DESHERPATRO

Wednesday, January 15, 2014

এদেশের সংবিধান কেন আল্লাহর হবেনা?

আল্লাহর দেয়া আসমানী সংবিধান আল কুরআনের ইসলামী আদর্শ সন্নিবেশিত করতে আমাদের মনে এত হিংসা বিদ্বেষ ও কুণ্ঠাবোধ থাকবে কেন?

পৃথিবীতে যে আদর্শের বর্তমান দাবীদার অনুসারী (মুসলিম) ১৫০ কোটির বেশি আর যে আদর্শের অনুসারী এ দেশে শতকরা নব্বই জন, আর এ দেশে তিন লক্ষেরও বেশি মসজিদ থেকে দৈনিক পাঁচবার কোটি কোটি কণ্ঠে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও সার্বভৌমত্বের ঘোষণা বিঘোষিত হয়, তাঁর এক ও অদ্বিতীয় উলুহিয়াতের আওয়াজ উচ্চারিত হয়, অথচ এ দেশের সংবিধান আল্লাহর নামে শুরু এবং আল্লাহর আইনে শেষ হতে পারবে না কেন? কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি সংবিধানের সকল ধারা কুরআনভিত্তিক না করে কুরআনের কিছু ধারা সংযোজন একটি রাজনৈতিক প্রহসন ব্যতীত কিছুই নয়। একজন মুসলিম কখনই ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। ইসলাম ধর্মের পক্ষে থেকে ধার্মিক না হলে বা কুরআন অনুসারে না চললে সে মুসলিমই থাকে না। আল-কুরআনে মুসলিমদেরকে কাফিরদের উদ্দেশ্যে বলতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) আর আমার জন্য আমার দ্বীন (জীবনব্যবস্থা)’। (দেখুন-কাফিরুন/১০৯: ০৬, শূরা/৪২: ১৫)। আরো বলা হয়েছে, ‘দীনের ক্ষেত্রে কোন বলপ্রয়োগ নাই (অর্থাৎ বলপ্রয়োগ করে মুসলিম বানানো যাবে না) সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। যে তাগুতকে (কুরআনের আইনে পরিচালিত নয় এমন কারো) অস্বীকার করবে ও আল্লাহর প্রতি ঈমান (বিশ্বাস) করবে সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে যা কখনো ভেঙ্গে যাবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়। (দেখুন- বাকারা/০২: ২৫৬)। এসব আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, মুসলিম উম্মাহ ও অমুসলিম উম্মাহ সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থায় পরিচালিত হতে বাধ্য। (আরো দেখুন- বাকারা/০২: ১৩৯-১৪০, আনআম/০৬: ১০৮, ইউনুস/১০: ৪১, ১০৪, শূরা/৪২: ১৫)। এসব আয়াতের অর্থই হলো ধর্মপক্ষতা কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা নয়। যিনি ইসলাম ধর্ম নিরপেক্ষী তিনি আসলে অমুসলিম। ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা নয়। ভাষা, বর্ণ, গোত্র, পেশা, ভৌগলিক সীমানা আল্লাহর সৃষ্টিবৈচিত্র ও পরিচয়ের প্রকাশ ও মাধ্যম। (দেখুন- ফাতির/৩৫: ২৭-২৮, রুম/৩০: ২২, হুজুরাত/৪৯: ১৩)। কিন্তু এসবগুলো কোন জীবনবাদের বা জীবনব্যবস্থার ভিত্তি নয়। সংশোধিত সংবিধান থেকে ইসলাম ধর্মের বিষয়টিও মুছে ফেলা হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যা ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ‘জামায়াতকে এদেশ থেকে চিরতরে বিদায় করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরাই গঠন করবো। আর সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়াও আমরা একদিন মুছে ফেলবো। এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা’।(দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০২.১১.