মানবরচিত আইন দিয়ে বিচার ফায়সালাকারিদের বিধান।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ“
আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফির।” (আল মায়েদা, আয়াত ৪৪)
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহ্র অবতির্ণ আইন ব্যতীত অন্য কোন আইন দ্বারা শাসন পরিচালনা করা সুস্পষ্ট কুফুরী। এই কুফুরী কখনো হতে পারে বড় কুফুরী, যা বান্দাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়; আবার কখনো তা হয় ছোট কুফুরী যা ইসলাম থেকে বের করে না। এ বিষয়টি নির্ভর করে বিচারক ও শাসকের অবস্থার উপর। যদি সে মনে করে যে,
১. ইসলামী শরি‘আহ অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করা বাধ্যতামূলক নয়
২. ইসলামী শরি‘আহ মানা বা না মানার ব্যাপারে তার স্বাধিনতা আছে
৩. আল্লাহ্র আইনকে যদি সে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে
৪. মানব রচিত আইনকে যদি ইসলামী শরী‘আহ্র চেয়ে উত্তম বা সমমানেরর মনে করে
৫. ইসলামী শরী‘আহকে যদি বর্তমান পৃথিবীর জন্য অনুপযোগী মনে করে
৬. কিংবা যদি কাফির মুনাফিকদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যও আল্লাহ্র শরী‘আহ ছেড়ে মানবরচিত আইন দ্বারা শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেতাহলে তাল বড় কুফুরী হিসেবে গন্য হবে।
আর যদি কারও এবস্থা এমন হয় যে, সে আল্লাহ্র শরী‘আহ অনুযায়ী শাসন পরিচালনাকে বাধ্যতামূলক মনে করে, আল্লাহর আইনকে কার্যকারী ও কল্যাণকর মনে করে, আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার শাসন না করার কারণে সে নিজেকে শাস্তির উপযুক্ত বলে স্বীকার করে; তাহলে এমন ব্যক্তি গুনাহ্গার এবং তার এ কাজটি ছোট কুফুরী বলে গণ্য হবে।
পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ্র বিধান জানার ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও তা জানতে না পারে এবং ভুল ফায়সালা দিয়ে বসে, তাহলে সে ভুলকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে এবং চেষ্টার বিনিময়ে একটি সাওয়াব পাবে এবং তার ভুল ক্ষমার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে এ নীতিটি কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে ফায়সালা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।আর সাধারনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে এ নীতি হবে ভিন্ন রকম। এ ধরণের বিষয়ে ফায়সালা প্রদানকারীদের ব্যাপারে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ্ (র.) বলেন, “শাসক দ্বীনদার হওয়া সত্ত্বেও যদি সে জ্ঞান ছাড়া সিদ্ধান্ত প্রদান করে, তাহলে সে জাহান্নামী। আর জ্ঞানী হয়ে যদি জ্ঞানের বিপরীত সিদ্ধান্ত প্রদান করে, তাহলেও সে জাহান্নামী। আর যদি সে জ্ঞান ও ন্যায়পরায়ণতার তোয়াক্কা না করেই সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সে জাহান্নামের আরো বেশী উপযুক্ত হবে। এমনটি তখনই হবে, যখন সে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে হুকুম দেবে।আর যদি সে মুসলমানদের দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থার বিষয়ে কোনো বিধিমালা জারী করা হয়, যেখানে সে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করে, বিদ’আতকে সুন্নাত ও সুন্নাতকে বিদ’আত সাব্যস্ত করে, ন্যায়কে অন্যায় এবং অন্যায়কে ন্যায় অভিহিত করে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং তাঁরা যা থেকে নিষেধ করেছেন তা করার আদেশ দেয়, তাহলে এরা হলো এমন ভয়াবহ, নিকৃষ্ট ও জঘন্যতম পাপিষ্ঠ লোক যাদের সম্পর্কে স্বয়ং রাব্বুল আলামীন ফায়সালা দেবেন, যিনি রাসূলগণের মাবুদ, প্রতিদান দিবসের মালিক, দুনিয়া-আখিরাতের সকল প্রশংসা তাঁর জন্য নিবেদিত।
