হেযবুত তওহীদের এমাম
প্রদত্ত ভাষণ ধর্মের
অপব্যবহার ও স্বার্থের
রাজনীতি বন্ধ করতে
হবে -
হোসাইন মোহাম্মদ
সেলিম
আমরা পথহারা ছিলাম, গোমরাহ
ছিলাম। সত্য কী তা আমাদের জানা
ছিল না। যে মহামানবের মাধ্যমে
আমরা সত্যের সন্ধান পেলাম তিনি
আমাদের এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ
বায়াজীদ খান পন্নী। সারা বিশ্বের
ইসলামের নামে, গণতন্ত্রের নামে,
সমাজতন্ত্রের নামে হাজারো
সামাজিক আন্দোলন তৈরি হয়েছে
যেগুলোর বয়স ৬০ এর ঊর্ধ্বে, এমন কি
১৫০ বছর পুরনো সংগঠনও আছে। সে
তুলনায় হেযবুত তওহীদ আন্দোলন বেশি
দিনের নয়। একটি আন্দোলন যখন শুরু হয়
তখন এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা
থাকে, প্রশাসনের মনেও অনেক প্রশ্ন
থাকে। অনেকে বলে থাকেন, হেযবুত
তওহীদ আবার নতুন করে কী বলছে, এরা
নারী-পুরুষ একসাথে মিটিং করে,
একসাথে নামাজ পড়ে, ইসলামের কথা
বলে আবার গানও গায়, মানবতার কথা
বলে, ব্যাপারটা বুঝলাম না। আজ আমি
চেষ্টা করব হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে
কিছু মৌলিক ধারণা দেওয়ার জন্য।
তারপর তা স্বীকার করা না করা
আপনাদের বিবেকের কাছে সমর্পিত
হবে। আল্লাহ সকলের মনের খবর রাখেন,
তিনিই তার হিসাব গ্রহণ করবেন।
আমাদের প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা মানুষ,
আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। মানুষ সৃষ্টি
করার সময় আল্লাহ বলেন, আমি এরাদা
করেছি আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা
অর্থাৎ প্রতিনিধি সৃষ্টি করব (সুরা
বাকারা ৩০)। সুতরাং আমাদের পদবি
হচ্ছে আল্লাহর খলিফা। পৃথিবীতে
আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করাই আমার
এবাদত। তিনি বলেছেন জ্বীন ও
ইনসানকে তাঁর এবাদত করা ভিন্ন অন্য
কোনো উদ্দেশ্যে তিনি সৃষ্টি করেন নি
(সুরা যারিয়াত ৫৬)।
তাহলে এই পৃথিবীতে আমাদের এই
সুন্দরতম অবয়ব নিয়ে আগমনের উদ্দেশ্য
কী? আল্লাহ গরু-ছাগল-বৃক্ষরাজী,
মৎস্যকুল, আসমান জমিন সমস্ত কিছু
সৃষ্টি করেছেন কুন শব্দ দ্বারা,
পক্ষান্তরে মানুষ সৃষ্টি করেছেন নিজ
হতে। আল্লাহ তাঁর নিজের রূহ মানুষের
মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন। সুতরাং
সর্ববিচারে মানুষ এক অনন্য অসাধারণ
সৃষ্টি। আল্লাহর পবিত্র রূহ ধারণ করে
মানুষ যদি পশুর মতো জীবন যাপন করে,
খায়, বংশবিস্তার করে, মরে যায় তবে
তার মানবজীবনই ব্যর্থ। মানুষ অন্য
সৃষ্টির মতো নয়। তার দেহ আছে,
আত্মাও আছে; ইহকাল আছে, পরকালও
আছে। পশুর পরকাল নেই। কাজেই
মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি কাজ হতে
হবে দুই জীবনকে সামনে রেখে। আল্লাহ
বলেছেন, আমি অনর্থক, খেলাচ্ছলে,
সময় কাটানোর জন্য কিছু সৃষ্টি করি নি।
আমাদের চারপাশে, এই সৃষ্টিজগতে
এমন কিছু কি আছে যা আল্লাহ অনর্থক
সৃষ্টি করেছেন? নেই। তাহলে আমি
মানুষ তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, আমাকে কি
তিনি অনর্থক সৃষ্টি করেছেন? না।
আমাদের জীবনও তাই অর্থপূর্ণ হতে
হবে। আমারা সালাতের পরে দোয়া
করি, ‘হে আমাদের রব। আমাদের
দুনিয়ার জীবনকে সুন্দর ও মঙ্গলময় করো
এবং আমাদের আখেরাতের জীবনকেও
সুন্দর ও মঙ্গলময় করো।’ যার দুনিয়ার
জীবন সুন্দর নয়, তার পরকালও সুন্দর হবে
না। দুই জীবনকে আলাদা করার সুযোগ
নাই ঠিক যেভাবে দেহ আত্মা আলাদা
করার সুযোগ নেই।
মাননীয় এমামুয্যামান এ উপমহাদেশের
ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান।
সুলতানী আমল, মোগল আমল, ব্রিটিশ
আমল, পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশের
স্বাধীনতা উত্তরযুগ- এই সুদীর্ঘ সময়ে এ
পরিবারের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।
এমামুয্যামানের পূর্ব পুরুষ সুলতান দাউদ
খান কররানি ছিলেন বাংলা-বিহার-
উড়িষ্যা তথা বৃহত্তর গৌড়ের শেষ
স্বাধীন সুলতান। তিনি এদেশের
স্বাধীনতা রক্ষার জন্য রাজমহলের
যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন। আরেক মহান
ব্যক্তি দানবীর মোহাম্মদ ওয়াজেদ
আলী খান পন্নী ওরফে চান মিয়া
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পেছনে
নিজের জমিদারি নিঃশেষ করে
দিয়েছিলেন, জেলও খেটেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা
নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন
এমামুয্যামানের মায়ের নানা, নওয়াব
স্যার সলিমুল্লাহও ছিলেন তাঁদের
নিকটাত্মীয়। পাকিস্তানের সাবেক
প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বোগরা
ছিলেন এমামুয্যামানের খালু। এভাবে
বলতে গেলে অনেক। এক কথায় এদেশের
শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতিতে পন্নী
পরিবারের বিরাট অবদান রয়েছে।
কিন্তু সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে
ইতিহাস জানতে হবে। জানলে
এমামুয্যামানের বিরুদ্ধে কোনো
অপপ্রচার জায়গা পাবে না।
এই যে আমরা বিশ্বের বর্তমানে ৭০০
কোটি মানুষ। এই বিশ্বের অবস্থা কী?
গোটা বিশ্ব আজ অন্যায় অশান্তিতে
ভরপুর। এ থেকে মানুষকে রক্ষার চেষ্টা
কম হচ্ছে না। তথাপি দুইটি বিশ্বযুদ্ধে
১৪ কোটি মানুষ নিহত হলো, আহত-পঙ্গু,
উদ্বাস্তুর কোনো হিসাব নেই। তারপর
থেকে আরো পাঁচ কোটি মানুষ বিভিন্ন
যুদ্ধে নিহত হয়েছে। আর সামাজিক
অন্যায়-অশান্তি এমন প্রকট আকার
নিয়েছে যা অতীতে কখনো হয় নি।
বাল্যবয়সেই এমামুয্যামান এর কারণ
ভাবতে লাগলেন। আল্লাহ তাঁকে ধীরে
ধীরে সেই প্রশ্নের জবাব দান করলেন।
এখানে একটি কথা বলতে হয়, আমরা
যখন বলি আল্লাহ সেই জ্ঞান
এমামুয্যামানকে দান করলেন, তখন
প্রশ্ন তোলা হয় – ‘কী? উনাকে দান
করলেন? উনি কি নবী-রসুল নাকি?’ অথচ
আমি যদি বলি আল্লাহ আমাকে সন্তান
দান করেছেন, তাকে সম্পদ দান
করেছেন, তখন কিন্তু কেউ আপত্তি করে
না। তাহলে জ্ঞান কে দান করেন?
অবশ্যই আল্লাহ। এমামুয্যামান বললেন,
বিশ্বে ১৬০ কোটি মুসলিম, লক্ষ-লক্ষ
মসজিদ, আলেম-ওলামা, কামেল, পীর
কিছুরই কমতি নেই। পৃথিবীর ৫৫ টি
রাষ্ট্রে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, বিপুল
পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ তাদের হাতে।
বড় বড় সমুদ্র বন্দর তাদের অধীন। তবু
কেন তাদের বিশ্বজোড়া এই অশান্তি,
এই দুর্গতি। আল্লাহ কি এ জাতিকে
বলেন নি তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি?
তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে
মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ
কাজে বাধা দান করার জন্য? এই কী
জাতির শ্রেষ্ঠত্বের নমুনা? তোমরা
অন্যকে কী শান্তি দেবে, তোমরা
নিজেরাই আছ ঘোর অশান্তির মধ্যে।
এর কারণ তোমরা ইসলামের ভিত্তি
তওহীদ অর্থাৎ কলেমা – লা এলাহা
ইল্লাল্লাহ থেকেই সরে গেছ। এখন
তোমাদের নামাজ রোযাসহ সব আমল
অর্থহীন হয়ে গেছে।
আজকের এই ১৬০ কোটি মুসলিম
দাবিদার আর আল্লাহর রসুলের সৃষ্টি
করে যাওয়া উম্মতে মোহাম্মদী কি এক
জাতি? না। আল্লাহর রসুল রেখে
গেলেন একটি মহাজাতি যারা
শিক্ষায়-দীক্ষায়, জ্ঞানে বিজ্ঞানে,
নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে,
সামরিক শক্তিতে সর্বদিকে তারা
শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করেছিল। এমন
নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে,
একজন নারী মূল্যবান অলঙ্কার পরিহিত
অবস্থায় শত শত মাইল পথ অতিক্রম
করতে পারত। সম্পদের এমন প্রাচুর্য
এসেছিল যে উটের পিঠে খাদ্য ও অর্থ
বোঝাই করে মানুষ পথে পথে ঘুরত,
কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো লোক পাওয়া
যেত না। আল্লাহর রসুল চলে যাওয়ার
৬০/৭০ বছর পরে জাতি সংগ্রাম ত্যাগ
করল, প্রকৃত ইসলাম ত্যাগ করল।
পরিণামে আল্লাহর শাস্তি এ জাতির
জন্য নির্ধারিত হয়ে গেল। আল্লাহ এক
সময় জাতিকে কঠিন শাস্তি দিয়ে
ইউরোপের জাতিগুলোর গোলামে
পরিণত করে দিলেন। আমরাও ৩০০ বছর
আগে ব্রিটিশদের পদানত হয়ে গেলাম।
তারা শাসনক্ষমতা পেয়েই এক শয়তানি
বুদ্ধি আঁটল। তারা চাইল শিক্ষা
ব্যবস্থার মাধ্যমে এ জাতিটিকে একটি
গোলাম মানসিকতাসম্পন্ন জাতিতে
পরিণত করতে। তারা দু’টি শিক্ষা
ব্যবস্থা চালু করল। মাদ্রাসা শিক্ষা ও
সাধারণ শিক্ষা। মাদ্রাসা শিক্ষা
ব্যবস্থায় কী পড়ানো হবে তার
সিলেবাস খ্রিষ্টান পণ্ডিতরাই
নির্ধারণ করলেন। ২৬ জন খ্রিষ্টান
প্রিন্সিপাল ১৪৬ বছর ধরে কলকাতা
আলিয়া মাদ্রাসায় এ জাতিকে ইসলাম
শিক্ষা দিল। সেখানে কিন্তু মানবতা,
ঐক্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
করার প্রেরণা শিক্ষা দেওয়া হয় নাই।
সেখানে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে
ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র
বিষয় নিয়ে খুঁটিনাটি মাসলা-
মাসায়েলের বিশ্লেষণ, বাহাস-
তর্কাতকি, যেন এই মুসলিম
জনসংখ্যাটি কোনোভাবেই আর
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে না
পারে। আজও একটি কথা আমরা প্রায়ই
শুনে থাকি যে, দুইজন আলেম এক সাথে
থাকতে পারে না। এটা কোন ইসলাম?
