উম্মতে মোহাম্মদী কাকে বলে?
মাননীয় এমামুয্যামান
জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর
লেখা থেকে-
আল্লাহ আদম(আঃ)থেকে শুরু কোরে তার প্রত্যেক নবী-রসুল (আঃ) কে পাঠিয়েছেন একটি মাত্র উদ্দেশ্য দিয়ে তাহোল যার যার জাতির
মধ্যে আল্লাহর তওহীদ ও তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থা দীন
প্রতিষ্ঠা করা। শেষ নবী রসুলে কারীম (দ:) কে পাঠালেন সমস্ত মানব
জাতির ওপর এই দীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তাই নবী (দ:) এমন একটি জাতি সৃষ্টি কোরলেন, পৃথিবী থেকে তার চোলে যাওয়ার পরও যে জাতি তাঁর ওপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য তারই মত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
এই জাতি হোল তার উম্মাহ-উম্মতে মোহাম্মদী-
মোহাম্মদের (দ:) জাতি।
বিশ্বনবী (দ:) তার উম্মাহকে পরিষ্কার কোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন
যে, তার চোলে যাবার পর তিনি যেমন কোরে সংগ্রাম কোরে সমস্ত
আরবে দীন প্রতিষ্ঠা কোরলেন, ঠিক তেমনি কোরে বাকি দুনিয়ায় ঐ
দীন প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে।
এটাকে নবীজী (দ:) বোললেন “আমার প্রকৃত সুন্নাহ”, অর্থাৎ
আমি সারা জীবন যা কোরে গেলাম, এবং এও বোললেন যে, যে আমার
এই সুন্নাহ ত্যাগ কোরবে সে বা তারা আমার কেউ নয়; অর্থাৎ আমার
উম্মত নয়। তারা উম্মতে মোহাম্মদীর দাবি কোরতে পারে না।
হে আল্লাহর রসুল! এখন আমার কাজ কি?
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম যিনি মহানবীকে আল্লাহর প্রেরিত
বোলে স্বীকার কোরে এই দীনে তথা এসলামে প্রবেশ কোরলেন;
অর্থাৎ আবু বকর (রা:) মোসলেম হোয়েই রসুলুল্লাহকে (দ:) জিজ্ঞেস
কোরলেন- “হে আল্লাহর রসুল! এখন আমার কাজ কি? কর্তব্য কি? মহান
আল্লাহর শেষ নবী (দ:) উত্তর দিয়ে বোললেন, “এখন থেকে আমার
যে কাজ তোমারও সেই কাজ”। ইতিহাসে পাচ্ছি, শেষ এসলামকে গ্রহণ
করার দিনটি থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আবু বকরের (রা:) কাজ
একটাই হোয়ে গিয়েছিল, সেটা ছিলো মহানীর (দ:) সংগ্রামে তার
সাথে থেকে তাকে সাহায্য করা। শুধু আবু বকর (রা:) নয়,
যে বা যারা নবীজী (দ:) কে বিশ্বাস কোরে মোসলেম হোয়েছেন
সেই মুহুর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বা তারা বিশ্বনবীকে (দ:) তার ঐ
সংগ্রামে সাহায্য কোরে গেছেন, তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ পালন
কোরে গেছেন। আর কেমন সে সাহায্য! স্ত্রী-পুত্র পরিবার ত্যাগ
কোরে, বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কোরে,
অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য কোরে,
অভিযানে বের হোয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারন করে এবং শেষ
পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়ে। এই হোল তার উম্মাহ,
