DESHERPATRO

Friday, January 10, 2014

সারা বিশ্বে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ

সারা বিশ্বে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ

মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম* আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব**
* লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।
** পিএইচ.ডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সারা বিশ্বে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালন নিয়ে বাংলাদেশসহ
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড়
লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিপূর্বে ১৯৮৬ সালের ১১-১৬ অক্টোবর ওআইসির অঙ্গ
সংগঠন ইসলামী ফিকহ একাডেমী জর্ডানের রাজধানী আম্মানে এ
ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এখনও পর্যন্ত
ওআইসি কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। কারন এ বিতর্কিত
সিদ্ধান্তটি ছিল কেবলই যুক্তিনির্ভর; শরী‘আত কিংবা বাস্তবতার
নিরিখে এর কোন ভিত্তি নেই। তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে যেহেতু এ
নিয়ে গুঞ্জরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাই শারঈ দৃষ্টিকোণ এবং বাস্তবতার
নিরিখে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
পর্যালোচনা : ১
লেখকদ্বয় লিখেছেন: ‘ একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় লক্ষ্য
করা যাচ্ছে’ : অথচ তাবেয়ী হাসান বসরী (রহ.), ইমাম আবু
হানিফা (রহ.), ইমাম আহমাদ (রহ.), ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.),
ইমাম শাওকানী (রহ.), ইমাম সাবুনী (রহ.) প্রমুখ কুরআন ও সহীহ হাদিস
থেকে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এছাড়া মুসলিমদের ঐক্য বা একক খলীফার
শর্তে ইমাম মালেক (রহ.), শায়েখ ইবনে বায (রহ.), মুহাদ্দিস
আলবানী (রহ.) প্রমুখ থেকে গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত জানা যায়। তাঁদের
মধ্যে ইমাম সাবুনী (রহ.) এর বক্তব্য এখানে উল্লেখ করছি। তিনি (রহ.)
তাঁর রিসালাহ আস সিয়াম এ লিখেছেন-
“এটা একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল যে, চাঁদের মাতলার
বিন্নতা গ্রহণযোগ্য কী না? কেননা, এই মাসআলাটি ইবাদাতের
সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- রামাযান, হজ্জ প্রভৃতি চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত। এ
সম্পর্কে জমহুর (অধিকাংশ) ফক্বীহদের মত হল, চাঁদের মাতলার
ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়। জমহুর মালেকী, জমহুর হাম্বলী ও জমহুর
হানাফীদের মত হল, কোন মুসলিম দেশ ও শহরের চাঁদ দর্শন সমগ্র মুসলিম
বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। এর দলীল হল নবী (সাঃ) এর হাদীস,“চাঁদ
দেখে সিয়াম রাখ এবং চাঁদ দেখে সিয়াম খোল।” (সহীহ বুখারী,
মিশকাত/১৮৭৩) এই হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সমস্ত মুসলিমদের
উদ্দেশ্যে সম্বোধন করেছেন। এই সম্বোধন সিরিয়া,
মদীনা বা মিশরবাসীর জন্য খাস (সুনির্দিষ্ট) নয়। যেভাবে সমস্ত
মুসলিমের আরাফাহ একটি দিনেই হয়, সেভাবে কুরবানীর ঈদও একই
দিনেই হতে হবে।”
সাইয়েদ সাবিক্ব তাঁর বিশ্ববিখ্যাত ‘ফিক্বহুস সুন্নাহতে’ লিখেছেন :
“ইখতিলাফুল মাতালে (চাঁদ উদয়ের ভিন্নতা) : জমহুর (অধিকাংশ)
আলেমের মতে চাঁদ উদেয়র স্থানের ভেদাভেদ গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং যখন কেউ চাঁদ দেখতে পায়, তখন সব মানুষের উপর সিয়াম ওয়াজিব
হয়ে যায়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন “তোমরা চাঁদ
দেখে সিয়াম রাখ এবং চাঁদ দেখে সিয়াম খোল।” (সহীহ বুখারী,
মিশকাত/১৮৭৩) এ আদেশ সমগ্র উম্মতের প্রতি প্রযোজ্য। তাদের কেউ
কোন স্থানে চাঁদ দেখলে সেটা তাদের সবার চাঁদ দেখা।” (ফিক্বহুস
সুন্নাহ, সিয়াম অধ্যায়; অতঃপর লেখক বহুল প্রচলিত নিয়মটিও উল্লেখ
করেছেন।)
সুস্পষ্ট হলো, অধিকাংশ আলেম চাঁদের ক্ষেত্রে সর্বসম্মত
যে সিদ্ধান্তটি দিয়েছেন, আত-তাহরীক তা বর্জন করেছে।
পত্রিকাটি ‘জমহুর আলেমদের’ সিদ্ধান্তকে ‘একশ্রেণীর মানুষের
মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে’ বাক্য দ্বারা অবজ্ঞা ও
অপমানিত করা হয়েছে। পত্রিকাটি সালাফি দাওয়াতের দাবীদার।
[আত-তাহরীকের স্লোগাণ হচ্ছে: Monthly At-Tahreek, which is
running from Rajshahi is an extra-ordinary Islamic Research
Journal of Bangladesh directed to Salafi Path, based on pure
Tawheed and Saheeh Sunnah.] অথচ এক্ষেত্রে তারাই সেই দাওয়াতের
বিরোধিতা করেছে।
অতঃপর ও.আই.সি’র ফিক্বাহ একাডেমির গবেষণাকে অকার্যকর,
যুক্তিনির্ভর, শরী’আতবিরোধী ও বাস্তবতাহীন আখ্যায়িত করা হয়েছে।
অথচ আরাফাহর দিবসে সিয়াম পালন সম্পর্কে পত্রিকাটির
ফতোয়া হলো, এই সিয়ামটি ঐদিন পালিত হবে যেদিন
হাজীরা আরাফাহর ময়দানে উপস্থিত থাকে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল,
যদি সউদী আরবের পূর্বে যারা ৯ জিলহজ্জ গণনা করবে, তাদের কী উপায়
হবে? কেননা তাদের ঈদের দিনটিতে (১০ জিলহজ্জ) সউদী আরব ৯
জিলহজ্জ বা আরাফাহর দিবসটি পালন করবে!? এর সমাধান একটিই। আর
তাহল, মুসলিম এলাকার চাঁদ উদয়ের খবর যতদূর পর্যন্ত পালনযোগ্য সময়ের
মধ্যে পৌঁছবে তাঁদের চাঁদের হিসাবটি ঐক্যবদ্ধভাবে পালিত হবে।
পক্ষান্তরে যাদের কাছে পালনযোগ্য সময়ের মধ্যে চাঁদ দেখার
খবরটি পৌঁছাবে না, তাদের জন্য হুকুমটি প্রযোজ্য হবে না।
উল্লেখ, দুই’শ বছর পূর্বে এদের পূর্বপুরুষগণ আরাফাহর
দিনটি বাংলাদেশে বসে তাদের মত হাজীদের আরাফাহর
দিনটিতে পালন করতে পারত না। কেননা তখন আরাফাহর দিনটির খবর
জিলহজ

No comments:

Post a Comment