DESHERPATRO

Thursday, January 16, 2014

মোনাফেকরা সালাতে দাঁড়ায় ঢিলা-ঢালাভাবে

মোনাফেকরা সালাতে দাঁড়ায় ঢিলা-ঢালাভাবে

এই দীনের নেতারা, ওলামা, আল্লামা, ফুকাহা, মোহাদ্দেসিন, মুফাস্সেরিন সবাই একমত যে আকীদা সহীহ অর্থাৎ সঠিক না হোলে ঈমানেরও কোন দাম নেই এবং স্বভাবত ঈমান ভিত্তিক সব আমল অর্থাৎ সালাহ্ (নামায), যাকাহ, হজ্ব, সওম (রোযা) এবং অন্যান্য কোন এবাদতেরই আর দাম নেই, সব অর্থহীন।  তাদের এই অভিমতের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু বর্ত্তমানের এই বিকৃত এসলামে আকীদার অর্থ করা হয় ঈমান। এটা ভুল। আকীদার প্রকৃত অর্থ হোল কোন বিষয় সম্বন্ধে সঠিক ধারণা। কোন জিনিস দিয়ে কী হয়, ওটার উদ্দেশ্য কি, ওটাকে কেন তৈরী করা হোয়েছে তা সঠিক ভাবে বোঝা।

সালাহ্ সম্বন্ধে সঠিক আকীদা কি? অত্যন্ত সংক্ষেপে সঠিক আকীদা হোল:আল্লাহ তাঁর শেষ রসুলকে পাঠালেন এই দায়িত্ব দিয়ে যে তিনি যেন আল্লাহর দেয়া হেদায়াহ ও সত্যদীন পৃথিবীর অন্য সব দীনের ওপর প্রতিষ্ঠা করেন, এবং নিজে এই কথার সাক্ষী রোইলেন (কোরান- সুরা ফাতাহ ২৮)। 

এই হেদায়াতই হোল তওহীদ, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, সেরাতুল মুস্তাকীম; এবং সত্যদীন হোল ঐ তওহীদের ওপর ভিত্তি করা জীবন-ব্যবস্থা, শরিয়াহ, দীনুল এসলাম, দীনুল কাইয়্যেমাহ। এই কাজের অর্থাৎ এই সত্যদীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার তরিকা, প্রক্রিয়া অর্থাৎ কোন্ নীতিতে এই কাজ করা হবে তাও আল্লাহ নির্দ্ধারিত কোরে দিলেন এবং সেটা হোল কেতাল, সশস্ত্র সংগ্রাম, যুদ্ধ। প্রশিক্ষণ ছাড়া, চরিত্র গঠন ছাড়া যুদ্ধ কোরে জয়লাভ সম্ভব নয়, খাম-খুঁটি, পিলার ছাড়া ছাদ রাখা সম্ভব নয়, কাজেই সেই চরিত্র গঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য নির্দ্ধারিত কোরে দিলেন সালাহ্ এবং এই সালাহ্-কেও ফরদে আইন অবশ্য কর্ত্তব্য, (Must) কোরে দিলেন (সুরা বনি এসরাঈল ৭৮)।

আজ মোসলেম দুনিয়ায় সালাতের সম্বন্ধে আকীদা কি? সালাহ্ চরিত্র গঠনের মুখ্যত দুর্ধর্ষ, অপরাজেয় যোদ্ধার চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া; এই আকীদা বদলে একে অন্যান্য ধর্মের মত এবাদতের, উপাসনার শুধু আত্মিক উন্নতির প্রক্রিয়া বোলে মনে করার ফলে আজ সেই যোদ্ধার চরিত্র গঠন তো হয়ই না এমন কি সালাতের বাহ্যিক চেহারা পর্যন্ত বদলে গেছে। আল্লাহর রসুলের বহুবারের দেওয়া তাগীদ- সাবধান বাণী- তোমাদের সালাতের লাইন ধনুকের ছিলার মত সোজা কর, নাহোলে আল্লাহ তোমাদের মুখ পেছন দিকে ঘুরিয়ে দেবেন, তাঁর আদেশ- তোমাদের মেরুদণ্ড, ঘাড় সোজা কোরে সালাতে দাঁড়াও এ সমস্ত কিছুই আজ ভুলে যাওয়া হোয়েছে। এসব হুকুম না মুসুল্লীদের মনে আছে, না এমামদের মনে আছে। কাজেই ঐ সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণের সালাহ্ আজ নুব্জ, বাঁকা লাইনের; বাঁকা পিঠের মুসুল্লী ও এমামদের মরা সালাহ্। আল্লাহ কোরআনে সুরা নেসার ১৪১-১৪২ নং আয়াতে মোনাফেকদের সালাতের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন- মোনাফেকরা শৈথিল্যের সাথে সালাতে দাঁড়ায়। আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেছেন ‘কুসালা’ যার অর্থ সাহস হারিয়ে ফেলা, অলসতা, ঢিলা-ঢালা ভাবে। বর্ত্তমান বিশ্বের মোসলেম নামের এ জাতির সালাতের দিকে তাকালে কুসালা শব্দের অর্থ বুঝতে কারও কষ্ট হবে না। খুশু, খুজুর নামে এ জাতি ‘কুসালা’ শব্দের যথাযথ প্রয়োগ কোরছে। সমস্ত বিশ্বে বর্ত্তমানে এই সাহসহীন সালাহ্-ই চলছে। এই মরা প্রাণহীন সালাতের পক্ষে বলা হয়- খুশু-খুজুর সাথে নামায পড়া উচিত।