১১, প্রথম পৃষ্ঠা, কলাম ৫)) আসলে মানুষ তার জীবন চলার পথে জীবনব্যবস্থা হিসেবে যা সে ধারণ করে চলে সেটাই তার ধর্ম। তাই বাংলাদেশ সংবিধান হচ্ছে বাংলাদেশীদের অনুসৃত একটি ধর্ম বা জীবন চলার একখানা পবিত্র দলীল বা ব্যবস্থাপত্র, যা ডক্টর কামাল হোসেন ও ভারত আর বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞগণ তৈরি করে দিয়েছেন। খৃস্টান অধীনস্ত হবার পূর্বে মুসলিম দুনিয়ায় আল কুরআন ব্যতীত কোন লিখিত জমিনী ছিল না। বাংলাদেশ ভূখন্ড বৃটিশ শাসনাধীনে থাকার সময় অবশ্য ‘মোহামেডান ল’ হিসাবে/ধর্মীয় বিধান হিসাবে বৃটিশ সংবিধানে সন্নিবেশিত ছিল। আমরা মনে করি, মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর নেআমত, হেদায়াত ও মানবজীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগের জন্য আল্লাহর দেয়া পূর্ণতাপ্রাপ্ত আসমানী সংবিধান/জিকির আল কুরআনের বিরুদ্ধে বা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে এত বড় বিদ্বেষ ও বৈরিতা ব্যক্ত করা বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। সর্বকালের আসমানী ছহিফা/বাইয়িনাত/মিজান/কিতাব তথা সর্বশেষ আসমানী সংবিধান আল কুরআন তামাম মানব জাতির মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার শাশ্বত ও পবিত্র দলীল (দেখুন সূরা হাদীদ/৫৭: ২৫) যা শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, এ সংবিধানে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, পেশা ও সীমানার মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। অন্য ধর্মের আরাধ্যকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে (দেখুন সূরা আনআম/০৬: ১০৮), অন্য ধর্মের লোকের উপর এ সংবিধান জোর করে চাপিয়ে দেবার কোন ধারা এ সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়নি, যার যে ধর্ম তা অনুসারে তার জীবন চলার অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, তাদের প্রতি বালাগুম মুবীন (ইসলামের দাওয়াত সুস্পষ্টভাবে পৌঁছানো) ছাড়া মুসলিম উম্মাহর কোন দায়িত্ব নাই, এ সংবিধানের ধারায় তাদের যেসব অধিকার স্বীকৃত হয়েছে তা সংরক্ষিত থাকবে (দেখুন সূরা বাকারা/০২: ২৫৬, সূরা কাফিরুন/১০৯: ০১-০৬, সূরা হামীম/৪১: ০৫)। ইসলামে মানুষের বৈষয়িক স্বার্থ রক্ষার জন্য অনুমোদন আছে কিন্তু ভাষা, বর্ণ, গোত্র, পেশা ও সীমানার স্বার্থে মৃত্যুবরণ করলে তার জন্য শাহাদাত বরণ ও জান্নাত নসীব হয় না। একটি কুফরি মতবাদ, যা মানবজাতির জন্য একটি মস্তবড় জমিনী গযব। সাথে পুঁজিবাদ, সুদী কারবার ও ভাষা-বর্ণ-গোত্র-সীমানাভিত্তিক অন্ধ জাতীয়তাবাদ একত্র হয়ে মানবজাতির উপর শোষণ, অত্যাচার ও লুণ্ঠনের স্টীমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। মানে গুটিকয়েক মানুষের হাওয়া বা প্রবৃত্তিপ্রসূত আইন। তা আবার গুটিকয়েক মানুষ তাদের প্রয়োজনমত, ইচ্ছামত ও সুবিধামত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য ? অথচ আল-কুরআনের আইন শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় আর অধিকাংশের কথামত চললে তা অবশ্যই আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। (দেখুন- আনআম/০৬: ১১৬)। অধিকাংশ মানুষের ব্যাপারে আল-কুরআনে বলা হয়েছেঃ-ক) অধিকাংশ মানুষ জানে না/ অনেক কিছু অবগত নয়/ আল্লাহর আয়াতের খবর রাখে না। (দেখুন- আনআম/০৬: ৩৭, আ’রাফ/০৭: ১৩১, ১৮৭, সাবা/৩৪: ৩৬, যুমার/৩৯: ৪৯, মু’মিন/৪০: ৫৭, জাসিয়া/৪৫: ২৬, ইউনুস/১০: ৫৫, ইউসুফ/১২: ৬৮, নাহল/১৬: ৩৮, ১০১, কাসাস/২৮: ৫৭, রুম/৩০: ০৬, ৩০, লুকমান/৩১: ২৫, সাবা/৩৪: ২৮)

No comments:

Post a Comment