আলেম দাবিদারদের প্রতি কয়েকটি সরল প্রশ্ন
বুধবার, ডিসেম্বর 18,2013 (দেশেরপত্র)
আল্লাহ এ জাতিকে মানবজাতির মধ্যে সর্বোত্তম জাতি হিসাবে ঘোষণা কোরেছেন কারণ তিনি এই জাতির উত্থান ঘোটিয়েছেন এই জন্য যে, তারা মানবজাতিকে ন্যায়ের নির্দেশ দেবে ও অন্যায় প্রতিহত কোরবে (সুরা এমরান ১১০)। স্বভাবতই, জাতি যদি এই কাজ জাতিগতভাবে ত্যাগ করে তবে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে না, তারা নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হবে। বিশেষ কোরে যারা নিজেদেরকে মোসলেম উম্মাহর পথ প্রদর্শক বা রাহবার দাবি করেন, তারাই যখন ঐক্যহীন, পরস্পর বিবাদে লিপ্ত, মাসলা মাসায়েল নিয়ে কূটতর্কে জড়িত থাকেন তখন সেই জাতির পক্ষে শ্রেষ্ঠত্বের আসন ধোরে রাখার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। যেমন: যখন জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি ও ব্যাংকিং পদ্ধতি হিসাবে সুদকে প্রচলন করা হয় তখন আমরা দেখি একদল আলেম সেটাকে হারাম বোলে ফতোয়া দেন, এর বিরুদ্ধে ওয়াজ করেন, আরেকদল আলেম সেটাকে জায়েজ করার জন্য বহু রকম ব্যাখ্যা বের করেন, বিভিন্ন হেকমত বের কোরে, ইজমা, কেয়াস কোরে বহু রকম নাম দিয়ে সেটিকে জায়েজ করেন। সাধারণ মানুষ যথারীতি বিভ্রান্ত হয়।আলেমদের উপর্যুপরি মিথ্যাচার ও বিপরীতমুখী ফতোয়া প্রদানের ফলে সাধারণের মনে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হোয়ে গেছে যে, এসলাম বোঝা সাধারণ লোকের কর্ম নয়, এসলাম নিয়ে কথা বলার কোন এখতিয়ার তাদের নেই। এসলাম বুঝতে হোলে মাদ্রাসায় পড়াশুনা কোরে আগে ‘আলেম’ হোতে হবে, নয়তো সেই স্বঘোষিত আলেমদের কাছে যেতে হবে। এখন মাদ্রাসায় না পড়া কোন ব্যক্তি যদি এসলামের প্রকৃত আকীদা বুঝতে পারেন, আল্লাহর সর্বব্যাপী তওহীদ উপলব্ধি কোরে তার ভিত্তিতে শতধাবিচ্ছিন্ন এই জনসংখ্যাটিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন এবং আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্রতী হন, তখন কিন্তু এই আলেম দাবিদাররাই ফতোয়া জারি কোরে সাধারণ মানুষকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন এই বোলে যে, ও এসলামের কি বোঝে, ও কি মাদ্রাসায় পড়েছে, ওর কি দাড়ি আছে, সুন্নতি লেবাস আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাস, ওমনি সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি অবাঞ্ছিত, এমন কি কাফের সাব্যস্ত হোয়ে যান, তাকে মারধোর কোরে তাড়িয়ে দেয়া হয়, তার কোন কথাই শোনা হয় না।
আজকের ধর্মের সেই ধারক বাহক আলেম মাওলানা, মুফতি, মোহাদ্দেস, মোফাস্সের যারা ওয়াজ করেন, এমামতি করেন, যারা নিজেদের নায়েবে নবী বোলে দাবি করেন, তাদের কাছে সবিনয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।
১. আল্লাহ বোলেছেন যারা আল্লাহর বিধান মোতাবেক শাসন করে না তারা কাফের, যালেম, ফাসেক (সুরা- মায়েদা, ৪৪, ৪৫, ৪৭)। মোসলেম দাবিদার এই জাতি যারা তাদের জাতীয় জীবনে আল্লাহর বিধান অর্থাৎ কোর’আনের আইন মানে না, ইহুদি খ্রিস্টানদের তৈরি আইন কানুন মেনে চলে তারা এই আয়াত মোতাবেক মোমেন বা মোসলেম থাকে কিনা?
২. রসুলাল্লাহ যে সংগ্রাম করে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন, তাঁর সাহাবীরা দুনিয়ার সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে রসুলের উপর নাজেল হওয়া জীবনবিধান প্রতিষ্ঠা কোরে উম্মতে মোহাম্মদী হোয়েছিলেন, ঐ কাজ বাদ দিয়ে উম্মতে মোহাম্মদী হওয়া সম্ভব কিনা?
৩. আল্লাহ কোর’আনে বোলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর (সুরা এমরান ১০৩)। রসুলাল্লাহ বোলেছেন Ñ তোমরা মতভেদ কোর না, মতভেদ কুফর (হাদিস-আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে- মুসলিম, মেশকাত) । আজ আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবীতে মুসলমান নামক এই জাতি ধর্মীয় মতবাদে শিয়া, সুন্নী, শাফি, হানাফী, আহলে হাদিস, আহলে সুন্নাহ ইত্যাদি, আধ্যাত্মিকভাবে নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, কাদেরিয়া, চিশতিয়া ইত্যাদি বহু তরিকায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ৫০টির বেশি ভূখণ্ডে বিভক্ত হোয়ে আছে। ইহুদি খ্রিস্টানদের নকল কোরে তাদের রাজনৈতিক মতবাদ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি হাজারো মতবাদে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগের পক্ষেও আলেমদের অবস্থান রোয়েছে। আমার প্রশ্ন: মোসলেম জাতির মধ্যে এই যে বিভক্তি- এটা কুফর কিনা? উম্মাহর সংজ্ঞা মোতাবেক এই জাতি এত বিভক্তির পরেও এক উম্মাহ থাকে কিনা যেখানে আল্লাহর রসুল বোলেছেন, ‘আমার উম্মাহ একটি দেহের ন্যায়’? (নুমান আল বশির (রা:) থেকে মোসলেম)
৪. আল্লাহ কোর’আনে বোলেছেনÑ “নিশ্চয়ই আল্লাহ যে কেতাব নাযেল কোরেছেন, যারা তা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা নিজের পেটে আগুন ব্যতীত অন্য কিছুই পুরে না। [বাকারা-১৭৪]” যারা নামায পড়িয়ে, দোয়া কোরে, ওয়াজ কোরে আরও বহুভাবে ধর্মের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করেন, তারা আগুন খাচ্ছেন কিনা? যারা আগুন ভক্ষণ করেন, ধর্মের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেন তারা কি মোসলেম থাকেন কি না?
৫. আল্লাহ মোমেনের সংজ্ঞা দিয়েছেন, ‘মো’মেন শুধুমাত্র তারাই যারা আল্লাহ এবং রসুলের উপর ঈমান আনার পর তাতে আর সন্দেহ পোষণ করে না অর্থাৎ দৃঢ় থাকে, এবং আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ও জীবন উৎসর্গ করে জেহাদ (সর্বাত্মক সংগ্রাম) করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ্য (সুরা হুজরাত ১৫)।’ এই আয়াতের আলোকে এই জনসংখ্যাটি মো’মেন কিনা?৬. আল্লাহ ওয়াদা কোরেছেন- তোমরা যদি মো’মেন হও তবে পৃথিবীর কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেবো যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দিয়েছিলাম (সুরা নুর ৫৫)। তাঁর ওয়াদা যে সত্যতার প্রমাণ নিরক্ষর, চরম দরিদ্র, সংখ্যায় মাত্র পাঁচ লাখের উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে তিনি বিশ্বের কর্তৃত্ব তুলে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হোচ্ছে, আল্লাহর ওয়াদা মোতাবেক এই জাতির হাতে আজ পৃথিবীর কর্তৃত্ব নেই কেন? কর্তৃত্ব দূরে থাক, এ জাতি আজ ফুটবলের মত অন্যান্য সব জাতির লাথি খাচ্ছে। তাহোলে এই জাতি যদি নিজেদের মো’মেন বা ঈমানদার দাবি করে তবে তাদেরকে বোলতে হবে যে, আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ কোরেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। আর আল্লাহ যদি মিথ্যা না বোলে থাকেন তবে এই জাতি তার সমস্ত নামায, যাকাত, হজ্ব রোযা সব সুদ্ধ বেঈমান অর্থাৎ কাফের, মোশরেক। আর কোন সিদ্ধান্ত আছে কি?
