এবার খলিফা'র আদেশে কাবা ধ্বংসের হুমকি দিল আইএসআইএল : সীমান্তে সৌদি সেনা মোতায়েন
পাশ্চাত্যের মদতপুষ্ট আল কায়দার নতুন সংস্করণ আইএসআইএলের এক নেতা মানব-ইতিহাসের প্রথম ইবাদত-ঘর তথা বিশ্বের মুসলমানদের কিবলা ও ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবাঘর ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে।
আবু তুরাব মুকাদ্দেসি নামের এই নেতা ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজস্ব পেজে এই হুমকি দিয়েছে।
তাকফিরি-ওয়াহাবি এই নেতার হুমকি প্রত্যাখ্যান করে আইএসআইএল এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ওই নেতা লিখেছে : জনগণ কাবাঘরের পাথরগুলো ছোয়ার জন্যই মক্কায় যায়। আল্লাহর জন্য সেখানে যায় না। এরা আসলে পাথরের দাস। আল্লাহর দাস বা বান্দাহ নয়; আর তাই জর্দানের পর আমরা যখন সৌদি আরবে হামলা চালাব তখন কাবাঘর ধ্বংস করে দেব।
মুকাদ্দেসি আরও লিখেছে : 'আইএসআইএলের নেতা (স্বঘোষিত খলিফা) আবুবকর আল বাগদাদিই কাবাঘরে হামলা করার ও তা ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন।' কাবার ক্ষতি (কথিত পাথর পূজার ফলে?) তার লাভের চেয়ে বেশি বলে সে মন্তব্য করে।
আইএসআইএলের এই হুমকির পর সৌদি রাজা আবদুল্লাহ তার দেশে সতর্কাবস্থা জারি করেছেন বলে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে। রাজা নাকি এও বলেছেন যে, সৌদি আরবের ক্ষতি করার সুযোগ কাউকেই দেয়া হবে না।
এদিকে শুক্রবার কিছুক্ষণ আগে জুমার নামাজের খোতবায় ইরানের বিশিষ্ট আলেম আয়াতুল্লাহ মুহাম্মাদ আলী মুওয়াহহিদি কিরমানি বলেছেন, ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ থেকে জনগণের দৃষ্টিকে আড়াল করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএসআইএল এবং ইসরাইলবিরোধী শক্তিগুলোকে টার্গেট করাও এই গ্রুপের আরেকটি বড় লক্ষ্য।
তিনি আইএসআইএলের আবু তুরাব মুকাদ্দেসি নামের এক নেতার হুমকির কথাও তুলে ধরে জানান যে, ওই সন্ত্রাসী বলেছে, তারা পবিত্র মক্কা দখলে নিয়ে কাবাঘর ধ্বংস করে দেবে, কারণ, এই ঘরে মুসলমানরা পাথরের পূজা বা ইবাদত করে! আর এই হুমকির পরই তাদেরই মদতদাতা সৌদি সরকার ইরাক সীমান্তে ত্রিশ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।
যুগ যুগ ধরে মুসলমানরা কাবাঘরকে মহান 'আল্লাহর ঘর' বলে অভিহিত করে আসছেন এবং এই ঘর যেন পৃথিবীতে আল্লাহর উপস্থিতির প্রতীক। মুসলমানরা এই ঘরের দেয়াল ও ঘরের এক কোণে রক্ষিত একটি ঐতিহাসিক কালো পাথরে চুমো দিয়ে থাকে। নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত কাবাঘরের চারদিকে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করে মুসলমানরা হজ ও ওমরাহ পালন করে থাকেন। এই ঘরকে নিশানা করেই মুসলমানরা নামাজ আদায় করে থাকেন।
ইসলামের নামে জিহাদ করার কথা বলে আইএসআইল ইরাক ও সিরিয়ায় শিশু ও নারীসহ হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং তেলক্ষেত্র, জাদুঘর ও ব্যাংক দখল করে কোটি কোটি ডলারের সম্পদকে গণিমত হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা কুমারী মেয়েদের জোর করে কথিত বিয়ে করার ঘণ্টাখানেক পর তালাক দিচ্ছে এবং আবার সঙ্গে সঙ্গে ওই মেয়েদের সঙ্গে অন্যের মাধ্যমে একই কাজ করিয়ে একে বলছে জিহাদুন নিকাহ বা বিয়ের জিহাদ তথা যৌন জিহাদ।
