অপ্রিয় সত্য: ধর্মের কাজ করে বিনিময়ে অর্থগ্রহণ হারাম
................................................................
ধর্মের বিনিময় নেওয়ার চেয়ে বড় অন্যায় নেই। এটি ধর্মকে বিকৃত করে দুনিয়ায় শান্তির দরজা বন্ধ করে দেয় এবং মানুষের আখেরাতও ধ্বংস করে। ধর্মব্যবসায়ী আখেরাতে তার সমস্ত অনুসারীকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
.
তাই যা সত্য তা কারো কাছে অপ্রিয় হলেও বলতে হয়। অনেকের জীবিকা ধর্ম, তাদের জন্য এই সত্য শেলের মতো কষ্টকর হলেও সত্য না বলে পারব না। অন্যথায় আমরা আল্লাহ ও তার নবী-রসুলদের (আ.) কাছে দায়ী থাকবো।
.
অন্যান্য সকল নবীদের ন্যায় আল্লাহর শেষ রসুলও (দ.) তাঁর জাতির মধ্যে যেন ধর্মব্যবসায়ী পুরোহিত শ্রেণি গজিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য তিনি তাঁর আসহাবদেরকে বার বার সতর্ক করে গেছেন।
.
উবায়দা বিন সামেত (রা:) ছিলেন আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত এক সাহাবী। তাঁকে রসুলাল্লাহ কোনো এক গোত্রের লোকদেরকে কোর’আন শিক্ষা দিতে প্রেরণ করেছিলেন।
.
সেই গোত্রের এক ব্যক্তি উবায়দাকে (রা:) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার উদ্দেশ্যে একটি ধনুক ও তীর উপহার দিয়েছিলেন। উবায়দা (রা:) রসুলাল্লাহর দরবারে ফিরে এসে যখন সেই তীর ও ধনুক তাঁকে দেখালেন তখন রসুলাল্লাহ বললেন, “যদি তুমি আগুনের তীর গলায় জড়িত হওয়া পছন্দ করো তাহলে তুমি এটা গ্রহণ করো” (আবু দাউদ)।
.
খেয়াল করুন, উবায়দাহ (রা:)-কে কোর’আন শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে যে উপহারটি দেওয়া হয়েছিল সেটা কোনো অর্থকড়ি নয়, ব্যক্তি ব্যবহার্য কোনো বস্তুও নয়। সেটা হোচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে ব্যবহারের জন্য একটি অস্ত্র।
.
অথচ সেই অস্ত্রটি গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ হয়ে গেল! কেবল নিষিদ্ধই না, সেটা আখেরাতে আগুনের তীর হয়ে গ্রহণকারীর বুকে বিঁধবে এই কারণে যে, তিনি সেটা গ্রহণ করেছিলেন কোর’আন শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে। এমন ঘটনা আরও আছে।
.
রসুলাল্লাহর এই কথার পর দীনের জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে অর্থ উপার্জনের কোনো পথ খোলা রইল কি? তা সত্ত্বেও বর্তমানের বিকৃত ইসলামে পয়সা ছাড়া কিছুই হয় না, মুর্দা দাফনেও পয়সা দিতে হয়।
.
তালবে-এলেম থেকে শুরু করে পীরে কামেল, গাউস কুতুব, মুফতি, শায়খ, আল্লামাগণ পয়সা ব্যতীত কেউই ধর্ম-কর্ম করেন না। টাকা ছাড়া ধর্মের কল নড়ে না।
.
শুধু তাই নয়, তারা যে মানুষকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখতে চায় এবং ধর্মকে পুঁজি করে সম্পদের মালিক হতে চায় সেটাও আল্লাহও জানিয়ে দিয়েছেন সুস্পষ্টভাষায়।
.
তিনি বোলেছেন, “হে মো’মেনগণ! আলেম ও পীরদের (আহবার ও রোহবান) মধ্যে বহুসংখ্যক তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানবজাতিকে ফিরিয়ে রাখছে (সুরা তওবা ৩৪)।
.