৭. আল্লাহ মোসলেমদেরকে উদ্দেশ্য কোরে বোললেন তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি (আল এমরান ১১০)। আজ জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বনিকৃষ্ট হওয়ার পরও, সকল জাতির মার খেয়েও, সকল জাতির গোলামী করার পরও মোসলেম দাবিদার জাতিটি সর্বশ্রেষ্ঠ? নাকি এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে মোসলেম নয়?
৮. আল্লাহ বোলেছেন – তিনি মো’মেনদের ওয়ালী (বাকারা ২৫৭)। ওয়ালী অর্থ- অভিভাবক, বন্ধু, রক্ষক ইত্যাদি। আল্লাহ যাদের ওয়ালী তারা কোনদিন শত্র“র কাছে পরাজিত হোতে পারে? তারা কোনদিন পৃথিবীর সর্বত্র অন্য সমস্ত জাতির কাছে লাঞ্ছিত, অপমানিত হোতে পারে? তাদের মা-বোনরা শত্র“দের দ্বারা ধর্ষিতা হোতে পারে? আল্লাহ কি এই জাতিকে রক্ষা কোরতে অসমর্থ?
৯. রসুলাল্লাহ বোলেছেন, ‘আল্লাহ আমাকে পাঁচটি কাজের আদেশ কোরেছেন। আমি সেগুলি করার জন্য তোমাদেরকে আদেশ কোরছি। সেগুলো হোল :(১) ঐক্যবদ্ধ হও।(২) (নেতার আদেশ) শোন।(৩) (নেতার ঐ আদেশ) পালন করো।(৪) হেজরত করো।(৫) (এই দীনুল হক কে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করো।যে ব্যক্তি (কর্মসূচির) এই ঐক্যবন্ধনী থেকে এক বিঘত পরিমাণও বহির্গত হোল, সে নিশ্চয় তার গলা থেকে এসলামের রজ্জু (বন্ধন) খুলে ফেললো- যদি না সে আবার ফিরে আসে (তওবা করে) এবং যে ব্যক্তি অজ্ঞানতার যুগের (কোনও কিছুর) দিকে আহ্বান কোরলো, সে নিজেকে মোসলেম বোলে বিশ্বাস কোরলেও, নামায পোড়লেও এবং রোযা রাখলেও নিশ্চয়ই সে জাহান্নামের জ্বালানি পাথর হবে [আল হারিস আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে আহমদ, তিরমিযি, বাব উল এমারাত, মেশকাত]।এই হাদিস মোতাবেক জাতিটি ঐক্যবদ্ধ না হোয়ে, নেতার আদেশ না শুনে, পালন না কোরে, হেজরত না কোরে এবং জেহাদ না কোরে নিজেদের গলদেশ থেকে এসলামের বন্ধন খুলে ফেলেছে কি না এবং জাহান্নামের জ্বালানি পাথর কি না?আমি জানি, মাদ্রাসায় পড়ে ‘নায়েবে নবী’ হওয়ার তীব্র অহংবোধের কারণেই হোক আর ধর্মব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই হোক, এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার সৎসাহস অধিকাংশ আলেম দাবিদারদেরই হবে না। তবু প্রশ্নগুলি রাখলাম কারণ এগুলি থেকে হয়তো কোন সত্যান্বেষী মন এগুলির সঠিক উত্তর খুঁজে নেবেন।
লেখিকা: রুম্মানা খানম কণিকা
হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সদস্যা ও যামানার এমামের অনুসারী। যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ ফোন: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫
- See more at: http://desherpatro.com/2013/12/18/%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%ae-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a7%9f/#sthash.ktLKz90f.dpuf
সিকদার-----
No comments:
Post a Comment