আরাকান –
এ যেন আরেক বসনিয়া!
................ (সংগ্রহকৃত)
লন্ডনের ৩০ মাইল উত্তরের লুটন শহরে অনুষ্ঠিত এক সভায় (যেখানে আমাকে রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে বক্তৃতা দেবার জন্যে আমন্ত্রিত করা হয়েছিল) জনৈক ব্রিটিশ এমপি রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থাকে ৯০ দশকের প্রাকভাগে বসনীয় মুসলিমদের ভাগ্যে যা ঘটেছিল তার সাথে তুলনা করেছিলেন। উনি ঠিকই বলেছেন।
ড. শুয়ে লু মং ওরফে শাহনেওয়াজ খান তার লেখা The Price of Silence: Muslim-Buddhist War of Bangladesh and Myanmar – a Social Darwinist’s Analysis বইতে জানাচ্ছেন যে আরাকান রাজ্যের চারটি জেলাতে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধদের সংখ্যিক অনুপাত প্রায় সমানই ছিল – কিন্তু তেশরা জুন, ২০১২ থেকে শুরু হওয়া রাখাইন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের নির্মূলাভিযানের কল্যাণে সেসব মুসলিম জনবসতি এখন প্রায় জনশূণ্য।
জাতিসংঘ সহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গাদের ব্যপারে সঠিকই বলেছেন – রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচাইতে বড় নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। তাদের গোত্র ও ধর্মের জন্যে তারা মিয়ানমারের সংখ্যা গরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় দ্বারা গণহত্যার বলি হচ্ছেন।
জাতিসংঘ-সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতামত অনুসারে রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে অসহায় ও নির্যাতিত জাতি।
রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থাকে ঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য গণহত্যা ছাড়া আর কোনো শব্দ আছে বলে মনে হয়না। এক্ষেত্রে গণহত্যা শব্দের ব্যবহারে কারো অবাক হবার কিছু নেই, কেননা মিরিয়াম ওয়েবস্টার অভিধানে গণহত্যাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, “ইচ্ছাপ্রনোদিত ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কোনো নৃ, জাতি কিংবা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নির্মূল অভিযান [the deliberate and systematic destruction of a racial, political or cultural group]।" সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞরা বলছেন, হোক সার্বিক কিংবা আংশিক – নৃ, জাতি, ধর্ম কিংবা রাষ্ট্রিক গোষ্ঠীর নিয়মতান্ত্রিক নির্মূলাভিযান থাকলেই গণহত্যা’র সংজ্ঞা প্রাসঙ্গিকই থাকে। আর যেকোনো সংজ্ঞা অনুসারেই আরাকানের রোহিঙ্গারা নৃ, জাতি ও ধার্মিক আঙ্গিকে সংখ্যাগুরু রাখাইন বৌদ্ধ বর্মীদের চাইতে পুরোপুরি আলাদা।
ড. ড্যানিয়েল জোনাহ গোল্ডহ্যাগেন তার লেখা Worse than War বইতে পাঁচ ধরণের উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন, সেগুলো হচ্ছে –পরিবর্তন, নিবর্তন, বিতাড়ন, জন্মনিরোধ ও সর্বাংশে নির্মূল। এখানে পরিবর্তন বলতে বোঝানো হয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি-সহ সকল মৌলিক পরিচিতিগুলোকে ধীরে ধীরে পাল্টে দেয়া। আগে আমি যেভাবে বললাম, যদিও আরাকানে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস স্মরণাতীত কালেই পৌঁছে – তবুও তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা নব্য বসতকারী গোষ্ঠী হিসেবে নতুন মিথ্যে পরিচিতি দেয়া হচ্ছে।
