তারাবির সালাহ কতভাগ এসলাম – কতভাগ ব্যবসা?
রবিবার, জুলাই 28, 2013, 4:57বিশেষ নিবন্ধ মন্তব্য যোগ করুনএই নিবন্ধটি পাঠকের অনুরোধে এবং বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা কোরে পুনঃপ্রকাশ করা হোল।
পাঠকের প্রতি অনুরোধ, পুরো নিবন্ধটি স্থির মনোযোগ সহকারে পাঠ না কোরে কোন রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন না। কয়েকটি মৌলিক বিষয় আপনাকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, এসলামের যে কোন আমলের দলিল হোচ্ছে কোর’আন এবং রসুলের সুন্নাহ। রসুলাল্লাহর ওফাতের পর থেকে গত ১৪০০ বছরে এসলামে মধ্যে বহু কিছু প্রবেশ কোরেছে যাকে বলা হয় বেদাত।তাই একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিৎ যে, “এতদিন ধোরে এত কোটি কোটি লোকে একটা কাজকে এবাদত মনে কোরে পালন কোরে আসছে, অমুক মসজিদের এমাম সাহেব বোলেছেন, অমুক মোফাসসের, ফকীহ, আল্লামা, বুজুর্গানে দীন এই আমল করেন” ইত্যাদি কথাগুলি এসলামের কোন দলিল নয়। বরং সকলের দেখা দরকার বিষয়টি কোর’আনে আল্লাহ বোলেছেনকিনা এবং সে মোতাবেক আল্লাহর রসুল কোরেছেন কিনা। এটাই হোল এসলামের আওতা। এর পরে আসে কোন আমলের কতটুকু গুরুত্ব। আপনার শরীরের সকল অঙ্গের গুরুত্ব কি সমান? আপনার হাতের নখের, চোখের ভ্রুর যা গুরুত্ব আপনার হৃদপিণ্ডেরও কি তা-ই গুরুত্ব? নিশ্চয়ই নয়। তেমনি দীনের বিষয়গুলির মধ্যেও গুরুত্বের বিস্তর তারতম্য রোয়েছে। যে বিষয়গুলি দীনের অত্যাবশ্যকীয় অংশ সেগুলি কোর’আনে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন। সেই হুকুমগুলির বাস্তবায়ন কিভাবে হবে তা রসুলাল্লাহ হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। এই শিক্ষাগুলিই হোচ্ছে রসুলের সুন্নাহ। আমাদের আলোচ্য বিষয় হোচ্ছে তারাবির সালাহ। সত্য হোচ্ছে, এই তারাবির সালাহ (নামাজ) পড়ার হুকুম আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে কোথাও দেন নি, আল্লাহর রসুলও তাঁর আসহাবদেরকে জীবনে একবারও পড়তে বোলেছেন বোলে কোন দলিল নেই। অথচ এই তারাবিকে আমাদের আলেম সাহেবরা এত অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, মনে হয় যেন তারাবি পড়তেই হবে, না পড়লে সওমের অঙ্গহানী হবে। আমরা বোলি না যে, তারাবি পড়া অনুচিৎ।
আমাদের প্রশ্ন হোল, আল্লাহ যে কাজগুলি ফরদ কোরেছেন, সেগুলি যারা পরিত্যাগ কোরেছেন তাদের নফল এবাদত আল্লাহর কাছে গৃহিত হবে কি না? একটি উদাহরণ দেই: আল্লাহ কোর’আনে সওম ফরদ হওয়ার কথা উল্লেখ কোরেছেন মাত্র একবার আর সওম পালনের নিয়ম কানুন উল্লেখ কোরেছে আর দুই/তিনটি আয়াতে, আর জেহাদ ও কেতাল (সংগ্রাম) ফরদ হওয়ার কথা বলা হোয়েছে বহুবার আর এর বিবরণ দেওয়া হোয়েছে প্রায় সাতশ’র মত আয়াতে। জেহাদ-কেতাল সংক্রান্ত সব আয়াত একত্র কোরলে আট পারার মত হোয়ে যায়। মো’মেনের সংজ্ঞার মধ্যেও আল্লাহ জেহাদকে অন্তর্ভুক্ত কোরে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মো’মেন শুধুমাত্র তারাই যারা আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে (সূরা হুজরাত ১৫)।’ এ সংজ্ঞাতে আল্লাহ সওমকে অন্তর্ভুক্ত করেন নাই, জেহাদকে কোরেছেন। শুধু তাই নয়, সওম পালন না কোরলে কেউ এসলাম থেকে বহিষ্কার এ কথা আল্লাহ কোথাও বলেন নি, কিন্তু জেহাদ না কোরলে আল্লাহ কঠিন শাস্তি দিবেন এবং পুরো জাতিকে অন্য জাতির গোলামে পরিণত কোরবেন (সূরা তওবা ৩৯)। আরও নির্দিষ্টভাবে বোলতে গেলে, জেহাদ ছাড়া এসলামের এমন কোন আমল নেই যা বাদ দিলে “এসলাম থেকে বহিঃষ্কার” এমন কথা আল্লাহ কোথাও বলেন নি।আল্লাহ বোলেছেন, ‘কুতিবা আলাইকুমুল কেতাল- তোমাদের জন্য কেতাল (সংগ্রাম) ফরদ করা হোল (সূরা বাকারা ২২৬, ২৪৬, সূরা নেসা ৭৭)। ঠিক একই শব্দমালা ব্যবহার কোরে আল্লাহ সওমকেও ফরদ কোরেছেন- কুতিবা আলাইকুম সিয়াম (সূরা বাকারা ১৮৩)। একেবারে শব্দে শব্দে এক, কেবল এক স্থানে বলা হোয়েছে কেতাল, আরেক স্থানে সিয়াম। আল্লাহ যে বিষয়টি একবার মাত্র করার হুকুম দিলেও সেটা অবশ্যই ফরদ ও গুরুত্বপূর্ণ কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হোচ্ছে যে বিষয়টি একইভাবে ফরদ করা হোল এবং সেই কাজের বিষয়ে শত শতবার বলা হোল (জেহাদ ও কেতাল) এবং যেটি মহানবী এবং তাঁর আসহাবরা সারাজীবন ধোরে কোরলেন সেটির গুরুত্ব আর দুই তিনটি আয়াতে যে বিষয়টি বলা হোল (সওম) এই উভয় কাজের গুরুত্ব কি সমান? নিশ্চয়ই নয়। মহান আল্লাহ কোর’আনে শত শতবার জেহাদ কেতাল সম্পর্কে বলার পরও এ প্রসঙ্গে কেউ একটি শব্দও উচ্চারণ করেন না। মিডিয়াতে তো প্রশ্নই ওঠে না, এমন কি যে এমাম সাহেব মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে সিয়ামের ফজিলত নিয়ে সুরেলা ওয়াজে শ্রোতাদের মোহিত করেন, তিনিও ভুলেও জেহাদের নাম উচ্চারণ করেন না।এর কারণ কি? এর কারণ সওম অতি নিরাপদ একটি আমল যা কোরলে সুঁইয়ের খোঁচাও লাগার আশঙ্কা নেই। এতে জীবনের ঝুঁকি নেই, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ারও সম্ভাবনা নেই, কোন কোরবানীরও প্রশ্ন নেই। পক্ষান্তরে জেহাদ এমন একটি কাজ যা কোরতে গেলে জীবন ও সম্পদের সম্পূর্ণ কোরবানী প্রয়োজন।এ তো গেল, জেহাদ। বর্তমানের বিকৃত এসলামে তো কাফেরের বিরুদ্ধে দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদের তো কোন অস্তিত্বই নেই, জেহাদ শব্দটি উচ্চারণ করা মাত্রই আলেম সাহেবরা আত্মার বিরুদ্ধে জেহাদকে জেহাদের আকবর ইত্যাদি বোলে প্রকৃত জেহাদ থেকে পালাবার পথ খোঁজেন। তাদের কাছে এসলাম বোলতেই নামাজ আর নামাজ। তাহোলে আমাদের প্রশ্ন হোল, মো’মেনদের সফরকালীন অবস্থায় অথবা কোন অভিযানের উদ্দেশ্যে বের হোলে কোন স্থানে যদি শত্র“র হামলার আশঙ্কা থাকে তাহোলে ফরদ সালাহ একটি বিশেষ নিয়মে পড়তে হয় সেটা হোচ্ছে “সালাতুল খওফ” (সুরা নেসা ১০১-১০২)। সালাতুল খওফের শাব্দিক অর্থ আশঙ্কাকালীন সালাহ্। সালাতুল খওফ কায়েম করা আল্লাহর হুকুম, তাই এটি একটি ফরদ সালাহ। আল্লাহ কোর’আনে যতগুলো সালাতের হুকুম কোরেছেন তার সবগুলোরই নিয়ম-কানুন শেখানোর ভার দিয়েছেন রসুলের ওপর, এমনকি ওয়াক্তিয়া ফরদ সালাহও আল্লাহ নিজে শেখান নাই। একমাত্র সালাতুল খওফ শেখানোর ভার আল্লাহ নিজেই নিয়েছেন। এর নিয়ম কানুন তিনি বিস্তারিতভাবে পবিত্র কোর’আনে বোলে দিয়েছেন। ওয়াক্তিয়া সালাতের নিয়মকানুন তিনি পবিত্র কোর’আনে বোলে দেন নি। প্রশ্ন হোল, যেই সালাহ আল্লাহ নিজে শেখালেন, যে সালাহ ফরদ, সেই সালাহ এই জাতি একেবারেই ভুলে গেল, অথচ সুন্নাহ, নফল সালাহর বিষয়ে তারা অতি সতর্ক। কেন আলেম সাহেবরা তাদের ওয়াজ-নসিহতে কোনদিন এই সালাতুল খওফের নামও উচ্চারণ করেন না অথচ নফল তারাবি নিয়ে তুলকালাম করেন? এর সরল উত্তর- এই উম্মাহ আর দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদেও যায় না, কাজেই এদের মনে শত্র“র হামলার আশঙ্কাও নেই। সুতরাং সালাতুল খওফ নামে একটি ফরদ সালাহই হারিয়ে গেল।তারাবির ইতিহাস ও বর্তমানপ্রথম কথা হোল, এসলামের সকল প্রকার আমলের পূর্বশর্ত হোচ্ছে আল্লাহর তওহীদের প্রতি ঈমান। এই তওহীদ হোচ্ছে- লা এলাহা এল্লা আল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন সার্বভৌমত্বের মালিক বা হুকুমদাতা নেই। বর্তমানে ১৬০ কোটির মোসলেম নামক জাতিটি তাদের সার্বিক জীবনে আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলিকে প্রত্যাখ্যান কোরে দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদী খ্রিস্টান সভ্যতার তৈরী করা বিধান, মতবাদ, তন্ত্র-মন্ত্র মানছে। এর অর্থ তারা তাদের সার্বিক জীবনের হুকুমদাতা, এলাহ মানছে মানুষকে। এই কারণে তারা কলেমার চুক্তি থেকে বহির্গত হোয়ে গেছে, অর্থাৎ তারা আর মোমেন বা মোসলেম নেই। একটু আগেই বোললাম, এসলামের সকল আমল মোমেন-মোসলেমের জন্য। যেহেতু এ জাতি মোমেন বা মোসলেম নয়, তাই যারা মো’মেন না তাদের তারাবি কেন ফরদ সালাহ করারও কোন মানে নেই, সেগুলি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। তারাবি সালাহ আসলে কি, এসলামে এর স্থান কোথায় তা বর্ত্তমানের ধর্মব্যবসায়ী আলেম মোল্লাদের ধারণার সম্পূর্ণ বাইরে। তারা সওমের মাসে প্রতি রাত্রে ২০ রাকাত তারাবির সালাহ এমনভাবে বাধ্যতামূলক কোরে দিয়েছেন যেন তারাবি না পড়লে সওমের অঙ্গহানী ঘোটবে, এমনকি কেউ যদি সওম নাও রাখে তবু তার তারাবি পড়া উচিৎ। তাই বাস্তবে দেখা যায়, যারা ফরদ সালাহর ব্যাপারে গাফেল, তারাও তারাবির ব্যাপারে সতর্ক। আশ্চর্য্যজনক বিষয় হোচ্ছে, কোর’আনে বা হাদীসে তারাবি শব্দটিই নেই। বলাবাহুল্য যে, আকীদার বিকৃতি ছাড়াও তারাবির এত গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে ধর্ম-ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক স্বার্থই প্রধান।