ব্রিটিশদের তৈরি ইসলাম শিখে
অহংকারে তাদের মাটিতে পা পড়ে
না, যেন ইসলামের ঠিকাদারি তারা
নিয়ে নিয়েছেন। দুঃখজনক বাস্তবতা
হলো সাধারণ মানুষকে জীবন-
জীবিকার বাইরে কিছুই জানতে দেওয়া
হয় না। তারা জানেন না ইসলামের
ইতিহাস, জানেন না নিজেদের
ইতিহাস। জানবে কী করে? তাদেরকে
তো কেবল একটি ভোটদানের শিক্ষা
দেওয়া হয়েছে। আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা
বলছেন যে, তোমার বাচ্চা হয়েছে-
আমাকে ডাকো মিলাদ, আকিকায়,
মোসলমানিতে দোয়া করে দেব, বাবা
মারা গেছে- আমাকে ডাকো কোর’আন
খানি, জানাজা পড়ে দেব, বিয়ে করতে
চাও- বিয়ে পড়িয়ে দেব। সবই টাকার
বিনিময়ে, সওয়াবের বিনিময়ে নয়।
কিন্তু আমাদের রসুলের জাতি এমন ছিল
না। তাদের অধিকাংশই ১০০০ পর্যন্ত
গুণতেও পারতো না, কিন্তু বিশ্বের বুকে
তারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ জাতি। সেই
ইসলাম আজকে কোথায়? আমাদের ১৬
কোটি বাঙালির ধর্মবিশ্বাসকে বার
বার এই ধর্মব্যবসায়ীরা হাইজ্যাক করে
জাতির অকল্যাণে ব্যবহার করেছে।
এখন আল্লাহর সিদ্ধান্ত এসে গেছে। এই
জমিন আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এখানে
কাউকে অশান্তি সৃষ্টি করতে দেওয়া
হবে না। এখানে থাকবে শুধু শান্তি।
আমাদেরকে অনেকে বলেন, আপনার
সরকারের সঙ্গে কাজ করেন কেন?
তাদের উদ্দেশ্য বলছি, প্রশ্নের আগে
চিন্তা করতে হয় যে প্রশ্নটি জাতির
কল্যাণের জন্য না অকল্যাণের জন্য
করা হচ্ছে। সরকার একটি জাতির
মস্তকের মত। একটি জাতিকে যখন সকল
অন্যায়, জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতি,
ধর্মব্যবসা ইত্যাদির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ
করার প্রয়োজন পড়েছে তখন সেটা কি
কোনো আন্দোলনের কাজ, নাকি
জাতীয় কাজ? সেটা অবশ্যই সরকারেরই
কাজ। তাই আমরা সরকারকে বলেছি,
যে যা-ই বলুক, বাস্তবতা হচ্ছে
আপানারা এখন ক্ষমতায়। আপনাদের
কাছে আছে শক্তি, অস্ত্র, আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনী, অর্থ, আইন। যে অপরাধের
শাস্তি ছিল চার বছর, সেটা এখন চৌদ্দ
বছর। অনেকে বলেন আইন দুর্বল, কিন্তু
আমি মনে করি, আইন যথেষ্ট
শক্তিশালী আছে। এখন অন্যদিকে
চিন্তা করা দরকার। সেটা হচ্ছে শুধু
আইন, শক্তি, অর্থ দিয়ে হবে না।
লাগবে একটি নির্ভুল আদর্শ যেটা
দিয়ে মানুষের আত্মার পরিবর্তন,
মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে
হবে। বর্তমানে নিরাপত্তা বিশ্লেষক,
সমাজ-বিশেষজ্ঞ মিডিয়া সবাই
বলছেন সোশাল অ্যাওয়ারনেস,
গণসচেতনতা। কিছুদিন আগে আইজিপি
সাহেব বললেন, ‘ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হাজার হাজার
মানুষের মধ্যে কয়েকটা মেয়ের
শ্লীলতাহানী করা হলো, মানুষ কেন
অপরাধীদেরকে পাকড়াও করল না।
অপরাধীকে গ্রেফতার করার অধিকার
সব নাগরিকের আছে।’ আমাদের কথা
এখানেই। জনগণ যে প্রতিরোধ করবে,
কেন করবে সেটা জনগণ জানে না,
সেটা তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। এই
শিক্ষা কোথায় আছে? মাদ্রাসাতেও
নেই, স্কুল-কলেজেও নেই। সেটা
আমাদের কাছে আছে। মানুষ
ধর্মবিশ্বাসী। তাদেরকে ধর্মের
দৃষ্টিকোন থেকে শিক্ষা দিতে হবে।
মানুষ সামাজিক জীব। তাকে
সামাজিক দায়িত্ব কী শেখাতে হবে।
তাদেরকে বোঝাতে হবে যে, তার আসল
এবদত কী, তার প্রকৃত ধর্ম কি,
সামাজিক দায়বদ্ধতা কী? মানুষকে
যদি ধর্ম ও দেশপ্রেম দ্বারা উদ্বুদ্ধ
করা যায়, তবে তারা অপরাধ প্রতিহত
করবে। শুধু শক্তি দিয়ে এটা করা সম্ভব
নয়। আগেই বলেছি দেহ ও আত্মা দুটির
সমন্বয়ে মানুষ। শক্তি দিয়ে আত্মার
পরিবর্তন হয় না, সেখানে আদর্শ লাগে।
আমরা সাংসদবৃন্দ, রাজনৈতিক
নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক,
প্রশাসন সবার সামনে বিষয়টি উত্থাপন
করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, তারা
অনেকেই বুঝেছেন, ইনশা’আল্লাহ
অন্যরাও বুঝবেন।
একটি উদাহরণ দেব: জঙ্গিবাদ। আমি এ
বিষয়ে একটি বই লিখেছি নাম
‘ধর্মব্যবসায়ী ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের
যোগফল জঙ্গিবাদ: উত্তরণের একমাত্র
পথ’। এতে আমি নিজে থেকে কোনো
কথা বলি নি, দলিল যা পেয়েছি সে
আলোকেই প্রমাণ করেছি যে,
জঙ্গিবাদ ইসলামের সৃষ্টি নয়, এটি
একটি সুবৃহৎ পশ্চিমা ষড়যন্ত্র। এই
পৃথিবীকে তারা জাহান্নামের কুণ্ডলি
বানিয়ে রেখেছে। কম্যুনিজমের পতনের
পর তারা প্রতিপক্ষ হিসাবে ইসলামকে
টার্গেট করেছে। আমাদের আলেমরা
তা বুঝতে ব্যর্থ হয়ে এ জাতির
তরুণদেরকে জঙ্গিবাদের দিকেই উসকে
দিচ্ছেন। পশ্চিমারা পুঁজিবাদী
পরাশক্তিগুলো বুঝতে পেরেছে যে,
রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের পতনের পর
তাদের সামনে থ্রেট ইসলাম যার বিরাট
একটি আদর্শ আছে, অবিকৃত ধর্মগ্রন্থ
আছে, নবীর প্রতি প্রেম আছে, আদর্শ
পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আছে, অতীত
ইতিহাস আছে। সুতরাং তাদের উত্থান
রুখে দিতে হবে। এভাবে তারা জঙ্গি
ইস্যু সৃষ্টি করে একের পর এক দেশ ইরাক,
আফগানিস্তান, সিরিয়া, লেবানন,
ইয়ামেন দখল করে নিয়েছে। এভাবে
চলবে একটার পর একটা। বাংলাদেশও
এর সঙ্গে কিভাবে সংযুক্ত তা
আমাদেরকে বুঝতে হবে। আমাদের তো
দেশ দুনিয়ার কোনো খবর নেই, খেতে
কাজ করব, চাকরি-বাকরি করব,
মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ব আর
জান্নাতে চলে যাবো। কিন্তু এ ধারণা
সঠিক নয়। পাঁচটি বিষয় নিয়ে অবশ্যই
আমাদেরকে ভাবতে হবে। আমার
ব্যক্তিজীবন, আমার পরিবার, আমার
সমাজ, আমার দেশ, আমার পৃথিবী।
স্বার্থপরের মতো আমরা বসে থাকতে
পারি না। কারণ স্বার্থপরের কোনো
সমাজ নেই, স্বার্থপরের নামাজ নেই,
স্বার্থপরের জান্নাত নেই। আমরা কেন
এমন স্বার্থপর হলাম? এটা আমাদের
শিক্ষাব্যবস্থা বানিয়েছে। তাই
আমাদের সামনে অপরাধ হলে
নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু ১৬
কোটি মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া
আদৌ পুলিশের পক্ষে সম্ভব কি না?
কখনোই সম্ভব নয়। মানুষের প্রতি,
সমাজের প্রতি প্রতিটি মানুষের
দায়বদ্ধতাই সমাজের নিরাপত্তার প্রথম
শর্ত। সুতারাং আমাদেরকে বুঝতে হবে
আমাদের সামাজিক কর্তব্য কি?
