DESHERPATRO

Thursday, April 16, 2015

বর্ণনা করেছেন  ইমাম মাহাদির আগমনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দুনিয়াতে আসার পূর্বের ও ওই সময়কার ভিবিন্ন প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে বর্ণনা করেন যা আজ এখানে  আলোচনা করা হবে 

বর্ণনা করেছেন  ইমাম মাহাদির আগমনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দুনিয়াতে আসার পূর্বের ও ওই সময়কার ভিবিন্ন প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে বর্ণনা করেন যা আজ এখানে  আলোচনা করা হবে 

###প্রেখাপট #####:                                                                                                                                                                          

ইসলাম অপরিচিত/পর হয়ে যাবে: 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

“ইসলাম অপরিচিত অবস্থা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল। অদূর ভবিষ্যতে সে সূচনাকালের মতোই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সে দুটি মসজিদের মাঝে গুটিয়ে যাবে, যেমনটি সাপ তার গর্তে গিয়ে গুটিয়ে যায়”। (সহিহ মুসলিম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩১)

 

হাদিসে উল্লেখিত ‘গারীব’ শব্দটির অর্থ অচেনা, অজানা, অপরিচিত, পর। শুরুর যুগে ইসলাম মানুষের কাছে অপরিচিত ধর্ম ছিল। মানুষ বলত, এ আবার কোন ধর্ম, যার কথা জীবনে কোনদিন শুনিনি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে একসময় ইসলাম ঐ সূচনাকালের মতোই অচেনা হয়ে যাবে এবং সাপ যেমন গর্তে গিয়ে গুটিয়ে যায়, ইসলামও তেমন দুই মসজিদের মধ্যখানে গুটিয়ে যাবে।

 

সেই যুগটি এসে পড়েছে। আমাদের এই যুগের অধিকাংশ মুসলমানের কাছে ইসলাম একটি অচেনা ও অপরিচিত ধর্মমত। মুসলমান ইসলাম জানে না, ইসলাম বোঝে না। ইসলামের পরিচয় কি? আপনি কি করে মুসলমান হলেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ বেশিরভাগ মুসলমান। অধিকাংশ মুসলমান ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে অনবিহিত। ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, ইসলামে যে সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতিও আছে, এসব কল্পনায়ও নেই অধিকাংশ মুসলমানের। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগগুলোর সঙ্গে তাদের আচরণ এমন যে, তারা জানেই না, এসব বিধিবিধানের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক আছে, যেমন আছে নামাজ রোজার সঙ্গে। কাজেই নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেড়শো+  কোটি মানুষের ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম আজ একটি অপরিচিত জীবনবিধান, যেমনটি অপরিচিত ছিল সূচনালগ্নে। 

 

ইমাম মেহেদি (আঃ) এর আগমন পূর্ব এই আলামতটি এখন অত্যন্ত পরিষ্কার। 

 

@@@@@@@@@@@

খুন খারাবীর বন্যা বইবে :                                                                                                                                                                      

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কসম খেয়ে বলেছেনঃ

 

“ততক্ষন পর্যন্ত কিয়ামত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এমন দিনের মুখোমুখি না হবে যে, হত্যাকারী নিজেও জানবে না সে কেন হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হল”।

 

জনৈক ব্যক্তি আরয করল, ‘এমনটি কেন হবে?’

 

ইরশাদ করলেন, “ফেতনার কারনে হত্যা,খুন ব্যাপকতা লাভ করবে”। অতঃপর বলেন, “হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামে যাবে”। (মুসলিম শরীফ)

 

হত্যাকারী জাহান্নামী হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, সে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু নিহত ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে কেন সে কথা বিধৃত হয়েছে অন্য একটি হাদিসে। আর তা হল, 

 

“নিহত ব্যক্তিও তো হত্যা করার চেষ্টায় ছিল। (কিন্তু সে পারেনি) তাই সেও জাহান্নামী”। (বুখারি শরীফ)

