DESHERPATRO

Thursday, January 16, 2014

কোর’আনের প্রতি অবজ্ঞা এবং লোক দেখানো মুসলমানিত্ব

কোর’আনের প্রতি অবজ্ঞা এবং লোক দেখানো মুসলমানিত্ব

মোহাম্মদ রাকিব আল বান্না

পবিত্র কোর’আন মহান আল্লাহ পাকের নাযেল করা মানবজাতির জন্য সর্বশেষ গ্রন্থ। এই কোর’আনের প্রতিটি বর্ণ, প্রতিটি শব্দ মহান আল্লাহর কথা। সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা তাঁরই সৃষ্ট মানব জাতির সাথে কথা বোলছেন কোর’আনের মাধ্যমে। সুতরাং এই কোর’আন আসমানের নিচে সবচেয়ে মর্যাদাবান, সম্মানিত বস্তু। এই কোর’আন হোচ্ছে মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, রাষ্ট্রের জন্য এটি সংবিধান। সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায় এটি শুধু তেলাওয়াতের জন্য আল্লাহ নাযেল করেন নি, আল্লাহ কোর’আন নাযেল কোরেছেন সমস্ত পৃথিবীতে এটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বরকম অন্যায়, অবিচার দূর কোরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য। অথচ সর্বত্র সেই মহাপবিত্র কোর’আনকে অবলীলায় অবজ্ঞা করা হোচ্ছে। কোনো লিখিত বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার পূর্বশর্ত হোচ্ছে ঐ বক্তব্য আগে সঠিকভাবে বোঝা, সঠিকভাবে না বুঝলে আপনি আপনার জীবনে এটি প্রতিষ্ঠিত কোরতে পারবেন না।

এজন্য আল্লাহ সহজ ভাষায় কোর’আন নাযেল কোরেছেন। অথচ আমরা কোর’আন শুধু আরবিতেই তেলাওয়াত কোরি এবং না বুঝেই শুধু মাত্র সাওয়াব কামানোর জন্য তেলাওয়াত কোরি। উপরন্তু এই তেলাওয়াতও এখন হোচ্ছে আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে। (বিশেষ কোরে রমজান মাসে)প্রায়ই দেখা যায় কোর’আন তেলাওয়াত চোলছে, অথচ আশপাশের লোকজন তাদের কথাবার্ত্তা, কাজ-কর্মে মগ্ন। রেডিও-টিভিতে যখন কোর’আন তেলাওয়াত সম্প্রচারিত হয় তখন কোন লোকই সেদিকে কর্ণপাত করে না। বিশেষ কোরে রমজান মাসে রেডিওতে কোর’আন পাঠ করা হয়, অনেক সময় সে তেলাওয়াত লাউড স্পিকারে (মাইক) সংযুক্ত কোরে দেওয়া হয় বা বাস ট্রেনের সাউন্ড বক্সে বাজানো হয়। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুবার্ষিকী এবং ধর্মীয় বিশেষ দিনগুলিতে লাউড স্পিকার বা মাইকে কোর’আন তেলাওয়াত করা হয়। পাশেই চোলতে থাকে ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজ কর্ম, কথাবার্ত্তা, ঝগড়াঝাটি, অশ্লীল গালাগালি এমন কি মারামারি পর্যন্ত সবকিছু। কোর’আন তেলাওয়াত হওয়ার সময় এভাবে অন্য কাজ করা, অন্য কথা বলা এমন কি অমনোযোগী থাকা আল্লাহর বাণীর প্রতি চরম ধৃষ্টতা, চরম বেয়াদবি। এটা সাধারণ জ্ঞান।

কারণ আমাদের মধ্যে কোন সম্মানিত বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি যদি আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন, তখন তার কথার দিকে খেয়াল না কোরে অন্য কাজে বা কথা বার্ত্তায় মশগুল থাকাকে আমরা বেয়াদবী মনে কোরি। অথচ যখন এ সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক তাঁর কেতাব পবিত্র কোর’আনের মাধ্যমে আমাদের উদ্দেশ্যে কথা বোলছেন, তখন আমরা বেখেয়াল থাকাকে কোন বেয়াদবি মনে করি না। এ যে কত বড় ধৃষ্টতা তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়।সুরা আরাফ এর ২০৪ নং আয়াতে আল্লাহ বোলেছেন, “যখন কোর’আন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সহিত উহা শ্রবণ কোরবে এবং নিশ্চুপ হোয়ে থাকবে যাতে তোমাদের প্রতি রহম করা হয়।” উপরোক্ত আয়াতে দু’টি বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশ রোয়েছে।১)  কোর’আন পাঠের সময় মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে,২)  নিশ্চুপ হোয়ে থাকতে হবে, অর্থাৎ কোন কথাবার্ত্তা বলা যাবে না।যদি উপরোক্ত নির্দেশ মান্য করা হয় তবে তাদের প্রতি রহম করা হবে।

মোসলেম হওয়ার দাবী কোরলে তাদের জন্য আল্লাহর কালামের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য্য, ফরদ। তাই-ক)  সালাহ কায়েমের সময় যখন কেউ জোরে কোর’আন তেলাওয়াত করে তখন আশপাশে কেউ থাকলে চুপ কোরে মনোযোগের সাথে কোর’আন তেলাওয়াত শোনা আরাফের ২০৪ নং আয়াত অনুযায়ী তার প্রতি ফরদ। কোর’আন শ্রবণকালে কারো সাথে কথা বলা, অন্য কোন আওয়াজ করা বা অন্য কাজ করা তখন তার জন্য মোটেও উচিত নয়। সালাহ (নামাজ) ছাড়াও অন্যান্য সময় কেউ কোর’আন তেলাওয়াত কোরলে সেখানে উপস্থিত সকলের মনোযোগের সাথে তা শোনা উচিত।

