DESHERPATRO

Thursday, November 26, 2015

সাবধান! পৃথিবীর সামনে বিপদ

সাবধান! পৃথিবীর সামনে বিপদ

| প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০১৪

আমরা জানি পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। এর পরিণতি কী? উষ্ণ হতে হতে পৃথিবী কি একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে? বিজ্ঞানীরা তেমনই আভাস দিচ্ছেন। গ্লোবাল ওয়ার্মিং পৃথিবীর জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে। আর আমাদের এই নাগরিক সভ্যতাই প্রাথমিকভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্যে দায়ী। মূলত কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন আর কলকারখানা থেকে বের হওয়া দূষিত গ্যাসই উষ্ণায়নের প্রধান উপকরণ। এসব ক্ষতিকর উপকরণকে একসঙ্গে বলা হয়- গ্রিনহাউস গ্যাস। এই গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবী জুড়ে ঘটে চলেছে অদ্ভুত সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রকৃতির যে সব ক্ষতি হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় নিয়ে এখনই মাথা ঘামানো জরুরি হয়ে পড়েছে। যেমন-

হিমবাহ : উষ্ণায়নের প্রথম কোপটা পড়েছে হিমবাহের ওপর। মেরু অঞ্চলের হিমবাহ গলতে শুরু করায় সেই পানি গিয়ে মিশছে সমুদ্রে। ফলে সমুদ্রের পানি স্তরের উচ্চতা অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। আর এভাবে যদি তাপমাত্রা বাড়তেই থাকে তাহলে সমুদ্র উঁচু হতে হতে নিচু অঞ্চলের জমিগুলো এক এক করে গ্রাস করে নিতে থাকবে। পানির নিচে হারিয়ে যেতে থাকবে একটার পর একটা শহর-গ্রাম-গঞ্জ।

আবহাওয়া : সারা পৃথিবীর আবহাওয়াতেই এসেছে অদ্ভুত পরিবর্তন। তুন্দ্রা থেকে নিরক্ষীয় সব অঞ্চলেরই জলবায়ুর ধরন আমূল পালটে গেছে। আগে যেখানে বছরের বেশির ভাগ সময়ই বৃষ্টির দেখা মিলত না, সেখানে এখন মাঝেমধ্যেই তুমুল বৃষ্টি হয়। এমনকী সেই বৃষ্টিরও কোনো বাঁধাধরা সময় নেই। অর্থাৎ কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই পৃথিবীতে এখন আবহাওয়ার খেয়ালখুশির নৃত্য চলে। খরা, বন্যা, টর্নেডো ইত্যাদির আসা-যাওয়াও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

ফসল উৎপাদন : চাষবাসের ক্ষেত্রেও এখন খুবই গণ্ডগোল চলছে। উষ্ণতার হেরফেরে যখন-তখন বৃষ্টি চলে আসায় চাষিদের সব হিসেব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফসল উৎপাদন ঠিকমতো হচ্ছে না। কোথাও যেমন কমছে, কোথাও আবার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফসল হচ্ছে।

ঋতুচক্র : পবির্তন ঘটে যাচ্ছে পৃথিবী ঋতুচক্রে। শীতকালের চেয়ে এখন গরমকালের স্থায়ীত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আর এই বদলে যাওয়া পৃথিবীতে যেসব প্রাণী পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনের পুরনো অভ্যেসগুলো পালটাতে পারছে না তাদেরই জীবন সংশয় হচ্ছে।

রোগবালাই : এখন চারদিকে রোগের দাপট অনেক বেড়ে গেছে। কেননা তাপমাত্রা যত বাড়ে, ব্যাকটেরিয়া তত বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে তারা গুণিতক হারে বাড়তেও থাকে। তাই উষ্ণায়নের কারণে বিভিন্ন মারণ রোগের জীবাণুও চারপাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের ওপর গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর এটিই সরাসরি প্রভাব। সম্প্রতি বেশ কিছু নতুন রোগেরও প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় মশার সংখ্যা অনেক বেড়েছে, সঙ্গে মশাবাহিত রোগও। কেননা ইবোলা, হান্টা ভাইরাসের প্রকোপে যেসব রোগ হয়, সেগুলোর জন্য দায়ী কিন্তু প্রধানত উষ্ণতাই।

প্রাণীজগৎ : প্রকৃতির এই খামখেয়ালি আচরণের ফলে পশুপাখিরাও খুবই বিপদে পড়েছে। কিছু কিছু প্রজাতি তো ইতিমধ্যেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরও অনেকেই সেই মহাপ্রস্থানের পথেই হাঁটছে। প্রকৃতির এই দ্রুত পালটানো আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পেরে কিংবা বাসস্থানের সংকটে পড়ে তারা বিলুপ্ত। যারা বেঁচে আছে, তাদের জীবনচক্রেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। পরিযায়ী পাখিরা বছরের যে নির্দিষ্ট সময়ে উড়ে আসত, সেই সময়টা তারা এখন আর মোটেও পছন্দ করছে না। তাদের এতদিনের গন্তব্যও সরে গেছে অন্য কোথাও। মহাসমুদ্রের গভীরেও হচ্ছে পট পরিবর্তন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভাবীকালে সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বাড়ায় বহু প্রাণী বিলুপ্ত হলেও উষ্ণ পানিতে বসবাসকারী প্রাণীরা সংখ্যায় প্রচুর বেড়ে যাবে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার, সমুদ্রের তলায় বেশ কিছু জায়গায় মাইলের পর মাইল জুড়ে যে প্রবালপ্রাচীর রয়েছে, সেই প্রাচীর পানির বাসিন্দা বহু প্রাণীর পছন্দের আশ্রয়। সেই অপূর্ব সুন্দর রংবেরঙের ছটায় চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া প্রবাল প্রাচীর উষ্ণায়নের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। সমুদ্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আর হয়তো বেশিদিন লাগবে না, এই প্রবাল প্রাচীর চিরতরে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

এ রিয়াজ

 

- See more at: http://www.jugantor.com/oneday-everyday/2014/11/25/179205#sthash.aqo8Lx2w.BPgol9YP.dpuf

No comments:

Post a Comment