 

ফেতনার ভয়ঙ্কর রূপ এখন সর্বত্রব্যাপী। হত্যা ও জঘন্যতাও সর্বত্রব্যাপী। জাতীয় বিরোধ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দলাদলির কারণে অগণিত মানুষ খুন হচ্ছে নিয়মিত। অজ্ঞাতনামা লাশের কারণে এমন কি কে হত্যাকারী আর কে নিহত তাও অনেক সময় জানা যায় না।  একজন লোক খুন হবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে আমার দলের নয়। 

 

ইমাম মেহেদি (আঃ) এর আগমন পূর্ব এই আলামতটি এখন অত্যন্ত পরিষ্কার।.

 

@@@@ @@@@@@@@@@@@@                                                                                                                                                          

মুসলমানগণ মালদার হবে তবে দ্বীনদার হবে না :                                                                                                                                                           হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। হটাৎ করেই উদিত হলেন মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)। তাঁর গায়ে তখন চামড়ার তালিযুক্ত একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল। তার এই হতদরিদ্র অবস্থা দেখে এবং তাঁর ইসলামপূর্ব সময়ের কথা স্মরণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে শুরু করলেন। কারণ, ইতিপূর্বে হযরত মুসআব (রাঃ) আলালের ঘরের দুলাল হবার সুবাদে সর্বদাই মখমলের কোমল মূল্যবান পোশাক পরিধান করতেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ

“হে মুসলমানগণ! সেদিন তোমাদের কি অবস্থা হবে যখন সকালে তোমরা এক পোশাক পরিধান করবে আর বিকালে পরিধান করবে অন্য পোশাক। খাদ্যের এক পাত্র সরাতে না সরাতেই দ্বিতীয় পাত্র উপস্থিত করা হবে। তোমরা তোমাদের ঘরে এমনভাবে পর্দা ঝুলাবে যেভাবে কা’বা ঘরকে গিলাফ আবৃত করা হয়”।

 

সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আরজ করলেন, “হে রাসুল (সাঃ)! সেদিন তো আমরা আজকের চাইতে অনেক ভালো থাকবো। ইবাদত করার প্রচুর সুযোগ পাব। জীবিকার জন্য মেহনত করতে হবে না”।

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ 

“না। বরং সেদিনের তুলনায় এখনই তোমরা ভালো আছো। কারণ, এখন সম্পদের অভাব থাকলেও ঈমানের প্রাচুর্য আছে আর তখন সম্পদের প্রাচুর্য হবে তবে দৈন্যদশা হবে ঈমান আমলের”। (তিরমিজি শরীফ)

 

বাস্তব সত্য হল, আজ আল্লাহ তা’আলা অনেক মুসলমানকেই বিপুল সম্পদ দান করেছেন। এত সম্পদ দিয়েছেন, যদি আজীবন কামাই রোজগার নাও করে, দ্বীনিকর্ম ও ইবাদত-বন্দেগীতে ডুবে থাকে – তবুও অভাব হবে না। সাহাবায়ে কেরামের ভাষ্যমতে তারা চাইলে এখন সর্বদাই এবাদত-বন্দেগীতে ডুবে থাকতে পারে। অথচ তারা আজ মরণের পর যে একটা জীবন আছে সেটা যেন ভুলেই গেছে। তাদের চিন্তা ও জীবন জুড়ে কেবল ভালো খাবার, ভালো পোশাক ও ভালো গারি-বাড়ির নেশা! স্কুলের ড্রেস ভিন্ন, বেড়ানোর পোশাক ভিন্ন, ঘুমাবার পোশাক আলাদা! পোশাক আর খাদ্যের সে কি বিশাল ফিরিস্তি। সর্বক্ষণ ডুবে আছে এই একই নেশায়।

এসব ব্যস্ততার কারণে আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হওয়া তো দূরের কথা সেই ভাবনাও নেই। এই জন্যেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ““না। বরং সেদিনের তুলনায় এখনই তোমরা ভালো আছো”।

