DESHERPATRO

Wednesday, December 9, 2015

তিষ্ঠ ক্ষণকাল!!! ধর্মের বিলোপ নয়, প্রয়োজন ধর্মব্যবসায়ীদের কর্তৃত্বহরণ

তিষ্ঠ ক্ষণকাল!!! ধর্মের বিলোপ নয়, প্রয়োজন ধর্মব্যবসায়ীদের কর্তৃত্বহরণ

ধর্ম নিয়ে এত গোলমাল। তাই প্রগতিবাদী দাবিদার একটি বড় সংখ্যার মানুষ আশা করেন এমন একটি পৃথিবী যেখানে ধর্ম বলে কিছু থাকবেই না। জন লেনন গেয়েছেন,

Imagine there's no countries, It isn't hard to do

Nothing to kill or die for, and no religion too

Imagine all the people, living life in peace...

(পচানুবাদ: আহা! কেমন হতো যদি কোনো দেশ ভাগাভাগি না থাকতো! এটা এমন কি কঠিন! সেক্ষেত্রে এত খুনোখুনি থাকতো না। আর যদি এমন হতো যে কোনো ধর্মও নেই? ভাবুন কেমন সুখে শান্তিতে মানুষ তার জীবন কাটাতো!)

কী সুন্দর কথা, তাই না? ধর্ম যেহেতু মানুষে মানুষে বিভেদের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই ধর্মকেই যদি বাদ দেওয়া যেত তাহলে বিভেদ থাকতো না। আবার পৃথক দেশ না হয়ে যদি সমগ্র পৃথিবী এক দেশ হতো তাহলে কত মারামারি বন্ধ হয়ে যেত। ভাবতে ভালোই লাগে। কে না চায় এমন শান্তিময় দুনিয়া? কিন্তু....

এবার কাজের কথায় আসুন। মানুষের হৃদয় থেকে ধর্মকে বাদ দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে দেখবেন গত কয়েক শতাব্দীতে ধর্মকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা দার্শনিক মতবাদ, শিক্ষাব্যবস্থা, জীবনব্যবস্থা, ধর্মবিরোধী প্রচার-প্রচারণার দ্বারা কম করা হয় নি। 

রাশিয়া তো একেবারে ধর্মকে লাথি দিয়ে তাড়িয়ে দিতেই চেয়েছিল, কিন্তু কদিন আগেই দেখলাম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তার দেশে মসজিদ উদ্বোধন করছেন। তিনি এখন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। নাস্তিকদের মক্কা হচ্ছে মস্কো। হাজার হাজার উপাসনালয় সেখানে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে কম্যুনিস্ট বিপ্লবের পর থেকে অর্ধশতাব্দী সময়ে। সেখানে যদি আবার মসজিদ উদ্বোধন করতে হয় তাহলে ধর্ম বাদ দেওয়া যে এত মুখের কথা না, তা প্রমাণ হয়ে যায়।

ধর্ম ইস্যুতেই টালমাটাল দুনিয়া। শালি হেবদো ইস্যুতে পুরো ইউরোপ একাট্টা হয়েছিল, ইরাক যুদ্ধকে ক্রুসেড বলা হয়েছিল, সিরিয়ান উদ্বাস্তুদর আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রেও খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের শর্ত আরোপ করেছিল ইউরোপের বড় বড় মাথাওয়ালা নেতৃবৃন্দ।হান্টিংটনের ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনও আদতে সেই ধর্ম আর ধর্মহীনতার (অধর্ম নাই বললাম) সংঘাত।

অতএব, ধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই, নির্মূল করার জন্য যে অনির্দিষ্ট সময় প্রগতিবাদীরা চান তা বানরের পিচ্ছিল বাঁশের মতো বার বার দীর্ঘায়িত হচ্ছে, পিছিয়ে যাচ্ছে তাদের ইউটোপিয়ার ধর্মহীন শান্তিপূর্ণ এক বিশ্ব। এখন মানবজাতিকে কতগুলো বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে হবে।

১.ধর্মগুলোকে মুছে ফেলা হামেশা সম্ভব নয় (প্রকৃতপক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়)। তাই ধর্মবিশ্বাসকে টিকিয়ে রেখেই শান্তির পথ ভাবতে হবে। এই সত্য তাদেরকে মানতে হবে যে, অতীতের প্রতিটি সভ্যতা যেমন সিনিক, ভারতীয়, সেমেটিক যাবতীয় সভ্যতাই ধর্মভিত্তিক ছিল এবং সেগুলো প্রগতির পথে বাধা ছিল না।