যদি সকলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে থাকে তবে যে পাঠ কোরছে তাকে অন্যত্র গিয়ে বা মনে মনে পাঠ করার জন্য বলা উচিৎ।খ)  যখন রেডিও টিভিতে জোরে কোর’আন তেলাওয়াত সম্প্রচার করা হয় তখন উপস্থিত সকলেরই একইভাবে চুপ কোরে মনোযোগের সাথে কোর’আন তেলাওয়াত শোনা কর্তব্য। যদি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের জন্য তিনি শুনতে না পারেন সেক্ষেত্রে রেডিও/টিভি বন্ধ কোরে দেওয়া উচিত। কিন্তু তেলাওয়াতের পাশাপাশি অন্য কাজ বা কথা বলা মোটেও ঠিক নয়। অনেকে কম্পিউটারে কোর’আন তেলাওয়াত শুনতে শুনতে অন্য কাজ কোরে থাকেন। এটাও একই ভাবে নিষিদ্ধ হোয়ে যায়। হয় শুধু তেলাওয়াত শুনতে হবে অথবা তেলাওয়াত বন্ধ করে কম্পিউটারে অন্য কাজ করতে হবে।

গ)  এলাকার মধ্যে কেউ মাইকে কোর’আন তেলাওয়াত প্রচার কোরলে সেক্ষেত্রে তাদেরকে কোর’আনের আয়াত দেখিয়ে বলা উচিত, “আপনারা যে মাইকে কোর’আন তেলাওয়াত প্রচার কোরছেন, তা মানুষ কিন্তু মনোযোগ দিয়ে শুনছে না বা ইচ্ছা থাকলেও শুনতে পারছে না। কারণ সবাই কাজ কর্মে বা কথাবার্ত্তায় ব্যস্ত। কিন্তু আল্লাহ বোলেছেন,  যখন কোর’আন পাঠ হয় তখন তোমরা সবাই মনোযোগ সহকারে শুনবে ও নিশ্চুপ হোয়ে থাকবে। আপনারা এভাবে মাইকে কোর’আন তেলাওয়াত বাজালে আমরা কেউ আল্লাহর এ হুকুমটি মানতে পারছি না, ফলে আমরা যেমন গোনাহগার হোচ্ছি, আপনারা আমাদের চেয়ে আরো বেশী গোনাহগার হোচ্ছেন। তাই এভাবে মাইকে তেলাওয়াত করা বন্ধ করুন।”সর্বশেষ একটা কথা না বোলে পারছি না, তা হোল- যারা সাধারণ মানুষ আরবী জানে না, তারা কোর’আন তেলাওয়াত শুনে কিছুই বুঝতে পারে না। সুরা আ’রাফের ২০৪ নং আয়াতটি কি আলেম মোল্লারা পড়েন নি? নিশ্চয় পড়ে থাকবেন, তাহলে উচ্চস্বরে মাইকে কোর’আন তেলাওয়াত বাজিয়ে নিজেদের মুসলমানিত্ব জানান দেওয়ার এই ভ্রান্ত প্রথা বাতিলে তাদের এই নিশ্চুপ থাকার করণ কি? রাসুল (দ:) এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে এভাবে উচ্চস্বরে হাটে, বাজারে তেলাওয়াত চোলছে আর সাধারণ মানুষ কোনো ভ্রুক্ষেপ কোরছে না এরকম কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। কারণ তাঁরা ছিলেন প্রকৃত মো’মেন, মোসলেম ও উম্মতে মুহাম্মদী। তাঁরা জানতেন এই কোর’আন নাযেল হোয়েছে এর হুকুম অনুযায়ী জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করার জন্য।
লোকদেখানো মুসলমানিত্বের দরকার হয় নি। আর প্রতারক, মোনাফেক, ভণ্ড লোকদেখানো মুসলমানরা উচ্চস্বরে মাইকে টাকা দিয়ে মোল্লা ভাড়া কোরে কোর’আন তেলাওয়াত করায়, জনসভা, অধিবেশন ইত্যাদি শুরুর আগে কোর’আন তেলাওয়াত কোরে মনে করে আল্লাহকে তারা ধন্য কোরে দিয়েছে কিন্তু জাতীয় ও সামাজিক জীবনে আল্লাহর হুকুমকে অর্থাৎ কোর’আনের হুকুমকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান কোরেছে। তাহলে রেডিও টিভিতে এইভাবে কোর’আন তেলওয়াতের অর্থ কী? এর একমাত্র উত্তর- দেখানো যে, দেখো- আমরা কত বড় মুসলমান। প্রকৃত পক্ষে যারা কোর’আনের হুকুম প্রত্যাখ্যান কোরে দাজ্জালের তৈরি জীবনব্যবস্থা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র তাদের জাতীয় জীবনে গ্রহণ কোরে নিয়েছে তারা তো মোসলেমই নয়, কাজেই মাইকে, হাটে-বাজারে তাদের কোর’আন তেলাওয়াতের অর্থ হোচ্ছে লোক দেখনো; দেখ আমরা কতো বড় মুসলমান।

[হেযবুত তওহীদ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১১৯১৩৬৭১১০]

 - See more at: http://desherpatro.com , www.hezbuttawheed.com

No comments:

Post a Comment