 

বুখারি ও মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

“আল্লাহর কসম! তোমরা দরিদ্র হয়ে পড়বে সেটাকে আমি ভয় করি না। আমি ভয় করি এটাকে যে, তোমাদেরকে বিপুল পরিমানে বিত্ত বৈভব দেওয়া হবে – যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেওয়া হয়েছিল। তারপর তারা যেভাবে দুনিয়ার ফাদে পড়েছিল তোমরাও তেমনি দুনিয়ার ফাঁদে আটকা পড়বে। অতঃপর দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব তাদেরকে যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনি ধ্বংস করে ছাড়বে”। 

 

তাজ্জবের বিষয় হল, আজকাল দরিদ্ররাও দ্বীন থেকে ততটাই দূরে অবস্থান করে যতটা দূরে বিত্তবানরা অবস্থিত। বরং দ্বীনের ব্যাপারে আরও অসহায় নিঃস্ব। এর বড় কারণ হল আজ কোথাও দ্বীনের পরিবেশ নেই। ধনী-গরীব সকলের ঘরেই এখন বদদ্বীন বিরাজ করছে। 

 

আল্লাহ হেফাজত করুন।

@@@@@                                                                                                                                                                

ফেতনায় জড়িয়ে পড়ার আলামত:                                                                                                                                                                  

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেছেন, 

“ফেতনা মানুষের অন্তরসমূহের উপর আক্রমণ চালায়। তো যে অন্তর তাকে অপছন্দ করে, তাঁর মাঝে একটি সাদা দাগ পড়ে যায়। পক্ষান্তরে যে অন্তর তাতে ডুবে যায়, তাঁর মাঝে একটি কালো দাগ পড়ে”। (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৭)

 

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেছেন,

“কেউ যদি জানতে ইচ্ছা করে যে, ফেতনা তাকে গ্রাস করছে কিনা, তাহলে তা বুঝবার উপায় আছে। সে লক্ষ্য করবে, ইতিপূর্বে যে বিষয়কে সে হারাম জানত, এখন তাকে হালাল ভাবতে শুরু করেছে কিনা। যদি এমনটি হয়, তাহলে ধরে নেবে, ফেতনা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। কিংবা যদি এমন হয় যে, ইতিপূর্বে একটি বিষয়কে হালাল জানত, এখন তাকে হারাম ভাবতে শুরু করেছে, তাহলেও বুঝবে, ফেতনা তাকে গ্রাস করেছে”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১৫)

 

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) ফেতনায় জড়িত হওয়া না হওয়ার লক্ষন শিখিয়ে দিয়েছেন যে, হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম ভাবতে শুরু করা ফেতনায় জড়িয়ে পড়ার আলামত। ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকা এবং আত্মসংশোধনের এটি একটি উত্তম ব্যবস্থাপত্র। 

 

যদি এমন হয় যে, আপনি ইতিপূর্বে সুদকে হারামই ভাবতেন এবং তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন, কিন্তু সুদ এখন আপনার কাছে গা-সহা মনে হচ্ছে এবং তাতে জড়িয়েও পড়ছেন, তাহলে আপনাকে নিশ্চিত ধরে নিতে হবে, সময়ের ফেতনা আপনাকে গ্রাস করে ফেলেছে, আর সেজন্যই আপনার মাঝে এই পরিবর্তন।  

 

এক সময় আপনি পর্দার ব্যাপারে কঠোর ছিলেন, কিন্তু এখন কেমন যেন বেপর্দাকে দোষ বলে মনে হচ্ছে না। এমনটি হলে ধরে নিতে হবে, ফেতনা আপনাকে গ্রাস করে ফেলেছে। আপনি ফেতনায় জড়িয়ে পড়েছেন। 

 