নিবর্তন হচ্ছে সেই পদ্ধতি যার মাধ্যমে ঘৃণিত, অননুমোদিত ও ভয়ঙ্কর মানুষদের নিজেদের কব্জায় রেখে তাদের উপর সহিংস দমননীতি চালানো যাতে সেই ভয়ানক জনগোষ্ঠী আসল কিংবা কল্পিত কোনও রকমের ক্ষতিই আর করতে না পারে। নিবর্তন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জীবনের প্রাত্যহিক বৈশিষ্ট্য।
বিতাড়ন কিংবা বিবাসন হচ্ছে তৃতীয় উচ্ছেদের উপায়। বিতাড়নের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত জনগোষ্ঠীকে হয় দেশের সীমানার বাইরে কিংবা দেশের মধ্যেই এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বিতাড়নের আরেকটি উপায় অবশ্য হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে স্বদলবলে ক্যাম্পের জীবন বেছে নিতে বাধ্য করা। আর নে উইনের আমল থেকেই মিয়ানমার সরকার এই দোষে দোষী।
উচ্ছেদের চতুর্থ উপায় হচ্ছে জন্ম নিরোধ যা মিয়ানমার সরকার অন্যান্য উপায়গুলোর সাথে ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে রোহিঙ্গা মেয়েদের বিয়েতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছাড়াও ব্যবহার করা হয় জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, গর্ভপাত ও ধর্ষণ। হালে ঘটা নিবর্তনে মুসলিমদের ঘরবাড়ি, শহর ও লোকালয় আক্রমণের সময় অনেক মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া বলতে গেলে নৈমিত্তিক ঘটনাতে পরিণত হয়েছে।
সর্বাংশে নির্মূল হচ্ছে উচ্ছেদের পঞ্চম উপায় যেখানে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে মেরেই ফেলা হয়। সর্বাংশে নির্মূলের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে এমন কারণও দেয়া হয় যে উল্লেখ্য গোষ্ঠীর সামান্য উপস্থিতিই যেন অন্যদের জন্য ভয়ানক হুমকির ব্যপার। এই পদ্ধতিতে সাময়িক, খণ্ডকালীন কিংবা সম্ভাব্য সমাধানের বদলে দেয়া হয় “চিরস্থায়ী সমাধান।” বুঝতে কষ্ট হয়না যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কেন রাখাইন ব্যবসায়ীরা রোহিঙ্গাদের মেরে ফেলার জন্যে বিষাক্ত তেল ও খাদ্যাদি বিক্রী করেছে। বর্ণবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু, রাখাইন সন্ত্রাসী, রক্তপিপাসু রাজনীতিবিদ ও সরকারের সাম্প্রতিক কার্যকলাপে এটা পরিষ্কার যে সার্বিক মিয়ানমার সমাজে রোহিঙ্গারা নির্মূলাভিযানের শিকার।
কী ভিক্ষু কী বৌদ্ধ জনতা – রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমি থেকে বের করে দিতে প্রায় সকল শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ আজ সংকল্পবদ্ধ।
উপরে দেয়া মিয়ানমার সরকারের অপরাধ তালিকা থেকে এটা পরিষ্কার যে রোহিঙ্গারা উল্লেখিত পাঁচ ধরণের উচ্ছেদেরই শিকার। এটা আদতে রোহিঙ্গা নির্মূলের একটি সার্বিক পরিকল্পনা।
