়েছে। ভুল বলি। কারণ আসলে সে হেদায়াত হয় নি, মুত্তাকী হোয়েছে। তাক্ওয়া এবং হেদায়াহ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
Wednesday, January 15, 2014
বিবাহ কাকে করা যাবে তার বিধান
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment