খুশু খুজু ও ধ্যান এক নয়
এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী
সালাহ্ চরিত্র গঠনের- প্রধানত দুর্ধর্ষ, অপরাজেয় যোদ্ধার চরিত্র
গঠনের প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া; এই আকীদা বদলে একে অন্যান্য ধর্মের
মত এবাদতের, উপাসনার শুধু আত্মিক উন্নতির
প্রক্রিয়া বোলে মনে করার ফলে আজ সেই যোদ্ধার চরিত্র গঠন
তো হয়ই না এমন কি সালাতের বাহ্যিক চেহারা পর্যন্ত বদলে গেছে।
আল্লাহর রসুলের বহুবারের দেওয়া তাগীদ- সাবধান বাণী-
তোমাদের সালাতের লাইন ধনুকের ছিলার মত সোজা কর,
নাহোলে আল্লাহ তোমাদের মুখ পেছন দিকে ঘুরিয়ে দেবেন, তাঁর
আদেশ- তোমাদের মেরুদণ্ড, ঘাড় সোজা কোরে সালাতে দাঁড়াও এ
সমস্ত কিছুই আজ ভুলে যাওয়া হোয়েছে। এসব হুকুম না মুসুল্লীদের
মনে আছে, না এমামদের মনে আছে। কাজেই ঐ সামরিক বাহিনীর
প্রশিক্ষণের সালাহ্ আজ সত্ত্বেও তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য
তারা হারিয়ে
নুব্জ, বাঁকা লাইনের; বাঁকা পিঠের মুসুল্লী ও এমামদের মরা সালাহ্।
আল্লাহ কোরআনে সুরা নেসার ১৪১-১৪২ নং আয়াতে মোনাফেকদের
সালাতের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন- মোনাফেকরা শৈথিল্যের
সাথে সালাতে দাঁড়ায়। আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘কুসালা’ যার
অর্থ সাহস হারিয়ে ফেলা, অলসতা, ঢিলা-ঢালা ভাবে। বর্ত্তমান
বিশ্বের মোসলেম নামের এ জাতির সালাতের
দিকে তাকালে কুসালা শব্দের অর্থ বুঝতে কারও কষ্ট হবে না। খুশু,
খুজুর নামে এ জাতি ‘কুসালা’ শব্দের যথাযথ প্রয়োগ কোরছে। সমস্ত
বিশ্বে বর্ত্তমানে এই সাহসহীন সালাহ্-ই চলছে। এই মরা প্রাণহীন
সালাতের পক্ষে বলা হয়- খুশু-খুজুর সাথে নামায পড়া উচিত। এই খুশু-
খুজু কী? বর্ত্তমানে বলা হয় সমস্ত কিছু থেকে মন
সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন কোরে আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট
করা হোচ্ছে খুশু-খুজু; অর্থাৎ এক কথায় ধ্যান করা।
সালাহরত অবস্থায় ধ্যান করা অসম্ভব
প্রশ্ন হোচ্ছে, সালাতে আল্লাহকে ধ্যান করাই যদি উদ্দেশ্য
হোয়ে থাকে তবে আল্লাহ সালাতের প্রক্রিয়া, নিয়ম-কানুন এমন
কোরে দিলেন কেন যাতে ধ্যান করা অসম্ভব। খুশু-খুজুু অর্থাৎ ধ্যান
করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য হোলে সালাতের নিয়ম হতো পাহাড়-
পর্বতের গুহায়, কিম্বা খানকা বা হুজরায় অথবা অন্ততপক্ষে কোন
নির্জন স্থানে ধীর-স্থিরভাবে একাকি বোসে চোখ বন্ধ কোরে মন
নিবিষ্ট কোরে আল্লাহর ধ্যান করা। সালাহ্ কি তাই? অবশ্যই নয়,
সালাহ্ এর ঠিক উলটো। বহু জনসমাবেশের মধ্যে যেয়ে সেখানে ধনুকের
ছিলার মত সোজা লাইন কোরে দাঁড়িয়ে সৈনিকের, যোদ্ধার মত
ঘাড়, মেরুদণ্ড লোহার রডের মত সোজা কোরে, এমামের তকবিরের
(আদেশের) অপেক্ষায় সতর্ক, তটস্থ, থাকা তারপর তকবিরের