উম্মতে মোহাম্মাদী তার প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি।
উম্মতে মোহাম্মদীর জাতীয় চরিত্র যোদ্ধার চরিত্র
আল্লাহর রসুলের হাতে গড়া সেই জাতির প্রতিটি সদস্য পরিণত
হোয়েছিলেন আল্লাহর রাস্তায় প্রাণোৎসর্গকারী, এমনই ভয়ঙ্কর
দুর্ধর্ষ যোদ্ধায়। সেই জাতিই আজ কালের বিবর্তনে পরিণত
হোয়েছে মৃত্যুভয়ে ভীরু, কাপুরুষ, শতধাবিচ্ছিন্ন জনসংখ্যায়। পূর্বেই
বোলেছি, আল্লাহ শেষ নবীকে (দ:) পাঠালেন এই দায়িত্ব
দিয়ে যে তিনি যেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এই জীবন-ব্যবস্থা,
এই সংবিধান অর্থাৎ দীন সমস্ত মানব জাতির উপর কার্যকরী করেন।
এক জীবনে এত বিরাট-বিশাল কাজ সম্ভব নয় বোলেই বিশ্বনবী (দ:)
উম্মতে মোহাম্মদী নামক জাতিটি গঠন কোরলেন। প্রেরণা-প্রেষণা ও
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঐ জাতিকে একটি দুর্দ্ধর্ষ
যোদ্ধা জাতিতে পরিণত কোরলেন। তিনি এমন জাতি সৃষ্টি কোরলেন
যে জাতির সর্বপ্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হোল শুধু
মৃত্যুভয়হীনতা নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে মৃতুর জন্য ব্যাগ্র আকুলতা। তার (দ:)
নিজের উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব এই নতুন যোদ্ধা জাতির উপর
অর্পণ কোরে বিশ্বনবী (দ:) তার প্রভুর কাছে চলে গেলেন।
বোলে গেলেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এই দীন সমস্ত
পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অর্থাৎ তার সুন্নাহ যে বা যারা ত্যাগ
কোরবে, তারা তার কেউ নয়, অর্থাৎ তার জাতি উম্মাহ
থেকে বহিষ্কৃত। অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ জাতি তাদের নেতার
ওফাতের পর সমস্ত পার্থিব সম্পদ কোরবান কোরে উত্তাল মহাতরঙ্গের
মত পৃথিবীর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে দীন
প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন, এটা ইতিহাস। কিন্তু তারপরই ঐ জাতি কোরল
মহাসর্বনাশা কাজ। হঠাৎ তারা ভুলে গেলো তাদের উপর আল্লাহ ও
তার রসুলের (দ:) অর্পিত দায়িত্ব।
তারা সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহর সত্যদীন
প্রতিষ্ঠার জেহাদ ত্যাগ কোরল যে কাজ করার জন্য এই
জাতিটিকে সৃষ্টি করা হোয়েছিল।
নতুন জেহাদ ও নতুন সুন্নাহ আবিষ্কার
জেহাদ ত্যাগের ফলে একটি নতুন সমস্যা দেখা দিলো। সেটা হোল এই
যে জেহাদ সর্ব অবস্থায় ওয়াজেব এবং বিশেষ অবস্থায় ফরদে আইন,
নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের মতই ফরদে আইন, এ কথায় কোন
মাযহাবের কোন ইমামের মতভেদ নেই। জেহাদ ছেড়ে দেয়া হোয়েছে,
জাতিগতভাবে ছেড়ে দেয়া হোয়েছে, অথচ ওটা ওয়াজিব এবং ফরদ।
যেটা ওয়াযেব এবং ফরদে আইন সেটা ছেড়ে দিয়ে মোসলেম
থাকা যায় কেমন কোরে? এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য