গণহত্যার জন্য প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। এটা শুরু হয় মানুষের মন থেকে, আর এজন্যে দরকার ব্যপক প্রচারাভিযান যাতে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ কাজগুলো করা যায়। এক্ষেত্রে অপরাধ কিংবা হত্যাকারীদের নিঃশঙ্ক তো হতেই হবে, বরং তার উপরে বিশ্রী অপরাধগুলো চালিয়ে যাবার জন্য হতে হবে স্ব-প্রণোদিত অন্ধ সমর্থক। অনেক ক্ষেত্রেই, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আবহ তৈরীর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয় অন্ধ বর্ণবাদী বুদ্ধিজীবীদের উপর, যারা আম-জনতাকে অসহিষ্ণুতার বিষাক্ত বড়ি বিক্রী করেন। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের বিদ্বেষী মানসিকতাসম্পন্ন হওয়া কঠিন। তবে, উৎসাহী ও উদ্যমী শব্দমালা দিয়ে একবার চালু করে দেয়া গেলে, উচ্ছেদকারী সরকারের অভিঘাতী সৈন্যদল ও সমাজের সাধারণ জনগণ সার্বাঙ্গীন উন্মাদনা নিয়ে দায়িত্ব পালনে দেহ প্রাণ সঁপে দেয়। তারা স্বপ্রনোদিত হয়েই তা করে। আর আজকে মিয়ানমারে, বিশেষত আরাকানে তা-ই আমরা দেখছি।
গণহত্যা আর যেসব জায়গাতে ঘটেছে সেখান থেকে দীক্ষা নিয়ে আজকের সবচেয়ে বড় অপরাধের হোতারা – অর্থাৎ, মিয়ানমার সরকার, স্থানীয় রাখাইন রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাধারণ জনতার মস্তক ধোলাইকল্পে রোহিঙ্গা-সহ অ-বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে অহর্নিশি বিকৃত ইতিহাস দিয়ে চালাচ্ছে প্রোপাগাণ্ডা ও প্রাতারণা – উদ্দেশ্য হচ্ছে মিয়ানমার ও আরাকানের মাটিকে ‘অন্য’ লোকদের থেকে দখলমুক্ত করে ‘পবিত্র’ করা। আয়ে চ্যান, (বিগত) আয়ে কিয়াও, খিন মং স ও অন্যান্য উৎকট স্বদেশপ্রেমী রাখাইন লেখকদের বিষাক্ত লেখাগুলোকে ধন্যবাদ জানাতেই হয় – কেননা তাদের লেখার কল্যানেই আজ মুসলিম জনগোষ্ঠী – বিশেষত রোহিঙ্গাদেরকে, বানানো হয়েছে ‘বহিরাগত ভাইরাস,’ যা বৌদ্ধ স্বকীয়তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। তাই আজকাল মিডিয়ার বদৌলতে – ‘রাখাইন লোকজনদের পক্ষে আর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বসবাস করা সম্ভব নয়’ – এমনতরো শ্লোগান প্রায়শই শোনা যাচ্ছে। আর ব্যপক এই হত্যাযজ্ঞের একমাত্র বলি যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী – এই সমস্ত একপেশে রিপোর্টে তা পুরোপুরি চেপে যাওয়া হয়েছে। আদতে উল্টো রোহিঙ্গারাই কিন্তু বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে দিশেহারা।
যুদ্ধ তরবারী হাতে রাখাইন সন্ত্রাসী।
ব্যাপক হারে হত্যাযজ্ঞের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার নীতিমালায়। সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিক গঠনই হচ্ছে সেই বিভাজনকারী রেখা – যেখান থেকে সাধারণত এসব উচ্ছেদ প্রকল্প শুরু হয়। অন্য জায়গাতে আমি যেভাবে বলেছি, মিয়ানমার সরকার নব্য মিয়ানমারবাদকে সমর্থন জানায় – যেখানে বর্ণবাদ ও গোঁড়ামি হচ্ছে আদর্শিক সূতিকা – যার উপর ভিত্তি করে সকল অ-বৌদ্ধ ও অ-মোঙ্গল জাতির নাগপাশ থেকে মিয়ানমারের মাটিকে পবিত্র করার শপথ আছে। নৃ-তাত্ত্বিক, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিচিতির বৈচিত্র্য যেখানে মহান শক্তিতে পরিণত হতে পারতো, সেখানে এই বিষাক্ত ভাবাদর্শের কল্যাণে তাকেই দেখা হচ্ছে সবচাইতে বড় দুর্বলতা হিসেবে।