সঙ্গে সঙ্গে সকলে একত্রে রুকু, সাজদায় যাওয়া, ওঠা, সালাম
দেয়া অর্থাৎ এমামের (নেতার) আদেশ পালন করা। সালাতের প্রায়
১১৪ টি নিয়ম-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রেখে, সেগুলি যথাযথভাবে পালন
কোরে ঐ খুশু-খুজুর সাথে অর্থাৎ ধ্যানের সাথে সালাহ্ সম্পাদন
করা যে অসম্ভব তা সাধারণ জ্ঞানেই (Common sense) বোঝা যায়।
অথচ ঐ নিয়ম-পদ্ধতি সঠিক ভাবে, যথাযথ ভাবে পালন
না কোরে যেমন-তেমন ভাবে সালাহ্ পড়লে তা আল্লাহ গ্রহণ
কোরবেন না। আল্লাহর রসুল বোলেছেন- তোমরা পূর্ণভাবে সালাহ্
কায়েম করো, কেননা আল্লাহ পূর্ণ ব্যতিত সালাহ্ কবুল করেন না [আবু
হোরায়রা (রাঃ) থেকে]। তিনি আরও বোলেছেন- তোমাদের
কাহারও সালাহ্ পূর্ণ (সঠিক) হবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ
যেভাবে আদেশ কোরেছেন ঠিক সেইভাবে কায়েম কোরবে (আবু
দাউদ)। আল্লাহ-রসুলের আদেশ মোতাবেক সমস্ত নিয়ম-কানুন যথাযথ
পালন কোরে অর্থাৎ পূর্ণ সঠিকভাবে সালাহ্ কায়েম
কোরলে বর্ত্তমানে মুসুল্লীরা খুশু-খুজু বোলতে যা বুঝেন তা অসম্ভব।
খুশু-খুজুর প্রকৃত উদ্দেশ্য হোচ্ছে- মো’মেন যখন সালাতে দাঁড়াবে তখন
তার মন পৃথিবীর সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে একাগ্র হবে সালাতে;
সে সমস্ত ক্ষণ সচেতন থাকবে যে সে মহামহীম আল্লাহর
সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আল্লাহর বিরাটত্ব ও তার নিজের
ক্ষুদ্রতা সম্বন্ধে সে থাকবে সর্বদা সচেতন, আর সেই সঙ্গে একাগ্র
হোয়ে থাকবে এমামের (নেতার) তকবিরের (আদেশের) প্রতি,
সালাহ্ সঠিকভাবে, নিখুঁতভাবে সম্পাদন কোরতে। এই হোল খুশু-খুজু।
সালাতে শরীর থাকবে দৃঢ়, হৃদয় থাকবে বিনীত
কিন্তু এই খুশু-খুজু অর্থাৎ একাগ্রতার মানে এই নয়
যে সালাতে দাঁড়াবে নুব্জ, সম্মুখে ঝুকে, মাথা নত কোরে। কারণ
যিনি আমাদের সালাহ্ শিখিয়েছেন আল্লাহর রসুল তিনি আদেশ
কোরেছেন- সালাতে দাঁড়াবে সোজা হোয়ে, মেরুদণ্ড, ঘাড়
সোজা শক্ত কোরে (সৈনিকের মত)। আল্লাহ কোর’আনে বোলছেন-
সালাহ্ কায়েম কর আনুগত্যের সাথে (কোরান- সুরা বাকারা ২৩৮),
আল্লাহ আবার বোলছেন সালাহ্ কায়েম কর বিনয়ের সাথে (কোরান-
সুরা মু’মিনুন ২)। তাঁর রসুল বোলছেন- সোজা, শক্ত, দৃঢ়
ভাবে সালাতে দাঁড়াও। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়
না কি যে দু’টি আদেশ বিপরীতমুখী? না, মোটেই বিপরীতমুখী নয়;
আল্লাহর ও তাঁর রসুলের কথা বিপরীত হোতে পারে না।
একটা মানসিক আর অন্যটা দৈহিক। সালাতে মন থাকবে বিনয়ী, নম্র,
অনুগত আর দেহ থাকবে লোহার রডের মত দৃঢ়, ঋজু; রুকুতে সাজদায়
যেয়েও পিঠ ঘাড় হাত, পা থাকবে সোজা, শক্ত; বিচলন,
গতি হবে দ্রুত। এই দুই মিলিয়ে হবে এসলামের প্রকৃত সালাহ্। মো’মেন
যখন সালাতে দাঁড়াবে তখন তার মনের অবস্থা হবে এই রকম
যে সে সর্বক্ষণ সচেতন থাকবে যে সে এই বিশাল বিরাট সৃষ্টির
স্রষ্টার রাব্বুল আলামিনের সামনে দাঁড়িয়েছে। কেন দাঁড়িয়েছে?