আবিষ্কার করা হোল জেহাদে আকবরকে; নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করাকে।
একটা প্রবাদ বাক্যকে হাদিসের মর্যাদা দেবার চেষ্টা করা হোল
পলায়নপর মনোবৃত্তিকে সমর্থন করার জন্য। শুধু তাই নয় আল্লাহর রসুল
(দ:) যে বোলেছিলেন যে “যারা আমার সুন্নাহ ত্যাগ
কোরবে তারা আমাদের কেউ নয়” এই হাদিস থেকে বাঁচবার চেষ্টায়
তারা ঘোষণা কোরলেন, এ সুন্নাহ মহানবীর (দ:) সশস্ত্র সংগ্রাম নয়,
ঐ সুন্নাহ হোচ্ছে তার ব্যক্তি জীবনের অভ্যাস, কাপড়-চোপড়, খাওয়া-
দাওয়ার তার পছন্দ-অপছন্দ, তার চুল, দাড়ি, মোচ তার দাঁত মাজা, তার
খাওয়ার আগে একটু লবণ মুখে দেয়া, খাওয়ার পর একটু
মিষ্টি খাওয়া ইত্যাদি। মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবীর জীবন
থেকে তারা শিক্ষা বেছে নিলেন ঐগুলি। দু’টো কাজেরই মূল উদ্দেশ্য
হোল পলায়ন- কাপুরুষতা, মৃত্যু-শাহাদাত থেকে পলায়ন।
যে শাহাদাতের কথা বোলতে যেয়ে বর্তমানের
অতি মোসলেমরা যার সুন্নাহ পালন করেন বোলে দাবি করেন, সেই
বিশ্বনবী (দ:) বোলেছেন আমার উপর নবুয়্যতের দায়িত্ব
না থাকলে আমি জেহাদের ময়দানে শহীদ হোয়ে যেতাম, বোলেছেন
আমি কেমন আকুলভাবে চাই যদি আমি শহীদ হোতাম, আমাকে জীবিত
করা হোত, আমি আবার শহীদ হোতাম, আমাকে আবার জীবিত
করা হোত, আবার শহীদ হোতাম, আবার জীবিত করা হোত এবং আবার
শহীদ হোতাম (আবু হোরাইরা (রা:) থেকে বোখারী মোসলেম,
মেশকাত)।
তাঁর উম্মাহর ভবিষ্যত সম্বন্ধে বোলতে যেয়ে রসুলাল্লাহ
(দ:) একদিন বোললেন-“শীঘ্রই এমন দিন আসছে যে অন্যান্য জাতিসমূহ
এই উম্মাহর বিরুদ্ধে একে অপরকে ডাকবে যেমন
কোরে (খানা পরিবেশন করার পর) একে অন্য সবাইকে খেতে ডাকে।”
তাকে প্রশ্ন করা হোল “আমরা কি তখন সংখ্যায় এত নগণ্য থাকবো?”
তিনি বোললেন, “না, তখন তোমরা সংখ্যায় অগণ্য হবে, কিন্তু
হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। আল্লাহ তোমাদের শত্র“র
মন থেকে তোমাদের সম্পর্কে ভয়-ভীতি উঠিয়ে নেবেন
এবং তোমাদের হৃদয়ের মধ্যে দুর্বলতা নিক্ষেপ কোরবেন।” কেউ প্রশ্ন
কোরলেন, “ইয়া রসুলাল্লাহ! এই দুর্বলতার কারণ কি হবে?” তিনি জবাব
দিলেন, “দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও মৃত্যুর প্রতি অনীহা।” [হাদিস-
সাওবান (রা:) থেকে আবু দাউদ মেশকাত। পাঠক, ইরাকের
বিরুদ্ধে পৃথিবীর জাতিগুলিকে কেমন কোরে ডাকা হোয়েছিল স্মরণ
কোরুন। অবশ্য এ কথার মানে এ নয় যে ইরাক প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী।
ইরাক যেমন প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী নয় তেমনি যে সব ‘মোসলেম’
জাতি খ্রিস্টান ও ইহুদিদের পক্ষ হোয়ে ইরাককে আক্রমণ কোরে ধ্বংস
কোরেছিল সেগুলোও নয়।
অবিশ্বাস্য বিজয়ের নেপথ্য কারণ
শাহাদাতের তৃষ্ণা
যে জাতির স্রষ্টা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য বারবার আকুল আগ্রহ প্রকাশ