ইহুদি হলোকস্টের অনেক আগে ১৯৩৫ সালে জার্মানীর নুরেমবার্গ শহরে ইহুদিদের সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ করে ইহুদি-বিরোধী বর্ণবাদী ও বিদ্বেষপূর্ণ এক আইন জারী করা হয়। ইহুদিরা ভোটাধিকার সহ চাকুরি করার যোগ্যতা হারায়। পরবর্তী ৮ বছর ধরে রাইখ (reich) নাগরিকত্ব আইন বলবৎ রাখার জন্যে ১৩টি আনুষঙ্গিক অধ্যাদেশ জারী করা হয় – যেখানে পর্যায়ক্রমে জার্মানির ইহুদিদের গুরুত্বহীন করে ফেলা হয়। এই আইন ভঙ্গকারীদের কঠিন কায়িক শ্রম, জেল কিংবা জরিমানা করা হতো। এই আইনের সুযোগ নিয়ে নাৎসি’রা ভুক্তভোগীদের সম্পত্তি ধ্বংস করতো। ইহুদি হলোকস্টের মতো ঘটনার সূত্রপাত যে নুরেমবার্গের সেই ইহুদি-বিদ্বেষী আইনে, তা বুঝতে কষ্ট হয়না। আর সম্প্রতি বিশেষত রোহিঙ্গা মুসলিম ও সার্বিক ভাবে সকল মুসলিমদের সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদকারী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জারী করা ধর্মীয় ডিক্রি সার্বিক বার্মায় এবং বিশেষত আরাকানে এক সম্ভাব্য ভয়াবহ গণহত্যার আভাস দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে সদর্পে চলেছেন এক রাখাইন সন্ত্রাসী।
আমি সম্প্রতি ব্যাংককে “বার্মার রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত – মীমাংসা ও গণতান্ত্রিক সংস্কার” বিষয়ের উপর এক সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বলেছি মিয়ানমারের বৌদ্ধ রাজনৈতিক নেতৃত্বের গড়ে ওঠা নব্য মিয়ানমারবাদ, নব্য-নাতসীবাদের মতোই একটি সামগ্রিক ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা। এই চিন্তাধারার নেতা ও অনুসারীরা রাষ্ট্র ও ধর্মের পার্থক্য মুছে ফেলে তাদের বর্ণ ও ফ্যাসীবাদী রাজনীতির সাথে থেরাভাদা বৌদ্ধ মতবাদকে একীভুত করে ফেলতে চায়। আর থেরাভাদা বৌদ্ধ মতবাদ নিজেদের ছাড়া অন্য সব ধর্মমতের প্রতি গোঁড়া, মৌলবাদী, বর্ণবাদী, হিংস্র ও অসহিষ্ণু। মুসলিম, খৃষ্টান, শিখ ও হিন্দুদের মতো ১৪০টি নৃ-গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত মিয়ানমারের প্রায় ১৫ শতাংশের এই সংখ্যালঘুদের জন্যে এই মতবাদ একটা সর্বনাশা বিষাক্ত প্রণালী। এটা অসহিষ্ণুতা উৎপাদন করে আর হিংস্রতা প্রতিপালন করে। তদুপরি বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থনসহ সরকারীভাবে এই নীতিকে রাষ্ট্রীয় প্রকল্প হিসেবে অনুমোদনও দেয়া হয়। বর্মী বর্ণবাদের এই জগাখিচুড়ি-মার্কা আত্মম্ভরী নীতি ও অসহিষ্ণু বৌদ্ধ মতবাদ সংখ্যালঘু সহ সামগ্রিক অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
রোহিঙ্গা উৎখাতের রাষ্ট্রীয় প্রকল্পে উৎসুক অংশীদার বার্মার নিরাপত্তা রক্ষীরাও।
দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর পশ্চিমা আকাঙ্ক্ষার জন্য রাখাইন ও মিয়ানমার সরকারের অপরাধগুলোকে এড়িয়ে চলা হয়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড তাই সম্প্রতি প্রতারণামূলক ভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলা বর্বরতার মূল কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অভাব বলে জানিয়েছেন।