দাঁড়িয়েছে এই জন্য যে সে ঐ মহান স্রষ্টার খলিফা, প্রতিনিধি,
এবং খলিফা হিসাবে তার সর্বপ্রধান দায়িত্ব হোচ্ছে সমস্ত
পৃথিবীতে আল্লাহর তওহীদ ভিত্তিক দীন, জীবন-
ব্যবস্থা কার্যকরী কোরে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার-অবিচার,
অশান্তি আর রক্তপাত দূর কোরে শান্তি (এসলাম) প্রতিষ্ঠা করা। ঐ
বিশাল দায়িত্ব পূর্ণ কোরতে গেলে যে চরিত্র প্রয়োজন,
যে চরিত্রে সংকল্পের দৃঢ়তা, ঐক্য, শৃংখলা, আনুগত্যের ও হেজরতের
সমাহার সেই চরিত্র সৃষ্টির জন্য সে সালাতে দাঁড়িয়েছে। মনের
ভেতরে তার থাকবে বিনয়, সসম্মান-ভক্তি (যারা বিনয়-নম্র
নিজেদের সালাতে, সুরা মো’মেনুন- ২) আর শারীরিক
ভাবে সে দাঁড়াবে আল্লাহর মোজাহেদ (যোদ্ধা), সৈনিকের মত দৃঢ়,
লোহার রডের মত সোজা হোয়ে, তটস্থ হোয়ে থাকবে এমামের
আদেশের (তকবিরের) অপেক্ষায় এবং আদেশের
সঙ্গে সঙ্গে সকলে একত্রে হোয়ে একসঙ্গে দ্রুত সে আদেশ পালন
কোরবে (কানেতিন- অনুগত, সুরা বাকারা ২৩৮)। এই হোচ্ছে এসলামের
প্রকৃত সালাহ্। এসলামের সালাহ্ যে অন্যান্য ধর্মের ধ্যান নয় তার
প্রমাণ সালাতের পুরো প্রক্রিয়াটাই। তার মধ্যে বিশেষ কোরে এই
নিয়মটি যে সালাতে চোখ বন্ধ করা যাবে না। ধ্যান
করতে গেলে তো বটেই, এমন কি কোন বিষয়ে একটু
গভীরভাবে চিন্তা কোরতে গেলেও মানুষের চোখ বন্ধ হোয়ে আসে।
সেই চোখ বন্ধ করাকে নিষিদ্ধ করার মানে এই নয়
কি যে সালাতে ধ্যান করার যায়গা নেই, আছে সজাগতা, অতন্দ্র
সতর্কতা?
সালাহ্ ও ধ্যান পরস্পরের ঠিক বিপরীত
সালাহ্ শুধু যে ধ্যান নয়, প্রকৃতপক্ষে ধ্যানের ঠিক বিপরীত তার
পক্ষে কয়েকটি কারণ পেশ কোরছি। ১) সালাহ্ শব্দের আভিধানিক
অর্থ হোচ্ছে কোন বাঁকা-টেরা পদার্থ, জিনিসকে আগুনে পুড়িয়ে,
হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কোন কাজের জিনিস তৈরী করা; আর ধ্যান
হোচ্ছে নিষ্ক্রিয় হোয়ে গভীর চিন্তা করা। ২) সালাহ্ গতিশীল
(Dynamic); ধ্যান স্থিতিশীল, স্থবির (ঝঃধঃরপ)। ৩) তাকবিরের
(ঈড়সসধহফ) আনুগত্য কোরতে হয়; ধ্যানে ঈড়সসধহফ এর কোন স্থানই
নেই। ৪) দলবদ্ধভাবে কায়েম কোরতে হয়; ধ্যান একা একা কোরতে হয়।
৫) সালাতে চুড়ান্ত সচেতন ও সতর্ক অবস্থায় থাকতে (Alert) হয়;
ধ্যানে ঠিক বিপরীত অর্থাৎ নিথর, অচেতন হোয়ে যেতে হয়। ৬)
সালাহ্ ঠিক মত কায়েম কোরতে হোলে ১০০টির বেশী নিয়ম কানুন
মনে রেখে তা পালন কোরতে হয়; ধ্যানে এই জাতীয় কোন নিয়ম কানুন
নেই। ৭) সালাতে চোখ বন্ধ রাখা যাবে না; চোখ বন্ধ না কোরে ধ্যান
প্রায় অসম্ভব। ৮) সালাহ্ সক্রিয় (অপঃরাব); ধ্যান নিষ্ক্রিয়
(ওহধপঃরাব)। ৯) অন্ধকারে সালাহ হয় না, পক্ষান্তরে অন্ধকারই
ধ্যানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, ১০) সালাহ্ প্রচণ্ড গতিশীল, দুর্বার,
বিশ্বজয়ী, মৃত্যুভয়হীন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা তৈরী করে; ধ্যান দুনিয়া বিমুখ,
অন্তর্মুখী রিপুজয়ী সুফি দরবেশ তৈরী করে।
যদি কাউকে বলা হয় তুমি জনাকীর্ণ রাজপথে দৌঁড়াবে আর সেই
সঙ্গে ধ্যান কোরবে তাহোলে ব্যাপরটা কি রকম হবে? এটা যেমন
হাস্যকর তেমনি হাস্যকর কাউকে বলা যে তুমি সালাহ্ কায়েম
কোরবে এবং সেই সঙ্গে ধ্যানও কোরবে। কারণ দৌঁড়াবার সময় যেমন
চোখ খোলা রেখে, কোথায় পা ফেলছে তা দেখে, রাস্তার
গাড়ি ঘোড়া দেখে দৌঁড়াতে হবে, তখন ধ্যান অসম্ভব,
তেমনি সালাতের সময়ও সালাতের ১১৪টি নিয়ম কানুন মনে রেখে,
রাকাতের হিসাব রেখে সেগুলি পালন করার সাথে ধ্যান করাও
অসম্ভব। সুতরাং সালাহ্ ও ধ্যান বিপরীতমুখী দু’টি কাজ
যা একত্রে অসম্ভব। অথচ সালাহ্ সম্বন্ধে আকীদার
বিকৃতিতে একে অন্যান্য ধর্মের উপাসনার সাথে এক করার চেষ্টায় এই
অসম্ভব আকীদাই আজ মোসলেম হবার দাবীবার এই জনসংখ্যার
আকীদা। সালাহ্র উদ্দেশ্য কি, এ ব্যাপারে আকীদার বিকৃতির পর
থেকে গত কয়েক শতাব্দী থেকে মোসলেম নামের এই
জনসংখ্যাটি দৌঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে ধ্যান করার আপ্রাণ
চেষ্টা কোরছে এবং ফলে তাদের না দৌঁড় হোচ্ছে না ধ্যান
করা হোচ্ছে।
সালাহ ও ধ্যান পরস্পর বিপরীত এ কথার মানে এই নয় যে এর
মাধ্যমে সালাহর আধ্যাত্মিক দিক অস্বীকার করা হোচ্ছে।
যেখানে সারা জীবনের ধ্যান ও তাসাউফ সাধনা একজন সুফীকে জীবন
ত্যাগ কোরতে শেখায় না সেখানে সালাহ এমন এক আধ্যাত্মিক
প্রশিক্ষণ যা সালাহ কায়েমকারীকে এমন মৃত্যুভয়হীন দুর্ধর্ষ যোদ্ধায়
পরিণত করে যে, সে নির্দ্বীধায় আল্লাহর দুনিয়ায় আল্লাহর
কলেমা প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন ও সম্পদ বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত
হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বর্তমান মোসলেম বলে পরিচিত এ
জনগোষ্ঠীর পণ্ডিতগণ সালাহকে সামরিক প্রশিক্ষণ
হিসাবে তো মানেই না বরং তারা সালাহকে যে ধ্যান বোলে প্রচার
করে তারা সেই ধ্যানও করে না অর্থাৎ ওরা ট্রেনিংও করে না আবার
ধ্যানও করে না। তাদের কোনটাই হয় না। কারণ ধ্যান
করলে তো অসংখ্য রিপুজয়ী সুফী দরবেশ তৈরী হতো,
সেক্ষেত্রে অপরাধ, অন্যায়, অবিচার কিছুটা হলেও তো কমত। তাও
হয়নি। বরং তাদের নামায আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সুরা নিসার
১৪২-১৪৩ নং আয়াত যেখানে আল্লাহ বলছেন “নিশ্চয়ই
মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে;
বস্তুতঃ তিনি তাহাদিগকে উহার শাস্তি দেন আর যখন
তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যের সাথে দাাঁড়ায় কেবল লোক
দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তাহারা অল্পই স্মরণ করে;
তারা থাকে দোটানায় দোদুল্যমান, না এ দিকে, না ওদিকে। আল্লাহ
যাহাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি তাহার জন্য কখনও কোন পথ পাইবে না।”
যারা আল্লাহর রসুলের পদতলে বোসে এসলাম শিখেছিলেন এবং তাঁর
হাতে বায়াত নেবার পর বহু বছর তার সঙ্গে দিনে পাঁচবার সালাহ্
কায়েম কোরেছেন তাদের অন্যতম এবং দ্বিতীয় খলীফা ওমর (রাঃ)
বিন খাত্তাবের আকীদায় সালাহ্ কী ছিলো? একদিন মো’মেন
মোজাহেদদের সালাহ্ পর্যবেক্ষণ করার সময় তিনি দেখলেন একজন
ঠিকই দৃঢ় এবং সোজাভাবে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু তার
মাথাটা খানিকটা সামনের দিকে ঝোঁকানো। ওমর (রাঃ) ঐ
মোজাহিদের মাথা ধোরে উঁচু, সোজা কোরে দিলেন এবং তারপর
তার মাথায় মৃদু আঘাত কোরে বোললেন খুশু এখানে নয়, বোলে তার
বুকে আংগুল রেখে বোললেন- খুশু এখানে।
প্রকৃত তওহীদ ও জেহাদ অর্থাৎ মো’মেন হবার আল্লাহর
দেয়া সংজ্ঞা (সুরা হুজরাত- ১৫) থেকে বিচ্যুত, আল্লাহর অভিশপ্ত
(লা’নত প্রাপ্ত) এই জাতিকে সালাতের উদ্দেশ্য বোঝাবার চেষ্টায়
ইতিহাস (তা’রিখ) ও হাদীস থেকে দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রাঃ) বিন
খাত্তাবের উল্লেখ করা প্রয়োজন। তিনি চাবুক হাতে মুসুল্লীদের
লাইনের মধ্য দিয়ে হাটতেন এবং কাউকে ধনুকের ছিলার মত
সোজা লাইন থেকে বা অন্য কোন বিচ্যুতি দেখলে এবং চাবুক
দিয়ে আঘাত করতেন। যারা সালাহ্, তাদের ভাষায় নামাযের
উদ্দেশ্য ধ্যান করা মনে করেন (এবং এই আকীদাই মোসলেম দুনিয়ায়
আজ সর্বব্যাপী), তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- চাবুক
মেরে কি মানুষকে ধ্যান করানো যায়? ওমরের (রাঃ) কাজ কি সৈন্য
বাহিনীর প্যারেডের সার্জেন্ট মেজরের (ঝবৎলবধহঃ গধলড়ৎ) কাজের
সাথে মিলে না, যে প্যারেডের প্রশিক্ষণে ভুল
ত্র“টি হোলে গালি দেয়, পিটায়? আর প্রথম সারির আসহাব,
এসলামের দ্বিতীয় খলিফা জানতেন না সালাহ্ ধ্যান করার জন্য
নাকি সামরিক প্রশিক্ষণ? আল্লাহর লা’নতের ফলে এ জাতির সাধারণ জ্ঞানও পর্যন্ত লোপ পেয়েছে।
[যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫,
০১১৯১৩৬৭১১০]
No comments:
Post a Comment