আল্লাহ আমাদেরকে ফেতনা থেকে দূরে রাখুন আর যে সকল ফেতনায় জড়িয়ে পড়েছি, তা থেকে যথা শীঘ্রই মুক্ত করুন।   .                                                                          

 

>> @@@@@@@@@@@@@ @@@                                                                                                                                                                        কুরআনকে জীবিকার উপায় হিসাবে গ্রহণ করবে:                                                                                                                                                             প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, একবার আমরা কুরআনে কারীম পাঠ করছিলাম। মজলিসে শহুরে আরবদের ছাড়াও গ্রাম্য আরব বাসিন্দা এবং কিছু অনারব লোকও ছিল। এমন সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ আনেন। তিনি ইরশাদ করেনঃ “তিলওয়াত করতে থাক। শীঘ্রই এমন একটা কাল আসবে যখন মানুষ কুরআনকে তীরের মত সোজা করবে (অর্থাৎ অক্ষরগুলো আদায়ে যারপরনাই গুরুত্ব দেবে)। অথচ কুরআন তিলওয়াত দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হবে দুনিয়া হাসিল করা। তারা কুরআন তিলওয়াত দ্বারা নিজেদের আখিরাত সাজাবার কথা ভাববে না”। (বাইহাকী শরীফ)

 

অন্য একটি হাদিসে আছে, হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “আবার খুব দ্রুত এমন একটা কাল আসবে যখন মানুষ পবিত্র কুরআনকে গান এবং বিলাপের ভঙ্গিতে পাঠ করবে। অথচ তাদের তিলওয়াত তাদের কণ্ঠনালীর উপরে যাবে না (অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না)। এই তিলওয়াতকারী এবং তার শ্রোতাদের অন্তর ফেতনায় নিপাতিত হবে”। (মিশকাত শরীফ) 

@@@@@@@@@@@@

 পূর্ববর্তী জাতিসমূহের রীতি নীতি অবলম্বন করা : 

 

হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “নিঃসন্দেহে তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের রীতির অনুসরণ করবে – এক বিঘতের বিপরীতে এক বিঘত, এক হাতের বিপরীতে এক হাত ( অর্থাৎ হুবহু)। এমনকি তারা যদি কোন গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরা তারও অনুসরণ করবে”। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি ইহুদি খ্রিষ্টানদের কথা বলছেন? উত্তরে তিনি বললেন, “আর কারা?” 

 

(সহীহ বুখারী খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১২৭৪; সহীহ মুসলিম খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২০৫৪; সহীহ ইবনে হিব্বান খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৯৫)

 

পূর্ববর্তী উম্মত, তথা ইহুদি খ্রিষ্টান যেসব ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল, বর্তমান যুগের মুসলমানরাও সেসব ব্যাধিতে আক্রান্ত। যেমনঃ:

 

>আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে মানব রচিত সংবিধান (বেশির ভাগই পশ্চিমাদের আদলে রচিত)>পোশাক পরিচ্ছদ, সামাজিক রীতি, ফ্যাশন >ব্যাভিচার>বিবাহপূর্ব সম্পর্ক (গার্ল ফ্রেণ্ড বয় ফ্রেন্ড রীতি) >মদপান >জুয়া>বেঈমানি >অন্যায় হত্যা >আল্লাহর কিতাবের বিকৃতি সাধন >নবীর আদর্শ ও শিক্ষায় মনগড়া সংযোজন-বিয়োজন >দীনের সেই বিষয়গুলোর উপর হামলা করা >নিজের কাছে যে জিনিস ভালো লাগে তা মানা আর যেগুলো কষ্টকর বলে মনে হয় তা পরিত্যাগ করা >এতিম বিধবাদের সম্পদ ভোগ করা ইত্যাদি।