তবে এই নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই যে যদিও মিয়ানমার খনিজ সমৃদ্ধ একটি দেশ, এটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সবচাইতে দরিদ্র। কিন্তু দারিদ্রই এই গণহত্যার মূল কারণ – যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এমন মতামত আসলে ভাষিক ছদ্মাবরণে থেকে ঘাতক মিয়ানমার সরকারের অপরাধগুলোর ভয়াবহতাকে চেপে যাবার নামান্তর। বসনিয়া আর রুয়ান্ডার ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরণের অজুহাত শুনেছি। পৃথিবীতে অনেক দরিদ্র দেশই আছে – তাই বলে সেসব দেশে শক্তিশালী সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘুদের উপর গণহত্যার প্রকল্প নেয়না। গণহত্যা ঘটাতে হলে চাই রাষ্ট্রিক পৃষ্ঠপোষকতা, যেখানে সমাজের প্রায় সকল স্তরের লোকই অংশগ্রহণ করে – আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সাথে তাই-ই হচ্ছে।
অনেককাল ধরেই চীন, ভারত-সহ অন্যান্য এশীয় ও প্রশান্ত অঞ্চলের দেশগুলো মিয়ানমারের নির্দয় সামরিক সরকারের সাথে ব্যবসা করে আসছে। এখানে মানবাধিকার কখনো অগ্রাধিকার পায়নি। অনেকদিন ধরেই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলো মিয়ানমারে ব্যবসা করতে পারেনি। তাদের অংশগ্রহণের জন্য মিয়ানমারের পরিচায়ক মুখের পরিবর্তন ছিল অপরিহার্য। এই বিকৃত পদ্ধতি শুরু হয় যোগ্যতাহীন সু চি’কে নোবেল পুরষ্কার দেয়ার মাধ্যমে – আর তার ধারাবাহিকতায় আসে সেনা সদস্যদের অসামরিক পোষাক পড়ে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে পরিচিতি দেয়ার নাটকের দৃশ্যায়নে। ওটা যেন ছিল বার্মার গ্লাসনস্ত মুহুর্ত – যখন বার্মার নাম পাল্টে মিয়ানমার রাখা হয়। এই দাবীর ধারাবাহিকতায় আসে ২০১০ সালের নির্বাচন ও এর পরের উপনির্বাচন, যেখানে সু চি’র NLD পার্টি সদ্যোমে অংশ নেয় – উদ্দেশ্য ছিল এটা প্রমাণ করা যে, মিয়ানমার ফ্যাসিবাদী সামরিক গোষ্ঠীশাসন থেকে ধীরে ধীরে গণতন্ত্রে উত্তীর্ণ হচ্ছে। এরপরে আসে থেইন সেইনের অলিখিত দূত হিসেবে সু চি’র পশ্চিমা বিশ্ব সফর – যেখানে তিনি বার্মার সাথে বহির্বিশ্বের ব্যবসা বাণিজ্য পুনঃস্থাপনের অনুরোধ জানান। সম্পর্কে স্বাভাবিকীকরণের শেষ অঙ্কে আসে থেইন সেইনের জাতিসংঘে সফরের নাটক, যেখানে তিনি বান-কি-মুন সহ অন্যান্য পশ্চিমা নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত করেন।
বর্মী রাষ্ট্রপতি থেইন সেইন মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের উৎখাত চান।
এরপরে শুরু হয় অপরাধী বর্মী সরকারের উপর আরোপিত পুরোনো সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার পশ্চিমা সরকারগুলোর প্রতিযোগিতা – উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন বাজারে আগেভাগে ঢুকে নিজের ভাগের অংশ ঠিক রাখা। তারা মিয়ানমারে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দেয়। এমন উদ্যোগের মহড়া দেখে থেইন সেইন সরকারের সাহস বেড়ে যায় আরো অনেকগুণ – আর তারা ভাবতে থাকে যে বিশ্ববাসীর কাছে দেয়া আগের প্রতিশ্রুতিগুলো মানতে তারা আর বাধ্য নয়। জাতিসংঘের সফরের অব্যবহিত পরেই, বর্ণবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিক্ষোভের সাজানো নাটক করে বর্মী সরকারের কাছে মুসলিমদের জোরপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তরিত করার আর্জি