কোরেছেন, যে জাতির অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের কারণ
হিসেবে পাশ্চাত্য ইতিহাসবেত্তারা লিখেছেন টঃঃবৎ
পড়হঃবসঢ়ঃ ভড়ৎ ফবধঃয মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা (পি.কে.হিট্টি-
দ্যা অ্যারাবস), সেই জাতি মৃত্যুভয়ে ভীত হোয়ে যাবার কারণই হোল
সশস্ত্র সংগ্রামকে ছেড়ে বিকল্প হিসাবে নফসের
বিরুদ্ধে সংগ্রামকে গ্রহণ করা এবং নেতার প্রকৃত সুন্নাহ-সশস্ত্র
সংগ্রামকে ছেড়ে তার জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের
সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, অভ্যাস ইত্যাদির অনুকরণ
করা।
আদম (আ:) থেকে আজ পর্যন্ত মানব জাতির মধ্যে ছোট বড় যত
নেতা জন্মেছেন, কোন নেতাকেই তার জাতি এমন অপমানকর
অবমূল্যায়ন কোরেছে বোলে আমার মনে হয় না, যেমন
কোরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বিপ্লবী নেতাকে, তার
বিপ্লবী চরিত্রকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে তার ব্যক্তিগত
অভ্যাসগুলিকে আমরা নকল কোরে চোলেছি। সশস্ত্র সংগ্রাম
ছেড়ে নফসের সঙ্গে সংগ্রামের আশ্রয় গ্রহণ করার ও তার প্রিয় নবীর
অমন চরম অবমূল্যায়নের জন্য আল্লাহ এই জাতিকে চরম শাস্তি দিতেও
ছাড়েন নি। আল্লাহ এই জাতিকে বোলেছিলেন-
তোমরা যদি (পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য) সামরিক
অভিযানে বাহির না হও তবে তিনি তোমাদের মর্মন্তুদ
শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের উপরে চাপিয়ে দিবেন
(সুরা আত-তওবা ৩৯)। আরও বোলেছিলেন-“তোমাদের
প্রস্তুতি সামান্যই হোক আর বেশিই হোক বাহির হোয়ে পড়
এবং তোমাদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ কর
(সুরা তওবা ৪১)।” আল্লাহর এই সব সরাসরি, দ্ব্যর্থহীন
আদেশগুলি (যেগুলি তার নবীর প্রকৃত সুন্নাহ এবং যা ত্যাগ
কোরলে তার উম্মাহ হোতে তিনি বহিষ্কার কোরে দিয়েছেন)
পরিত্যাগ ও অমান্য করার ফলে আল্লাহ ঐ জাতির শত্র“দের, যারা এই
উম্মাহর নাম শুনলেও ভয়ে কাঁপতো, সেই শত্র“র মন থেকে এদের
সম্বন্ধে ভয় তুলে নিলেন, এবং সে ভয় এই জাতির হৃদয়ে ঢুকিয়ে দিলেন।
তারপর আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্র“তি মোতাবেক এই মোসলেমজাতির হাত
থেকে শাসন-শক্তি ও কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে ইউরোপের খ্রিস্টান
জাতিগুলির হাতে সোপর্দ কোরলেন। প্রায় সমস্ত জাতিটাকেই কঠিন
শাস্তি দিয়ে শত্র“র ক্রীতদাসে পরিণত কোরে দিলেন। এই
শাস্তি শুধু যে এই দুনিয়াতেই নয়, আখেরাতেও, তাও বোলে দিলেন।
আল্লাহর এই কাজের দ্বারাই প্রমাণিত হোয়ে গেলো যে তওহীদের ও
উম্মতে মোহাম্মদীর দাবিদার এই জাতি তখন আর না মো’মেন,
না উম্মতে মোহাম্মদী। তারা কার্যত আজ নিকৃষ্ট, ঘৃণিত কাফের ও
মোশরেক।
No comments:
Post a Comment