আমাদের প্রকৃত ধর্ম কী?
পবিত্র কোর’আনে ইসলামকে বলা
হয়েছে দীনুল হক বা সত্য জীবনব্যবস্থা
অর্থাৎ যে সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত হলে
সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। যে সময়ে
হবে সেই যুগটিই হচ্ছে সত্যযুগ। ধর্ম হলো
কোনো বস্তুর অভ্যন্তরের শক্তি যা সে
ধারণ করে নিজের বৈশিষ্ট্যে অটল
থাকে। চুম্বক যদি আকর্ষণ শক্তি হারায়
তাহলে সেটি আর চুম্বক থাকে না।
তাহলে মানুষের ধর্ম কী? মানুষের ধর্ম
হচ্ছে মানবতা। অন্যের দুঃখ দেখে সে
হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করবে এবং তার কষ্ট
দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করবে।
জেহাদ শব্দের অর্থই আপ্রাণ প্রচেষ্টা।
রাতের অন্ধকারে বাসের মধ্যে বোমা
মারা জেহাদ নয়। জেহাদ থাকতেই হবে,
কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ না
থাকলে সেই সমাজ পশুর সমাজে পরিণত
হয়। আমরা বলি, নামাজ রোযা সব
মো’মেনের জন্য। আল্লাহ বলেছেন,
মানুষ দুই প্রকার, হয় কাফের নয় মো’মেন
(সুরা তাগাবুন ২)। এই নামাজ কার জন্য?
মো’মেনের জন্য। আল্লাহ গোনাহ ক্ষমা
করবেন কার? মো’মেনের। মো’মেন কে?
আল্লাহ বলছেন, মো’মেন শুধু তারাই
যারা আল্লাহ রসুলের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করে, আর তা থেকে বিচ্যুত হয়
না এবং আল্লাহর রাস্তায় জীবন ও
সম্পদ দিয়ে সংগ্রাম করে (হুজরাত ১৫)।
আল্লাহ রসুলের প্রতি ঈমান মানেই
সত্যের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং
আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম মানেই
মানুষের শান্তি ও কল্যাণের জন্য
সংগ্রাম করা। এই সমস্ত কিছুর ফলাফল
শান্তি। আমরা প্রকৃতপক্ষে ধার্মিক
হতে চাই, তবে লেবাসধারী ধামির্ক
নয়। আমরা লেবসের বিরুদ্ধে না,
আল্লাহর রসুলের প্রতিটি বিষয়
কল্যাণকর, যে তা অনুকরণ করবে কল্যাণ
প্রাপ্ত হবে। কিন্তু মূল কাজ বাদ দিয়ে
লেবাস ধরে থাকলে কোনো লাভ হবে
না। মানুষকে যদি তার প্রকৃত এবাদত কী
তা বোঝানো হয় তাহলে পুলিশ দিয়ে
মানুষকে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে
না। একটি উদাহরণ দিই: ধরুন আপনি
তাহাজ্জুদ পড়া শুরু করলেন। হঠাৎ পাশে
থেকেই আগুন আগুন চিৎকার ভেসে এল।
আপনি কী করবেন? নিশ্চয়ই ছুটে যাবে
আগুন নেভাতে। যদি যান তাহলেই
আপনি প্রকৃত এবাদত করলেন। নিশ্চয়ই
তখন জিজ্ঞেস করবেন না যে, যার
বাড়িতে আগুন লেগেছে সে হিন্দু না
খ্রিষ্টান না মুসলমান? আমাদের রসুল ও
সাহাবীরা এই লক্ষ্যেই সংগ্রাম
করেছেন। তারা সাম্রাজ্য বিস্তার
করতে দুনিয়ার বুকে ছড়িয়ে পড়েন নাই।
কিন্তু প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর পরে
উমাইয়া, ফাতেমি, আব্বাসীয়, মোগল,
পাঠান জাতিগুলো যারা সাম্রাজ্য
বিস্তারের যুদ্ধ করেছে, সেটাকে
আমরা ইসলাম বলি না। ১০০ বছর মধ্যেই
হারিয়ে গেছে।
১৯৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি
অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ
হয়ে যুদ্ধ করে এ ভূখণ্ড স্বাধীন