জানায়। সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলোতে তারা ঘোষণা দেয় যে মুসলিমদের সাথে কোনোরকমের বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেউ রাখলে তাকে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে। আগে যেভাবে বলা হলো, এটা নাৎসি নীতিরই ছায়া। এটা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা সহ সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার সার্বিক ব্যবস্থা। মিয়ানমারের এই বৌদ্ধ ফ্যাসিবাদ এমনই অনিষ্টকর যে, আরাকানের ভেতরে ও বাইরে বসবাসরত রাখাইন বৌদ্ধরা মিয়ানমারের অন্য সব বৌদ্ধদের আশীর্বাদে মিয়ানমারে, বিশেষত রাখাইন রাজ্যে একজন মুসলিমও অবশিষ্ট রাখতে চায়না।
আগে আমি অন্যখানেও বলেছি যে, রোহিঙ্গাদের নির্মূল করা এখন একটা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রকল্পে পরিণত হয়েছে – যেখানে তথাকথিত গণতন্ত্রের প্রতীক আং সান সু চি সহ মিয়ানমারের অধিকাংশ বৌদ্ধরা কোন-না-কোন ভাবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী। অনেকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও হন্তক রাখাইন বৌদ্ধ ও সরকারের গণহত্যার প্রকল্পের ব্যাপারে রহস্যজনক নিরবতা কিংবা মৌন সম্মতি তাদেরকে এই অপরাধের সহযোগী হিসেবেই চিত্রিত করেছে। রাখাইন বৌদ্ধরা এখন তাদের নিজস্ব ধাঁচের কৃস্টালনাক্সট খুঁজে পেয়েছে। তারা ১৯৩৮ সালের নাৎসি পার্টির ধারাবাহিক নির্যাতন, হত্যা ও লুণ্ঠনকে অনুকরণ করছে, যখন একের পর এক ইহুদি লোকালয় আক্রমণ করা হয়েছিল। এই হারে চলতে থাকলে নিজ মাতৃভুমি আরাকানেই মুসলিমদের কোনো চিহ্ন ভবষ্যতে অবশিষ্ট থাকবে না।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও গণতন্ত্রের প্রতীক সু চি রোহিঙ্গা গণহত্যার ব্যাপারে বিস্ময়কর ভাবে নীরব।
তেসরা জুন থেকে ঘটা আক্রমণগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন, অপরিকল্পিত কিংবা স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা নয়। আন্তর্জাতিক আইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ১৯৮২ সালের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইনের আওতায় ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রহীন হওয়া রোহিঙ্গাদের উপর মিথ্যাভাবে সকল অপরাধের দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদী রাখাইন রাজনীতিকরা অবশিষ্ট বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে উত্তেজিত করে ক্রম-অগ্রসরমান “বর্ণ বিশুদ্ধিকরণ” প্রকল্পের প্রতি বাকীদের সমর্থন ও অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছে। আয়ে মং এর ফ্যাসিবাদী দল, RNDP ও অন্যান্য বর্ণবাদী রাখাইন রাজনীতিক সহ লোভী ব্যবসায়িরা বিনা বিচারে রোহিঙ্গাদের মেরে, ঘরবাড়ী, মসজিদ পুড়িয়ে তাদের সম্পত্তি ও ব্যবসা লুট করছে। রোহিঙ্গাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও করা হচ্ছে। এই কাজে রাখাইন সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশও উৎসুক অংশীদার। ফলে রোহিঙ্গারা আজ হয় কন্সেন্ট্রেশন-ক্যাম্পের আদলে গড়ে ওঠা ছাউনি কিংবা বস্তিতে বন্দী কিংবা তাদেরকে দেশের বাইরে নির্বাসিত। গণহত্যার প্রকল্প এগিয়ে চলছে পূর্ণ উদ্যমে যাতে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করে সমস্যাটির “শেষ সমাধান” দেয়া যায়।
বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা কাটাচ্ছে বীভৎস জীবন।
আমরা এখনো এই নির্মূলাভিযান থামাতে পারি, যদি পশ্চিমা সরকারগুলো এখনই ব্যবস্থা নেয়। তারা জাতিসংঘের মাধ্যমে থেইন সেইন সরকারকে চাপ দিতে পারে – যাতে করে এই জাতি-বিনাশী প্রকল্প থামানো যায় আর সেই সাথে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পূনর্বহাল করা যায়। পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা তাদের হারানো জান ও মালের জন্য ক্ষতিপূরণ পান ও কালাদান নদীর পশ্চিম পাশে যাতে তারা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্ভয়ে বসবাস করতে পারেন। সরকার যদি এমন বাস্তবমুখী পরিবর্তনকে বিরোধিতা করে তাহলে নিরাপত্তা পরিষদে অর্থনৈতিক অবরোধ সহ অপরাধী মিয়ানমার ও রাখাইন সরকারের নেতৃবৃন্দকে নুরেমবার্গের মতো বিচারসভায় নিয়ে যেতে হবে – যাতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য তাদের বিচার করা যায়।
দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, রোহিঙ্গা সমস্যার প্রতি পশ্চিমা শক্তিগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি নাৎসি আমলের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়; তারা স্পষ্ট সত্য দেখতে কিংবা শুনতে নারাজ। সহজ কথায় এটা অনৈতিক ও অমার্জনীয়। তারা কেবল মিয়ানমার সরকারের ভাষ্যকেই পুনরাবৃত্তি করছে – যেন সংঘর্ষটা দ্বিপাক্ষিক, অর্থাৎ বড় দুটো গোষ্ঠী একে অপরকে আক্রমণ করছে। এটা অবজ্ঞাপূর্ণ মিথ্যা সাযুষ্যের প্রয়াস বৈ কিছু নয়। যখন কেবল রোহিঙ্গাদের শহরগুলোই জ্বলছে, যখন সকল শরণার্থীই রোহিঙ্গা, যখন প্রথিতযশা কর্মী থেকে শুরু করে বৌদ্ধ ভিক্ষু, স্থানীয় রাখাইন রাজনীতিক ও ছাত্রদের আর্তনাদ নাৎসি আমলের স্মারক – তখন এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে রোহিঙ্গা সমস্যার “শেষ অঙ্ক” মঞ্চস্থ করার ভয়াবহ মহড়া চলছে। এই বীভৎস সত্য কেউই লুকিয়ে রাখতে পারবেনা।
গণহত্যার বিভৎসতার বিমূর্ত প্রতিচ্ছবি।
রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইন (আরাকান) রাজ্য যেন একটা বিশালাকায় কারাগার। রোহিঙ্গা ঘরবাড়ীগুলোতে এখন দেয়া হয়েছে লৌহবেষ্টনী আর তাদের পুড়ে যাওয়া দালান-কোঠা হয়েছে সামরিক চেকপয়েন্ট। রাজধানী সিত্তওয়ে (আকিয়াব) এর বাইরে প্রায় এক লক্ষ রোহিঙ্গা বাস করছে শরণার্থী শিবিরের অস্বস্তিকর পরিবেশে – যেখানে অপুষ্টি ও রোগব্যধি সুবিস্তৃত আর যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় রাখাইন লোকবল ত্রাণকর্মীদের অবাধ চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করছে। বহুকালের নিবর্তন ও ধীরলয়ে এগিয়ে যাওয়া গণহত্যার তৎপরতায় ইতোমধ্যেই অর্ধেক রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া গেছে। যারা এখনো দেশের মধ্যে জীবিত আছেন তারা জীবন্ত নরক থেকে পালাবার দিন গুনছেন। আমাদের প্রজন্ম কি পুরো একটা জাতিকে এভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে দেবে?