এরশাদ হচ্ছে,لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ“বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” (আল কাসাস, আয়াত ৮৮)هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيداً“তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে অন্য সকল দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করেন। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।” (আল ফাত্হ, আয়াত ২৮)শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ্ (র.) আরো বলেন, এতে কোনো সন্দেহ্ নেই যে, ইসলামী শরী‘আহ মোতাবেক শাসন পরিচালনাকে যে ব্যক্তি বাধ্যতামূলক মনে করে না, সে কাফির। যদি কোন ব্যক্তি নিজের কাছে ভালো মনে হওয়ায় আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোনো আইন দ্বারা শাসন ও বিচার পরিচালনা করে, সেও কাফির।কেননা প্রত্যেক জাতি সাধারণতঃ সেভাবেই বিচার ফায়সালা ও শাসন পরিচালনা করে যেটাকে তারা ন্যায় ও ইনসাফ মনে করে। আর ন্যায় ইনসাফ বলে সেটাকেই গ্রহণ করে যেটাকে তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিগণ ন্যায় ইনসাফ বলে সাব্যস্ত করে থাকে।বর্তমান বিশ্বের অবস্থা তো আরও ভয়ঙ্কর। নিজেদের মুসলিম দাবী করে এমন লোকেরাও আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে পুর্ব পুরুষদের মনগড়া আইন অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে। হয়তো পূর্বের সেসব লোকেরা প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিলো, যাদের কথা সবাই মেনে নিতো। আর তারা মনে করতো কুরআন ও সুন্নাহ্ বাদ দিয়ে এভাবেই শাসন ও বিচারকার্য পরিচালনা করা উচিত; অথচ এটা হল সুস্পষ্ট কুফুরী।অনেক লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে বলে দাবী করে, অথচ তারা আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করে না; বরং প্রচলিত প্রথা ও নেতৃস্থানীয় লোকদের প্রণীত বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে। ইসলামী শরী‘আহ ছাড়া অন্য আইন দ্বারা শাসন পরিচালনা করা যে অবৈধ, তা তাদেরকে জানানো সত্ত্বেও তারা তা মেনে নেয় না; বরং অন্য আইন দ্বারা শাসন পরিচালনাকে তারা বৈধ মনে করে। অতএব তারাও কাফির।শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম বলেন, যে কুফুরীকে ছোট কুফুরী বলা হয়েছে, তা হলো আল্লাহর আইনকেই একমাত্র সত্য ও গ্রহণযোগ্য আইন মনে করা সত্ত্বেও কোনো কারণে শরী‘আহ্র খেলাফ আইনের কাছে বিচার প্রার্থনা করা এবং একারণে যে সে পাপী হবে তা স্বীকার করা।এ ধরনের ব্যাপার কোনো কারও থেকে ঘটনাচক্রে দু’একবারই প্রকাশ পেতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি এটাকেই তার সচরাচর নিয়ম বানিয়ে ফেলে এবং শরী‘আহ বিরোধী আইন মেনে চলে, তবে তার এ কাজটিও কুফুরী হিসেবে সাব্যস্ত হবে; যদিও সে ভুল স্বীকার করে এবং বলে যে, আল্লাহর আইনই অধিক ন্যায়সঙ্গত। আর এ কুফুরী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।এখানে শায়খ মুহাম্মদ ইবন ইব্রাহীম হঠাৎ ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সব সময় অনুসৃত সাধারণ নিয়মের মধ্যে পার্থক্য রেখা টেনে বলেছেন যে, শেষোক্ত কাজটি এমন কুফুরী যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে সম্পুর্ণ বের করে দেয়। কেননা ইসলামী শরী‘আহর পরিবর্তে মানবরচিত আইনকে গ্রহণ করে নেওয়াটা প্রমাণ করে যে, সে আল্লাহর আইনের চেয়ে মানবরচিত আইনকেই অধিক উপযোগী ও উত্তম মনে করে। নিঃসন্দেহে এটি এমন ধরণের তাওহীদ পরিপন্থী কুফুরী, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।(আকীদাতুত তাওহীদঃ শায়েখ সালেহ আল ফাওযান)
No comments:
Post a Comment