করেছিল। তারপর থেকে গত ৪৪ বছরে
একটি মুহূর্তের মধ্যে জাতিটিকে
ঐক্যবদ্ধ হতে দেয় নাই পশ্চিমা ষড়যন্ত্র
আর ধর্ম ও পশ্চিমা মতবাদ ভিত্তিক
অপরাজনীতি। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে,
ঐক্য সর্বদা অনৈক্যের উপর বিজয়ী হয়।
১০০ জন ঐক্যহীন লোক ১০ জন ঐক্যবদ্ধ
লোকের বিরুদ্ধে পরাজিত হয়। আমরা এ
সত্যটিই মানুষের কাছে তুলে ধরছি।
একজন মানুষ হিসাবে, আল্লাহয়
বিশ্বাসী হিসাবে সমাজের প্রতি
আমার কী কর্তব্য রয়েছে, তা মনে
করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা দ্বারে
দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা
কোনোদিনও আপনাদের কাছে ভোট
চাইতে আসব না। আমরা মনে করি এটা
আমাদের এবাদত। জাতির ঘোর সংকটে
আমি যদি স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে
থাকি, তাহলে আমার দুনিয়াও শেষ,
পরকালও শেষ।
এই দেশে আমি বড় হয়েছি, এখানে আমি
সেজদা করি, এখানের উৎপন্ন ফল ও
ফসলে আমি পুষ্ট হয়েছি। সুতরাং এই
দেশের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে।
আমার এই দেশটি কোনোভাবে যদি
সিরিয়া, ইয়ামেন হয়ে যায় তাহলে
মসজিদ মাদ্রাসা কিছু থাকবে না। দুটি
ভাবে দেশ ধ্বংস হতে পারে,
অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বহিঃশত্র“র
আক্রমণ। আমাদের এখানে দুটোর
সম্ভবনাই প্রবল। এদেশের ৯০% মানুষ
মুসলমান যাদেরকে পশ্চিমা বিশ্ব
সন্ত্রাসী বলে প্রচার করে থাকে।
গুটিকয়েক ধর্মব্যবসায়ীর কারণে
পাহাড়ের মতো বিশাল, আকাশের মতো
উদার ইসলামকে আজ গালাগালি কারা
হচ্ছে। আমাদের ধর্মবিশ্বাস, আমদের
মুসলিম পরিচয় আমাদের জন্য কাল হয়ে
হয়ে গেছে। অথচ আমাদের এই
ধর্মবিশ্বাস আমাদের শক্তি। এর দ্বারা
অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা একটি
ইস্পাতকঠিন জাতি গঠন করতে পারি।
ষোলকোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে পৃথিবীর
কোনো পরাশক্তি থাকবে না আমাদের
দিকে চোখ তুলে তাকায়। আমাদের
খনিজ সম্পদ আছে, উর্বর মাটি আছে।
আমাদের কারো কাছে মাথা নত করতে
হবে না। এর জন্য মাত্র একটি কথা
আমাদের মানতে হবে, আমরা আর
রাজনৈতিক হানাহানি করব না।
ঐক্যের মধ্যেই বরকত, সমৃদ্ধি, সম্পদ
নিহিত থাকে।
আলেম সাহেবদের প্রতি কথা হচ্ছে,
আপনাদের মত অগাধ জ্ঞান আমাদের
নেই। আপনারা অনেক আমল করেন যা
আমরা করি না। কিন্তু মনে রাখবেন, যে
আলেমের জ্ঞান মানবতার কল্যাণে
কাজে লাগে না, সেই আলেমকে
আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।
আপনারা নির্দোষ সাধারণ
মানুষগুলোকে দেশ ও জাতির কল্যাণে
কাজ করার জন্য ধর্মবিশ্বাস দ্বারা
দিয়ে উদ্বুদ্ধ করুন, যেন তারা নিজেদের
জীবন ও সম্পদ মানুষের কল্যাণে ব্যয়
করে। তাহলেই তারা প্রকৃত মানুষ হবে।
আল্লাহ বলেছেন, মতভেদ কোরো না।
আজ মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া সুন্নীর লড়াইয়ে
লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হচ্ছে। দুই পক্ষই
মসজিদে যাচ্ছে, দু পক্ষেরই দাড়ি
আছে। তাদের কে জান্নাতে যাবে?