এদিকে ইরানের বিশিষ্ট আলেম ও তেহরানের জুমা নামাজের অস্থায়ী খতিব আয়াতুল্লাহ মুহাম্মাদ আলী মুওয়াহহিদি কিরমানি বলেছেন, ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ থেকে জনগণের দৃষ্টিকে আড়াল করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএসআইএল এবং ইসরাইলবিরোধী শক্তিগুলোকে টার্গেট করাও এই গ্রুপের আরেকটি বড় লক্ষ্য।
তিনি আজ তেহরানের জুমা নামাজের খোতবায় এইসব মন্তব্য করেছেন।
আয়াতুল্লাহ কিরমানি মুসলিম দেশগুলোতে আইএসআইএল-এর সন্ত্রাসী অপরাধযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানান ও গ্রুপটিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অনুচর ও বিশ্বের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আইএসআইএল-এর আবু তুরাব মুকাদ্দেসি নামের এক নেতার হুমকির কথাও তুলে ধরে জানান যে, ওই সন্ত্রাসী বলেছে, তারা পবিত্র মক্কা দখলে নিয়ে কাবাঘর ধ্বংস করে দেবে। কারণ, এই ঘরে মুসলমানরা পাথরের পূজা বা ইবাদত করে!-আর এই হুমকির পরই তাদেরই মদতদাতা সৌদি সরকার ইরাক সীমান্তে ত্রিশ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।
আয়াতুল্লাহ কিরমানি বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদীরা ভাবছে আইএসআইএল-এর মতো সন্ত্রাসী গ্রুপ লেলিয়ে দিয়ে ইসলাম ও ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাবকে রুখতে পারবে, কিন্তু তাদের এই দুরাশা পূরণ হয়নি।
তিনি বলেছেন, আধিপত্যকামী শক্তিগুলো সব উপায়-উপকরণ নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে; আজকাল ইরাকে যা ঘটছে তা শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব নয় বরং মানুষকে হত্যা ও মানুষকে সহায়তার মধ্যে দ্বন্দ্ব।
আয়াতুল্লাহ কিরমানি আইএসআইএল-এর সন্ত্রাসীদেরকে নানা অঞ্চলে বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে ইরাকি জনগণের সহায়তাপুষ্ট সরকারি সেনাদের সাম্প্রতিক নানা সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেছেন, এইসব সাফল্যের পেছনে ইরাকের ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়ার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব।
আয়াতুল্লাহ কিরমানি আইএসআইএল-এর অমানবিক পদক্ষেপগুলোর নিন্দা জানাতে ও তাদের হাত থেকে ইরাকি জনগণকে উদ্ধার করার কার্যকর উপায় বের করতে জাতিসংঘ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ও আরব লীগসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ও ইহুদিবাদী ইসরাইল ইসলামকে একটি হিংস্র ধর্ম হিসেবে তুলে ধরার জন্য মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত করেছে ; কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার যে চেষ্টা তারা করছে তা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তাসহ সবগুলো ধর্মের জন্যই হুমকি।
আয়াতুল্লাহ কিরমানি ইসলামের শত্রুদের সৃষ্ট বিভেদকামী গ্রুপগুলোর মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে বিশ্বের সব দেশের সব মাজহাবের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ইসলামের শত্রু পাশ্চাত্য এইসব সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করে একদিকে মুসলিম বিশ্বের অস্ত্রসহ নানা পণ্যের বাজার গড়ে তুলছে এবং অন্যদিকে তাদের তেল-সম্পদ শোষণ করছে।
মুসলিম বিশ্বে প্রতিরোধ ও শাহাদতের সংস্কৃতি থাকায় ইসলাম-বিদ্বেষী সাম্রাজ্যবাদীদের সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেছে বলে আয়াতুল্লাহ কিরমানি মন্তব্য করেন। রয়টার্স, ইরনা
No comments:
Post a Comment