আজ বিশ্বব্যাপী আমরা এই চিত্র প্রত্যক্ষ করছি। কুরআন শুনিয়ে আল্লাহর ঘর মসজিদে পয়সা চাওয়া হচ্ছে। মৃতের দু’আ অনুষ্ঠানে কুরআন খতম করিয়ে মানুষ নাম ফুটাচ্ছে। তারাবীহ নামাজে কুরআন শুনিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিলাওয়াতের সময় মাখরাজ উচ্চারণ ও শিল্পভঙ্গির প্রতি পূর্ণ বরং অতিরিক্ত মাত্রায় লক্ষ্য রাখা হচ্ছে অথচ তার মর্ম বুঝা কিংবা তার উপর আমল করার প্রতি বিন্দুমাত্র লক্ষ্য নেই। এই দৃশ্য বড়ই বেদনাদায়ক।.                                                                                                                                          

 

 

খোরাসানঃ ইমাম মাহদির হাতে বাইয়াত ও যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও সেখানে দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম>>>>>>>

 @@@@@  মূলত রাসুল (সাঃ) এর যুগে বৃহত্তর খোরাসান বলতে এর সীমানা নিম্ন লিখিত ভূখণ্ডের সমষ্টিকে বুঝায়, যার মূল কেন্দ্র হচ্ছে বর্তমান আফগানিস্তান। বিস্তৃতি নিম্নরূপঃ     

“উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান (হেরাত, বালখ, কাবুল, গাজনি, কান্দাহার দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর ও দক্ষিন-পূর্ব উজবেকিস্তান (সামারকান্দ, বুখারা, সেহরিসাবজ, আমু নদী ও সীর নদীর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর-পূর্ব ইরান (নিশাপুর, তুশ, মাসহাদ, গুরগান, দামাঘান দিয়ে বিস্তৃত), দক্ষিন তুর্কমেনিস্তান (মেরি প্রদেশ – মার্ভ, সানজান), দক্ষিন কাজিকিস্তান, উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তান (মালাকান্দ, সোয়াত, দীর ও চিত্রাল), উত্তর পশ্চিম তাজিকিস্তান (সুগ্ধ প্রদেশের খোজান্দ, পাঞ্জাকেন্ত দিয়ে বিস্তৃত)”।

 

আসুন, প্রথমে আমরা খোরাসান ও সেখান থেকে বাহিনী বের হওয়া, ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা এবং সেই খোরাসানী বাহিনীর গন্তব্য সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।

 

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

“পূর্বদিক (খোরাসান) থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে, যারা ইমাম মাহদির খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে”।

 

(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৩, হাদিস নং ২৮৯৬; সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ৩, হাদিস নং ৪০৮৮)

 

অপর বর্ণনায়, হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

“যখন তোমরা দেখবে, কালো পতাকাগুলো খোরাসানের দিক থেকে এসেছে, তখন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যেও। কেননা, তাদেরই মাঝে আল্লাহর খলীফা মাহদি থাকবে”।

 

(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৭৭; কানজুল উম্মাল, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৪৬; মিশকাত শরীফ, কেয়ামতের আলামত অধ্যায়)

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উনি বলতে ছিলেন,

 

“ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে (হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন)। তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা সত্যের (পূর্ণ ইসলামী শাসনের) দাবী জানাবে, কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুইবার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে, কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা (ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব) আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও – যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয়”।

 

(আবু আ’মর আদ দাইনিঃ ৫৪৭, মুহাক্কিক আবু আবদুল্লাহ সাফেঈ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)

 

হযরত হাসান (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিবারস্থ (আহলে বাইত) লোকদের উপর আশু বিপদাপদের বর্ণনা দিচ্ছিলেন,

 

“শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক পূর্বদিক থেকে কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে পাঠাবেন। যারা ঐ কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে সাহায্য করল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে সাহায্য করবেন। যে তাকে ছেড়ে দিল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে ছেড়ে দেবেন। তারপর ঐ কালো পতাকাবাহী দল এমন এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) এর কাছে আসবে – যার নাম আমার নামের মতো হবে। তারা ঐ ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) এর উপর শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব সোপর্দ করবে। সুতরাং, আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে সহযোগিতা করবেন”।

 

(আলফিতান, নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদঃ ৮৬০)

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। এ সময়ে বনু হাশিমের কয়েকজন যুবক এসে হাজির হল। তাদের দেখার পর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখদুটো লাল হয়ে গেল এবং চেহারার রং বদলে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, এই অবস্থা দেখে আমি বললাম, ‘আমরা আপনার চেহারায় অপ্রীতিকর কিছু দেখতে পাচ্ছি যে!’