এসলামে তারাবির উদ্দেশ্য ও গুরুত্বগভীর রাতে রসুলাল্লাহ সব সময়ই অতিরিক্ত সালাহ কোরতেন, একে ‘কিয়াম আল লাইল’ বলা হয় যা বিশেষভাবে তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি ব্যক্তিগত সালাহ কায়েমের জন্য মসজিদের নিকটেই একটি ছোট ঘর তৈরী কোরেছিলেন। রমাদান মাসে তিনি এশার পর পরই নিজ গৃহে এই সালাহ কায়েম কোরে ফেলতেন এবং অন্যান্য সময়ের চেয়ে সালাহ দীর্ঘ কোরতেন। দীর্ঘ করার উদ্দেশ্য ছিল মূলতঃ কোর’আনের মুখস্থ আয়াতগুলি ঝালিয়ে নেওয়া। একবার রমাদান মাসে তিনি এশার পরে নফল সালাহ কায়েম কোরছেন। বাইরে থেকে তাঁর উচ্চস্বরে ক্বেরাতের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কয়েকজন সাহাবী ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে রসুলের সাথে জামাতে শরীক হন। পরদিন এই সংবাদ পেয়ে আরো বেশ কিছু সাহাবী আসেন রসুলের সাথে সালাহ কায়েম করার জন্য। কিন্তু সেদিন আর রসুলাল্লাহ সালাতে দাঁড়ান না এবং ঘরের বাইরেও আসেন না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা কোরে আসহাবগণ উচ্চস্বরে রসুলাল্লাহকে ডাকতে থাকেন এবং তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঘরের দরজায় ছোট ছোট পাথর ছুঁড়ে মারতে থাকেন। তাঁদের এ আচরণে রাগান্বিত হোয়ে রসুলাল্লাহ বেরিয়ে এসে বলেন, ‘তোমরা এখনও আমাকে জোর কোরছ? আমার আশঙ্কা হয় এই সালাহ তোমাদের জন্য আল্লাহ না ফরদ কোরে দেন। হে লোকসকল! তোমরা এই সালাহ নিজ নিজ ঘরে গিয়ে কায়েম করো। কারণ কেবলমাত্র ফরদ সালাহ ব্যতিত তোমাদের জন্য সর্বোত্তম সালাহ হোচ্ছে সেই সালাহ যা নিজ গৃহে কায়েম করা হয়।” (যায়েদ বিন সাবিত রা. থেকে বোখারী)। আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রা:) কে জিজ্ঞাসা করেন, রমাদান মাসে রসুলাল্লাহর সালাহ কেমন ছিল। তিনি বলেন, রসুলাল্লাহ রমাদান মাসে এবং অন্যান্য সময়ে রাতে এগারো রাকাতের বেশী সালাহ কায়েম কোরতেন না। তিনি চার রাকাত সালাহ কোরতেন, আবার চার রাকাত সালাহ কোরতেন (অর্থাৎ আট রাকাত), এবং তারপরে তিন রাকাত সালাহ (বেতর) কোরতেন (বোখারী, ৩য় খণ্ড, ভলিউম ৩২, হাদীস ৩২০, মোসলেম, মালিক)।এর পর রসুলের জীবদ্দশায় জামাতে এই সালাহ আর কায়েম করার ইতিহাস নেই। প্রথম খলিফা আবু বকরের (রা:) সময়েও তারাবি সালাহ কায়েমের কোন নজির নেই। তাহোলে প্রশ্ন হোল, আজ এত গুরুত্বের সাথে প্রায় বাধ্যতামূলক ২০ রাকাত তারাবি পড়ার প্রচলন হোল কিভাবে? এর প্রকৃত কারণ হোচ্ছে আকীদার বিকৃতি হোয়ে এসলামের ছোট বিষয়গুলিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কোরে ফেলা। আলেমগণ তারাবি সম্পর্কে তাদের মতামত প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে ওমরের (রা:) বরাত দিয়ে থাকেন। প্রকৃত ঘটনাটি ছিল এই যে, দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা:) খেলাফতের প্রথম দিকে ১৪ হেজরীর রমাদান মাসে খলিফা একদিন দেখতে