২.ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ধর্মবিশ্বাস যখন মোছা যাবে না তখন একটাই উপায় তাদের এই বিশ্বাসকে সঠিক ও কল্যাণকর পথে পরিচালিত করা, তাদেরকে ধর্মের সঠিক শিক্ষা দেওয়া। এজন্য ধর্মবিশ্বাসীদের সর্বাগ্রে অনুধাবন করতে হবে, যে ধর্মবিশ্বাস মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে তা প্রকৃত ধর্ম নয়। ধর্ম থেকে যদি অকল্যাণের বিষবাষ্প নির্গত হয় তাহলে সেটাকে অধর্ম বলে আখ্যা দেওয়ার মতো সততা তাদের মধ্যে সৃষ্টি হতে হবে।

৩.প্রতিটি ধর্মের মৌলিক বিশ্বাসগুলো এক এবং তাদের যাত্রাও মানবকল্যাণের অভিমুখে। তাই তাদের বিশ্বাসকে শুদ্ধ করে মানবকল্যাণকেই কেবলা বা গন্তব্যরূপে নির্ধারিত করতে হবে।

আমাদের প্রাচ্যের প্রসঙ্গে আসি। এই উপমহাদেরশের শিরা-ধমনীতে ধর্মবিশ্বাস প্রবাহিত। ভোটে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টই জয়-পরাজয়ের প্রধান নিয়ামক। ভারতের ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস যাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিক অভিজ্ঞতা ১২৮ বছরের, তারা আজ প্রত্যাখ্যাত আর বিজেপি ক্ষমতায়।

মুসলিম বংশোদ্ভূত হওয়াটাই রোহিঙ্গাদের অপরাধ। এজন্য তাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করার জন্য জীবন্ত পুড়িয়ে, গ্রাামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে, ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, গর্ভের শিশুও রক্ষা পায় নি ধর্মমাতাল বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের হাত থকে। নারীদের জীবনে যে কী ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। কিন্তু শান্তিতে নোবেল বিজয়ী গণতন্ত্রের মানসকন্যা ছিলেন মনোমুগ্ধকরভাবে নীরব। কারণ ভোটে জিততেই হবে।

গত কয়েক শতাব্দি থেকে মানুষকে ধর্মহীন করার জন্য ধর্মবিদ্বেষী মতবাদ প্রচার করা হয়েছে। ব্যাপক প্রচারণা, শিক্ষা ব্যবস্থা, ভোগবাদী জীবনব্যবস্থা, এবং ধর্মব্যবসায়ীদের কায়েম করে রাখা অধর্মকে, কূপমণ্ডুকতাকে দেখিয়ে, অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড দেখিয়ে একটা শ্রেণিকে ধর্মহীন বা ধর্মবিদ্বেষী করে তোলা সম্ভব হয়েছে। তবে তারা সংখ্যায় বেশি না, উপরন্তু হামলার আশংকায় অনেকেই ম্রিয়মান। আর ব্যক্তিগতভাবেও তারা আত্মকেন্দ্রিক, আরাম আয়েশে, ভোগবিলাসে অভ্যস্ত। জঙ্গিদের মতো বেপরোয়া হওয়ার কোনো পারলৌকিক অনুপ্রেরণা তাদের নেই।

পক্ষান্তরে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৫০ কোটি এবং তারা কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাসী। যারা সন্দেহবাদী তারাও মনের গভীরে বা কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে ধর্মের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। তাদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করার জন্য আছে লক্ষ লক্ষ উগ্রপন্থী, ধর্মব্যবসী। যদি ধর্মবিশ্বাসকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেওয়া হয় সেটা হবে একটি পাগলের হাতে অমূল্য সম্পদ অথবা গণবিধ্বংসী অস্ত্র তুলে দেওয়ার মতো বিপজ্জনক মূর্খতা। সেটাকে ধর্মব্যবসায়ীরা ভুল খাতে প্রবাহিত করবে। কাউকে জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করাবে, কাউকে অপরাজনীতিতে, জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচিতে ব্যবহার করবে। এক কথায় দেশকে অস্থিতিশীল করে মানুষের অকল্যাণে ধর্মকে ব্যবহার করবে। ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষও জান্নাতে যাওয়ার জন্য ঐসকল স্বার্থবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের স্বার্থ কায়েমে ব্যবহৃত হবে।

এই উগ্রপন্থী ও ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে ধর্মের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে হবে। এটা করার জন্য প্রয়োজন ধর্মের সঠিক সত্যের উদ্বোধন এবং উগ্রপন্থী ও ধর্মব্যবসায়ীদের কর্তৃত্বের অসারতা মানুষের সামনে উন্মোচিত করে দেওয়া। এবং অবশ্যই সেটা হতে হবে ধর্মীয় আদর্শের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। ধর্মান্ধতাকে সেক্যুলারিজম দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব নয় ঠিক যেভাবে ধর্মবিদ্বেষীকে কোর’আন-হাদীস দেখিয়ে ধার্মিক বানানো সম্ভব নয়।

সুতরাং দাঁড়াও, পথিক -বর, জন্ম যদি তব বঙ্গে !তিষ্ঠ ক্ষণকাল !

No comments:

Post a Comment