এই খুশু-খুজু কী? বর্ত্তমানে বলা হয় সমস্ত কিছু থেকে মন সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন কোরে আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা হোচ্ছে খুশু-খুজু; অর্থাৎ এক কথায় ধ্যান করা।প্রশ্ন হোচ্ছে, সালাতে আল্লাহকে ধ্যান করাই যদি উদ্দেশ্য হোয়ে থাকে তবে আল্লাহ সালাতের প্রক্রিয়া, নিয়ম-কানুন এমন কোরে দিলেন কেন যাতে ধ্যান করা অসম্ভব। খুশু-খুজুু অর্থাৎ ধ্যান করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য হোলে সালাতের নিয়ম হতো পাহাড়-পর্বতের গুহায়, কিম্বা খানকা বা হুজরায় অথবা অন্ততপক্ষে কোন নির্জন স্থানে ধীর-স্থিরভাবে একাকি বোসে চোখ বন্ধ কোরে মন নিবিষ্ট কোরে আল্লাহর ধ্যান করা। সালাহ্ কি তাই? অবশ্যই নয়, সালাহ্ এর ঠিক উলটো। বহু জনসমাবেশের মধ্যে যেয়ে সেখানে ধনুকের ছিলার মত সোজা লাইন কোরে দাঁড়িয়ে সৈনিকের, যোদ্ধার মত ঘাড়, মেরুদণ্ড লোহার রডের মত সোজা কোরে, এমামের তকবিরের (আদেশের) অপেক্ষায় সতর্ক, তটস্থ, থাকা তারপর তকবিরের সঙ্গে সঙ্গে সকলে একত্রে রুকু, সাজদায় যাওয়া, ওঠা, সালাম দেয়া অর্থাৎ এমামের (নেতার) আদেশ পালন করা। সালাতের প্রায় ১১৪ টি নিয়ম-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রেখে, সেগুলি যথাযথভাবে পালন কোরে ঐ খুশু-খুজুর সাথে অর্থাৎ ধ্যানের সাথে সালাহ্ সম্পাদন করা যে অসম্ভব তা সাধারণ জ্ঞানেই (Common sense) বোঝা যায়। অথচ ঐ নিয়ম-পদ্ধতি সঠিক ভাবে, যথাযথ ভাবে পালন না কোরে যেমন-তেমন ভাবে সালাহ্ পড়লে তা আল্লাহ গ্রহণ কোরবেন না। আল্লাহর রসুল বোলেছেন- তোমরা পূর্ণভাবে সালাহ্ কায়েম করো, কেননা আল্লাহ পূর্ণ ব্যতিত সালাহ্ কবুল করেন না [আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে]।

 তিনি আরও বোলেছেন- তোমাদের কাহারও সালাহ্ পূর্ণ (সঠিক) হবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ যেভাবে আদেশ কোরেছেন ঠিক সেইভাবে কায়েম কোরবে (আবু দাউদ)। আল্লাহ-রসুলের আদেশ মোতাবেক সমস্ত নিয়ম-কানুন যথাযথ পালন কোরে অর্থাৎ পূর্ণ সঠিকভাবে সালাহ্ কায়েম কোরলে বর্ত্তমানে মুসুল্লীরা খুশু-খুজু বোলতে যা বুঝেন তা অসম্ভব। খুশু-খুজুর প্রকৃত উদ্দেশ্য হোচ্ছে- মো’মেন যখন সালাতে দাঁড়াবে তখন তার মন পৃথিবীর সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে একাগ্র হবে সালাতে; সে সমস্ত ক্ষণ সচেতন থাকবে যে সে মহামহীম আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আল্লাহর বিরাটত্ব ও তার নিজের ক্ষুদ্রতা সম্বন্ধে সে থাকবে সর্বদা সচেতন, আর সেই সঙ্গে একাগ্র হোয়ে থাকবে এমামের (নেতার) তকবিরের (আদেশের) প্রতি, সালাহ্ সঠিকভাবে, নিখুঁতভাবে সম্পাদন কোরতে। এই হোল খুশু-খুজু। 

[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান করেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা করেছেন।

এই নিবন্ধের লেখক হেযবুত তওহীদের আমীর মোহাম্মদ মসীহ উর রহমান, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১১৯১৩৬৭১১০]- See more at:
http://desherpatro.com

No comments:

Post a Comment