পান, মসজিদে একেক জন একেক দিকে উচ্চস্বরে ক্বেরাত কোরে এই নফল সালাহ কায়েম কোরছেন। তিনি বিচ্ছিন্ন এই মুসল্লীণের মধ্যে শৃংখলা বিধানের উদ্দেশ্যে তাদেরকে একজন এমামের অধীনে এসে সালাহ কায়েমের হুকুম দেন। (আব্দুর রহমান বিন আব্দুল ক্বারী থেকে বোখারী, এবং ইবনে সা’দ, কেতাব আল তাবাকাত, সুয়ূতি ইত্যাদি) এ ঘটনাটি থেকে এটা বলা যায় না তিনি তারাবির প্রচলন কোরেছেন। তবে এর সূত্র ধোরেই পরবর্ত্তী এমামগণ জামাতে ২০ রাকাত বাধ্যতামূলক তারাবি প্রচলন কোরেছেন। রসুল যেটি আশঙ্কা কোরেছিলেন, সেই নফল সালাহ এখন আকীদাগতভাবে বাধ্যতামূলক হোয়ে গেছে।যেহেতু মহানবীর ব্যক্তিগতভাবে বেতর ও নফল মিলিয়ে এগার রাকাত সালাহ কায়েমের দলিল পাওয়া যায়, কাজেই এশার পর বেতরের আগে রমাদান উপলক্ষ্যে নফল হিসাবে একা একা সর্বনিু ৪ রাকাত থেকে শুরু কোরে ঊর্দ্ধে যত রাকাত খুশি নফল সালাহ কায়েম করা যেতে পারে।
আরেকটি বিষয় হোল এই সালাহ প্রতিদিন ২০ রাকাত কোরে ফরদের মত বাধ্যতামূলকভাবে কোরতে হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। কারণ রসুল এই সালাহ ফরদ হোয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রকাশ্যে কায়েম করা ত্যাগ কোরেছিলেন। যে কাজটি রসুল প্রকাশ্যে করা ত্যাগ কোরলেন, শুধু বাসায় গিয়ে একা একা করার অনুমতি দিলেন, সেই কাজকে মহাসমারোহে মসজিদে, হাফেজে কোর’আন ভাড়া কোরে, দৈনিক ২০ রাকাত কোরে পড়ে কোর’আন খতম করার যে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হোয়েছে সেটা বিরাট অন্যায়। কারণ এটা সর্বসম্মত যে, নফলকে ফরদের উপরে স্থান দেওয়া এসলামের একটি বিকৃতি, বাড়াবাড়ি এবং গর্হিত একটি কাজ। কারণ এই কাজের ফলে দীন তার প্রকৃত রূপ হারিয়ে ফেলে। বর্তমানে ধর্মব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে এভাবেই এসলামের কম গুরুত্বপূর্ণ বহুকিছু মহাগুরুত্বপূর্ণ বোলে স্থান কোরে নিয়েছে।আমাদের কথা হোল, যেটা সত্য সেটা সাধারণ মানুষের জানা উচিৎ, এটা তাদের অধিকারও বটে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ নষ্ট হবে এই ভয়ে সত্য গোপন কোরে সাধারণ ধর্মপ্রিয় মানুষকে অসত্যের মধ্যে নিমজ্জিত কোরে রাখা কোন মোমেনের কাজ হোতে পারে না। আল্লাহর হুকুম হোল, হে ঈমানদারগণ, তোমরা সত্য ও ন্যায়ের উপর অটল থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্তীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।…আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম স¤পর্কেই অবগত। (সুরা নেসা ১৩৫)। সুতরাং সত্য আমাদেরকে বোলতেই হবে, যদিও সেটা কারও কারও অপ্রিয় হয়। এই বিভ্রান্তিকর অবস্থা কিভাবে সৃষ্টি হোল?ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা এই জাতিকে গোলাম বানানোর পর এরা যেন আর কোনদিন মাথা তুলতে না পারে সেজন্য ফন্দি কোরল যে, তারা এই জাতিকে দিনমান আল্লাহর উপাসনায় ব্যস্ত কোরে রাখবে। এর জন্য হাদীস, সেরাত, ফেকাহ থেকে তারা রসুলাল্লাহ ও তাঁর আসহাবদের ব্যক্তিগত আমলগুলি খুঁজে বের কোরল। এসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোচ্ছে এর ভিত্তি তওহীদ, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। এর পরে গুরুত্বপূর্ণ হোচ্ছে এই দীনকে মানুষের জাতীয় সামষ্টিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করা বা জেহাদ করা। এই বিষয়গুলি দীনের এবং উম্মাহর অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা যখন এই জাতির সার্বভৌমত্বের অধিকার নিজেদের হাতে নিয়ে নিল, তখন তারা একটি বিকৃত এসলাম তৈরী কোরল যেখানে তওহীদকে ‘আল্লাহ একমাত্র উপাস্য’ এই বিশ্বসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হোল এবং জেহাদকে আত্মার বিরুদ্ধে বোলে চালিয়ে দেওয়া হোল। আর যত রকম সুন্নাহ, মোস্তাহাব, নফল নামাজ খুঁজে পাওয়া গেল যেমন- তারাবি, তাহাজ্জুদ, আওয়াবীন, এশরাক, চাশত এমন অনেক সালাহকে এবং ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় যেমন- হায়েজ-নেফাস, ঢিলা কুলুখ, টুপি-পাগড়ি, মেসওয়াক, দস্তরখান ইত্যাদিকে মহা-গুরুত্বপূর্ণ বোলে উপরে স্থান দেওয়া হোল। তাদেরকে শেখানো হোল- রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা এগুলি সব দুনিয়াবি ব্যাপার। এগুলি এসলামের মুখ্য কিছু নয়, গৌণ এবং অপকৃষ্ট বিষয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত জাতি এমন বহু আমল কোরে যাচ্ছে যেগুলির কথা রসুলাল্লাহ (দ:) এবং তাঁর আসহাবরা কখনও শোনেনও নি, অথবা শুনলেও সেগুলির প্রতি তাঁরা কোন গুরুত্ব আরোপ করেন নি। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত চারিত্রিক উন্নয়নের জন্য কোরতেন।আজ এই মোসলেম নামক জনসংখ্যাটি তাদের জাতীয় জীবনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী (এলাহ) হিসাবে আল্লাহকে মানছে না, তারা সামষ্টিক জীবনে আল্লাহর হুকুম-বিধানগুলি বাদ দিয়েছে, বাদ দিয়ে দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদী খ্রিস্টান ‘সভ্যতার’ তৈরী গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রসহ বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্রের বিধান দিয়ে তাদের জীবন চালাচ্ছে। এদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি এমন কি সংস্কৃতি পর্যন্ত দাজ্জাল নিয়ন্ত্রিত। দাজ্জালকে প্রভু, রব এবং এলাহ হিসাবে গ্রহণ কোরে তারা কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হেয়ে আছে। কাফের-মোশরেকদের প্রথম কাজ কি হওয়া উচিৎ- নামাজ পড়া, নাকি আগে এসলামে প্রবেশ করা?
যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ, ফোন: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১১৯১৩৬৭১১০- See more www.desherpotro.com
No comments:
Post a Comment