আর কতো রোহিঙ্গার মৃত্যু ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হলে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো সাম্প্রতিক এই ভয়ানক বর্ণবাদী নৃশংশতা রোধে এগিয়ে আসবে? বর্ণবাদী প্রতিহিংসা, ধর্মীয় গোঁড়ামী, সন্ত্রাস ও নৃশংসতা এবং সেইসাথে ঔদ্ধত্য ও শক্তির নিষ্ঠুরতার ইঙ্গিতবাহী এই পরিকল্পিত, ক্ষতিকর ও বিধ্বংসী অপরাধকে আর কতদিন আমরা উপেক্ষা করে যাব?
জীবন্ত নরক থেকে প্রাণ হাতে পালাবার চেষ্টা।
দুঃখের বিষয় এই যে আমরা অতীতের গণহত্যা থেকে কিছুই শিখিনি – না হিটলারের জার্মানী থেকে, না হালের বসনিয়া, কসভো কিংবা রুয়ান্ডা থেকে। ভাষিক কূটাবরণে আজো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর ঘটা অপরাধের মাত্রাকে খাটো করে দেখানোর অপচেষ্টা চলছে। অনেক সাংবাদিক ঘটনার বর্ণনা দেবার আগে “অভিযোগ আছে যে” (“alleged”) এর মতো পূর্বপদ ব্যবহার করছেন, যাতে আসলেই কী ঘটেছে সে সম্পর্কে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা যায়। অনেক স্থানীয় সাংবাদিক নিঃসন্দেহে পক্ষপাতদুষ্ট যারা সরকারী প্রচারণাকেই বিতরন করার দোষে দোষী।
১৯৪৬ সালে নুরেমবার্গ বিচারসভার মার্কিন প্রধান কৌসুলী রবার্ট জ্যাকসন আন্তর্জাতিক সামরিক বিচার-পরিষদের সামনে দেয়া সমাপনী বক্তব্যে বলেছিলেন,
বাস্তবতা এই যে ইতিহাসের দীর্ঘ পদচারণায় বর্তমান শতাব্দী প্রশংসিত অবস্থানে থাকবে না, যদিনা এর দ্বিতীয় ভাগ প্রথম ভাগের কালিমা মুছে ফেলে। বিংশ শতাব্দীর এই দুটি ঘটনা ইতিহাসের বইগুলোতে সবচাইতে রক্তাক্ত ঘটনা হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত হবে। বিশ্বযুদ্ধ দুটোতে হতের সংখ্যা প্রাচীণ ও মধ্যযুগের সকল যুদ্ধে নিহতের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশী। ইতিহাসের কোনও অর্ধ-শতাব্দী কখনো এই মাত্রার হত্যাযজ্ঞ দেখেনি। দেখেনি এমন নিষ্ঠুরতা, এমন অমানবতা, এমন পাইকারি হারে মানুষকে দাসত্বের শৃংখলে বাঁধা, এমন মাত্রার সংখ্যালঘুর পূর্ণবিলয়। তর্কেমাদার সন্ত্রাসও নাৎসি বিভৎসতার কাছে ফ্যাকাশে লাগে। ভবিষ্যত প্রজন্ম এই দশকগুলোতে ঘটা অনন্য ঐতিহাসিক বাস্তবতা স্মরণে রাখবে। আমরা যদি এই বর্বরতার পেছনের কারণগুলোকে দূরীভূত করে এর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে না পারি, তাহলে এটা কোনো অতিরঞ্জিত ভবিষ্যত বাণী হবেনা যদি বলা হয় যে বিংশ শতাব্দী হয়ত সভ্যতারই পরিসমাপ্তি টানবে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘটা এই গণহত্যার মহড়া দেখে এটা অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে আমরা দুভাবে ব্যর্থ – প্রথমত “কারণ” গুলোকে দূরীভূত না করতে পারা, আর দ্বিতীয়ত, “বর্বর ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি” প্রতিরোধ না করতে পারা।
No comments:
Post a Comment