যারা ধর্মের বিনিময় নিচ্ছেন তারা আসলে পূর্ব থেকে চলে আসা একটি ব্যবস্থারই অনুসরণ করছেন। তাদের মঙ্গলের জন্যই আমাদের এই সত্যপ্রকাশ। রাগান্বিত হবেন না। আপনারা ধর্মব্যবসা ছাড়ুন। হারামকে হালাল বানিয়ে নিজের আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না। আল্লাহ রাজ্জাক। তিনি আপনাদের হালাল রুজির বন্দোবস্ত অবশ্যই করে দেবেন।
যারা ধর্মের নামে অর্থ আদায় করছে, ধর্মের নামে সন্ত্রাস করছে তারা ধর্মব্যবসায়ী, তারা মুসলিম দাবিদার হলেও পথ ভুল। মুসলিম তো তারাই যারা তাদের জাতীয় ও সামষ্টিক জীবনে আল্লাহর হুকুম (তওহীদ ভিত্তিক সত্য জীবনব্যবস্থা) মেনে নেয় বা তসলিম করে নেয়। আর এই অর্থে ১৬০ কোটি মুসলমান নামধারী এই জাতি মুসলিম নয়, কেননা তারা পশ্চিমা সভ্যতার তৈরি বিধান, জীবনব্যবস্থা মেনে নিয়েছে। কেবল নামাজ রোযা করলে, দাড়ি টুপি লেবাস থাকলে, জন্মসূত্রে বা আরবী নাম থাকলেই মুসলিম হয় না। মুসলিম হতে হলে ইসলামকে জীবনবিধান হিসাবে মানতে হয়।
আপনিই বলুন, যেখানে পুরো জাতিই মুসলিম নয়, সেখানে দুই চার জন্য ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে কীভাবে মুসলিম হতে পারে?
.
আমরা এই আধমরা ঘুমন্ত জাতিকে সত্যের চাবুক দ্বারা এমন এক শক্ত আঘাত দিতে চাই যেন তাদের কালঘুম ভাঙ্গে। তারা আবার উঠে দাড়ায়, তাদের লক্ষ্য ফিরে পায়।
.
অনেকে বলেন, যারা আন্দোলন করছে বা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে তারা তো ইসলামের জন্য করছে। সুতরাং তারা তো মুজাহিদ বা মোমেন। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট দ্বিমত রয়েছে। সেটা হচ্ছে- এই যে বিশ্বের অনেকগুলো দেশে যুদ্ধ চলছে বিভিন্ন ইসলামী দলের নামে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ইসলামের যুদ্ধ নয়। সেগুলো যুদ্ধবাজ সাম্রাজ্যবাদীদের জমিদখলের ষড়যন্ত্র।
.
এখানে মুসলিম বংশোদ্ভূত জঙ্গিরা বলির পাঠা। তাদের ঈমান, শক্তি, জীবন, সংখ্যার অপচয় হচ্ছে এবং তাদের কারণে ইসলাম ধর্মের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। লাখে লাখে সাধারণ মানুষ মরছে, কোটি কোটি উদ্বাস্তু হচ্ছে, নিজেদের সম্পদ, দেশ ধ্বংস নারীরা ধর্ষিতা হচ্ছে। কাজেই জঙ্গি বা ইসলামে নামে যারা রাজনীতি করছেন তাদের হাজার হাজার কর্মীর উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হলেও পথ ভুল হওয়ার কারণে তাদের সকল প্রচেষ্টা, কোরবানী ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য আমরা ব্যথিত হই।
.
আমরা চাই তাদের এই কোরবানী, ত্যাগ যেন মানবতার উপকারে আসে, আল্লাহ রসুলের সন্তুষ্টি তারা লাভ করতে পারেন। এজন্য আমাদের কাছে সঠিক পথটি আছে। সেটা আমরা তুলে ধরছি। কিন্তু জ্ঞানের অহঙ্কার তাদের অনেককেই আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
No comments:
Post a Comment