 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

 

“আমরা আহলে বাইতের জন্য আল্লাহ দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতকে নির্বাচন করেছেন। আমার পরিবারের সদস্যরা আমার অবর্তমানে বিপদ, দেশান্তর ও অসহায়ত্বের শিকার হবে। এমনকি পূর্ব দিক থেকে এমন কিছু লোক আগমন করবে, যাদের পতাকা হবে কালো। তারা কল্যাণ (নেতৃত্ব) প্রার্থনা করবে; কিন্তু এরা (বনু হাশিম) দেবে না। অগত্যা তারা যুদ্ধ করবে ও জয়লাভ করবে। এবার তারা যা (নেতৃত্ব) প্রার্থনা করেছিল, (বনু হাশিম) তা প্রদান করবে। কিন্তু এবার তারা তা (নেতৃত্ব) গ্রহণ না করে আমার বংশের এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) কে তা (নেতৃত্ব) ফিরিয়ে দিবে। সেই ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) পৃথিবীটাকে ন্যায়নীতি দ্বারা এমনভাবে ভরে দিবে, যেমনটি পূর্বে তা অবিচারে পরিপূর্ণ ছিল। তোমাদের যে লোক সেই সময়টি পাবে, সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায় বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও”।

 

(সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৬)

 

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

“যখন কালো পতাকাগুলো পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে বের হবে, তখন কোন বস্তু তাদেরকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। এমনকি এই পতাকাকে ইলিয়ায় (বাইতুল মুকাদ্দাসে) উত্তোলন করা হবে (খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে)”।

 

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৯;মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৮৭৬০)

 

প্রতিহত করতে না পারলেও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা তৈরির ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। ইমাম জুহরি বলেছেন, আমার কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে,

 

“খোরাসান থেকে কালো পতাকা বের হবে। সেটি যখন খোরাসানের ঘাঁটি থেকে অবতরণ করবে, তখন ইসলামের খোঁজে অবতরণ করবে। কোন বস্তু তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না অনারবদের পতাকাগুলো ব্যতীত, যেগুলো পশ্চিম দিক থেকে আসবে”।

 

(কানাজুল উম্মাল, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ১৬২)

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

“পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে অবশ্যই কালো পতাকাবাহী দল আসবে। ঘোড়ার সিনা পর্যন্ত রক্তে ডুবন্ত থাকবে”।

 

(মাজমাউজ জাওয়াইদ)  

 

হযরত বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“আমার পরে অনেক বাহিনী আসবে। তোমরা অবশ্যই খোরাসানের বাহিনীকে যোগ দিবে”।

 

(ইবনে আদি)

 

ইমাম যুহরি বলেছেন,

 

“পূর্ব থেকে কালো পতাকা এগিয়ে আসবে, যাদের নেতৃত্ব দেবে এমন এক দল লোক, যারা হবে ঝুলপরিহিত খোরাসানি উস্ট্রীর মতো, লম্বা চুল ও দাঁড়ি বিশিষ্ট। তাদের বংশ হবে গ্রামীণ আর নাম হবে উপনাম। তারা দামেস্ক নগরীকে জয় করবে। তাদের থেকে তিন ঘণ্টার জন্য রহমত প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে”।

 

(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৬)

 