আমাদের কথা হচ্ছে, কেউ জান্নাতে
যাবে না। মানবতা যখন বিপন্ন তখন
যারা ব্যক্তিগত আমল নিয়ে ব্যস্ত
থাকে তাদের সেই রোযা রাখা হবে
উপবাস আর তাহাজ্জুদ হবে ঘুম নষ্ট করা।
আর রাজনীতিক ভাইয়েরা, রাজনীতি
করতে হবে মানবতার কল্যাণে।
আপনাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন,
সুতরাং নিজের ঘরে খাবেন, নিজের
টাকায় গাড়ির তেল কিনে ব্যবহার
করবেন, নিজের পকেট থেকে ফোনবিল
দিবেন। জনগণের সম্পদ লুট করে খাওয়ার
রাজনীতি জাতিকে নিঃশেষ করে
দিয়েছে, এ সিস্টেমকে ধরে রেখে
কোনো উপায়েই শান্তি আসবে না। এটা
দেশপ্রেমের ব্যবসা, জনসেবার ব্যবসা।
এই রাজনীতি মানুষকে মানুষ না
বানিয়ে কোটি কোটি ভোটারে পরিণত
করেছে।
সুতরাং হেযবুত তওহীদ কী বলতে চায়
তা সঠিকভাবে জানুন। এমামুয্যামানের
বিরুদ্ধে বহু অপপ্রচার চালানো হয়েছে
যে পন্নী সাহেব খ্রিষ্টান হয়ে গেছেন
ইত্যাদি। একটি জাতির ভুল ভ্রান্তি
ধরিয়ে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরে
আসার আহ্বান করার অর্থ কি খ্রিষ্টান
হওয়া? কয়েক বছর আগে বিশ্বজুড়ে যখন
জঙ্গিবাদের উত্থান হলো তখন হেযবুত
তওহীদের বিরুদ্ধেও এক শ্রেণির
গণমাধ্যম অপপ্রচার শুরু করল যে আরবী
নাম হেযবুত তওহীদ, সুতরাং এটা একটি
জঙ্গি সংগঠন। এখন অবশ্য আর এসব
অপপ্রচার করে লাভ হবে না, মানুষ সত্য
জানতে পারছে।
শেষ আবেদন হচ্ছে, আপনারা অন্যায়ের
বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। আসুন আমরা
একে অপরের সহযোগিতা করি, অন্যের
সমালোচনা রেখে নিজের ত্র“টিগুলো
একটু দেখি। সরকার চাচ্ছে দেশে
শান্তিরক্ষা করতে, কিন্তু একটি আদর্শ
লাগবে। সেটা মাদ্রাসায় নেই, ফলেই
তার প্রমাণ হয়ে গেছে। এখন আমরা
নিঃস্বার্থভাবে ভূমিকা রাখতে চাই।
আমাদের ভুল ত্র“টি থাকতে পারে,
সেটা আমাদেরকে ধরিয়ে দিন, আমরা
সংশোধিত হতে প্রস্তুত। আমরা মনে
করি, রসুলাল্লাহর সংস্পর্শে আইয়ামে
জাহেলিয়াতের খারাপ মানুষগুলোও
সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিল, এখনও
সঠিক আদর্শ পেলে এদেশের ঐক্যহীন,
দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী, দুশ্চরিত্র
মানুষগুলোও সোনার মানুষে পরিণত
হবে। ইদানিং দেখছি, কেউ ইসলামের
বিরুদ্ধে কিছু বললেই তাকে হত্যা করে
ফেলা হয়। এটা ভুল পথ। এ সহিংসতার
পথ পরিহার করুন। ইসলামকে
বৈজ্ঞানিক সূত্র দিয়ে, যুক্তি দিয়ে
উপস্থাপন করুন, সমালোচকদের যুক্তির
জবাব দিন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করুন,
তাহলেই অপপ্রচারকারীদের মুখ বন্ধ
হয়ে যাবে।
হে আল্লাহ! আমাদের ঈমানকে
হেফাজত করো। আমাদের এই প্রিয়
জন্মভূমি যেন আক্রান্ত না হয়, আমাদের
দেশের মানুষ যেন সুখে থাকে, শন্তিতে
থাকে সে লক্ষ্যে আমাদেরকে জীবন-
সম্পদ কোরবান করে সংগ্রাম করার
তওফিক দান করো। আমীন।
No comments:
Post a Comment