খোরাসান থেকে বের হওয়া এই কালো পতাকাবাহী এই বাহিনী ইমাম মেহেদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণের পূর্বে ইরাকের কুফা নগরীতে সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসকের (হাদিসের বর্ণনাগুলোতে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে এসেছে) মোকাবিলা করবে। 

 

আরতাত (রাঃ) বলেন,

 

“সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। তাদের (কুফাবাসীদের) মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানে একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে”।

 

(আল ফিতানঃ ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)

 

‘মানসুর’ সম্পর্কে হযরত হিলাল ইবনে আমর বর্ণনা করেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

“এক লোক মা-আরউন্নহর (নদীর ওপার) থেকে রওনা হবে, যার নাম হবে হারছ হাররাছ। তার বাহিনীর সম্মুখ অংশের সেনাপতির নাম হবে মানসুর, যে (খেলাফত বিষয়ে) মুহম্মদ বংশের জন্য পথ সুগম করবে বা শক্ত করবে, যেমনটি কুরাইশ আল্লাহর রাসুলকে ঠিকানা দান করেছিল। তার সাহায্য সহযোগিতা করা কিংবা তার ডাকে সাড়া দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে”।

 

(সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ৪২৯০)

 

আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ।

 

মুহম্মদ বিন হানাফিয়্যা (রহঃ) বলেন,

 

“বনু আব্বাস থেকে পতাকাবাহী দল বের হবে। অতঃপর খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী অন্য আরেকটি দল আত্মপ্রকাশ করবে। তাদের পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের হবে এবং জামা সাদা বর্ণের হবে। কালো পতাকাবাহী দল সুফিয়ানি (সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসক) এর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেবে। শেষ পর্যন্ত তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে এসে উপস্থিত হবে এবং তাদের নেতৃত্ব ইমাম মাহদির হাতে সোপর্দ করে দেবে। তাদের কাছে সিরিয়া থেকে তিনশত লোক আসবে। এদের(খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী) বের হওয়া এবং মাহদির হাতে নেতৃত্ব সোপর্দ করার মাঝে ৭২ মাসের (৬ বছরের) ব্যবধান থাকবে”।

 

(কিতাব আল ফিতানঃ ৮৫১, দুর্বল হাদিস)

 

হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

“তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি”।

 

বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন,

 

“তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি”।

 

(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, 

 

“কালো পতাকা পূর্ব দিক থেকে আর হলুদ পতাকা পশ্চিম দিক থেকে আগমন করবে। সিরিয়ার কেন্দ্রভূমি তথা দামেস্কে উভয় পক্ষের মোকাবিলা হবে”। 

 

(আল ফিতান, নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ) 

 

উমর বিন মুররাহ আল জামালী (রাঃ) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

 

“নিশ্চই খোরাসান থেকে একদল কালো পতাকাবাহী লোকের আবির্ভাব ঘটবে এবং তাঁদের একদল তাঁদেরঘোড়াগুলো দড়ির সাহায্যে বাইতাল লাহ্যিয়া (গাজা, ফিলিস্তিন) এবং হারাস্তার (দামেস্ক, সিরিয়া) মধ্যবর্তীস্থানে জাইতুন গাছের সাথে বাধবে”।

 আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সেখানে কি কোন জাইতুন গাছ আছে’?

 তিনি বলেন,

“যদি সেখানে জাইতুন গাছ নাও থাকে তাহলে শীঘ্রই সেখানে জাইতুন গাছ জন্মাবে এবং খোরাসান থেকে কালোপতাকাবাহী দল বের হয়ে আসবে এবং তারা তাঁদের ঘোড়াগুলো এইসব জাইতুন গাছের সঙ্গে বাঁধবে”।

 

(কিতাব আল ফিতানঃ ৮৬১, পৃষ্ঠা ২১৫, দুর্বল হাদিস)

 

উপরের সবগুলো হাদিস সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করলে যেটা প্রতীয়মান হয়, তা হলঃ

খোরাসানের থেকে যে বাহিনীটি বের হবে তাদের হাতে কালো পতাকা থাকবে।তাদের পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের হবে এবং জামা সাদা বর্ণের হবে।তাদের পোশাক ঢিলে ঢালা হবে, চুল ওয়ালা হবে, তাদের বংশ গ্রামীন হবে।আসল নামের পরিবর্তে তারা উপনামে পরিচিত হবে।যদিও তাদের কেউ প্রতিহত করতে পারবে না, কিন্তু  প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে পশ্চিমা শক্তি।তারা এ সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে ঠিকই খোরাসান থেকে বের হয়ে ইরাকের দিকে এগুবে।এরপর তাদের (কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের দলের) কোন এক নেতা যার নাম হবে ‘মানসুর’, সে ইমাম মাহদিকে সহায়তা করবে। মানুষদেরকে তার দিকে ডাকবে।এক পর্যায়ে এই কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের সঙ্গে ইমাম মাহদি (যদিও তখনও তার আত্মপ্রকাশ ঘটেনি, শুধু কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের দলে মিশে আছেন) নিয়েই মক্কাতে পৌছবে।সেখানে কোন এক খলীফার তিনপুত্রের দ্বন্দের প্রেক্ষিতে যখন হজ্জ মৌসুমে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এবং তার সাথে উপস্থিত থেকে এই খোরাসানের কালো পতাকাবাহীরাই প্রথম বাইয়াতের সৌভাগ্য অর্জন করবে। (পরবর্তীতে ঘটনার পরিক্রমায় সিরিয়ার ‘আবদাল’ বা শ্রেষ্ঠ  মুসলমানগণ ও ইরাকের‘আসাইব’ বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত হবে)।এরপর এই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী বাহিনীসহ ইরাকে গমন করে সে অঞ্চলকে মুক্ত করবেন।  পরে তিনি সিরিয়ার অভিমুখে যাত্রা করে বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসক এর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেবে। (যা হাদিসে ‘কালবের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত)।যেহেতু এই বাহিনী ইমাম মাহদির নেতৃত্বাধীন থাকবে, হাদিসে বর্ণিত সকল যুদ্ধেই এই কালো পতাকাবাহী খোরাসানি বাহিনীর সকল যোদ্ধা ইরাক, বৃহত্তর সিরিয়া (সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, প্যালেস্টাইন, বাইতুল মাকদিস বা জেরুজালেম) তে কাল্বের যুদ্ধ, পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের (পশ্চিমা খ্রিস্টানদের) সাথে মহাযুদ্ধ থেকে শুরু করে ইস্তাম্বুল বিজয় পর্যন্ত সব যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে। কারণ, তারা ইমাম মাহদির খেলাফত প্রতিষ্ঠাকে সহজ করে দিবেন। এবং সর্বশেষে সকল বিজয়ের পর যখন জেরুজালেমে খেলাফত প্রতিষ্ঠা হবে, তখন তারা সেখানে এই কালো পতাকা উড়িয়ে তাদের ঘোড়াগুলোকে জাইতুন গাছের সাথে বেধে তারা ক্ষান্ত হবে।

 

যেহেতু খোরাসানের এই বাহিনী ইমাম মাহদির সঙ্গী হবে তাতে বুঝা যায় যে, এটি শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, খোরাসান থেকে যে বাহিনীই কালো পতাকা নিয়ে বের হোক না কেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না।

 

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

“নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) । তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”।

(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)

 

আর তাছাড়া অপর হাদিসে, হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) এবং মু’আজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

“ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাদের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাদের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম (সিল্ক), ব্যভিচার (পরকীয়ার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডের নামে চলমান বহুল প্রচলিত সামাজিকভাবে স্বীকৃত উঠতি বয়সী অবিবাহিতদের জেনা) এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে”।

(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি, ৫/১৬)

চলবে 

No comments:

Post a Comment