ঐক্য
কোন দল বা গোষ্ঠী যখন কোন কাজ বা উদ্যেশ্যে এক হয় তখন তাদের
ভিতরে ঐক্য তবেই সম্ভব যদি ঐ দল বা গোষ্ঠী তাদের সুনির্দিষ্ট
লক্ষে অটল থাকে। ঐক্যের জন্যে দুটি জিনিষ খুব জরুরী এক) উদ্যেশ্য লক্ষ
সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দুই) ঐ লক্ষ্য অর্জনে অটল প্রচেষ্টা, শত
বাধা বিপত্তিতেও অনড় থাকার মনোভাব।
বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে মুসলিম নামক জাতিটার না আছে চরিত্রগত
মর্যাদা, না আছে তাদের কোথাও কতৃত্ব। পৃথীবির সর্বত্র
তারা অপমানিত , নির্জাতিত। যদিও তারা নিজেদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ
জাতি বলে আজও বিশ্বাস করে ও প্রচার করে। কিন্তু
বাস্তবতা দেখে আমরা কি করে বলব যে আমরা আজ ও আল্লাহর
চোখে শ্রেষ্ঠ জাতি? আল্লাহ তার কোরআনে মুসলিম জাতিকে শ্রেষ্ঠ
জাতি হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন( সুরা আলে –ইমরান, আয়াত-১১০)।
আল্লাহর ঘোষনা যে সঠিক ও ন্যায় সংগত তার প্রমান রাসুলের সময়কার
মুসলিম জগত ও খোলাফায়ে রাশেদীন দের আমলের মুসলিম জগত। তাদের
চরিত্রের পবিত্রতায় যেমন চির শত্রুও পরম বন্ধু হয়ে যেত তেমনি লক্ষ্য
অর্জনে অটল প্রচেষ্টার ফলে তারা ছিল অর্ধেক দুনিয়ার শাষক।
বাকী দুনিয়া তাদের দিকে সম্মান ও সমীহ এর দৃষ্টিতে তাকাত।
এটা ইতিহাস, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সুখকর সময়ের ইতিহাস,
শান্তিতে পুর্ণ পৃথিবীর ইতিহাস।
মুসলিম জাতির এই চরম দুরাবস্থার কারন কি? জানতে চাইলে জবাব
আসবে আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই, আমরা শিক্ষিত না ইত্যাদি। কেউ কেউ
তো আহাম্বকের মত ভাগ্যকে গালি দিয়ে বলবেন এটা আল্লাহর লেখা,
রাসুলের ভবিষ্যত বাণীর প্রতিফলন। অবশ্যই আল্লাহ ও তার রসুল
জানতেন, রাসুলের ওই পেয়ারের উম্মতই একদিন পথভ্রষ্ট হয়ে অন্য জাতির
গোলামে পরিনত হবে, চরিত্রগত দিক দিয়েও হবে লোভি, ভীরু-কাপুরুষ
আর সবচেয়ে নিচ। তাই বলে এর মানে এই নয় যে আজকের মুসলিম নামক এই
জাতিটার মানুষ গুলো সেই যুগের মুমিন- মুসলিম আছে, তাদের কোন দোষ
নেই । বরং বর্তমান দুরাবস্থা তাদের ই কর্মফল।
আমাদের এই চরম দুরাবস্থার মুল কারন ওগুলো নয়,
বরং অগুলো হচ্ছে ফলাফল। আসল কারন হচ্ছে আমরা আমাদের লক্ষ্য
উদ্যেশ্য থেকে সরে গেছি, আল্লাহর সাথে করা চুক্তি থেকে সরে গেছি।
তাই আমাদের জানতে হবে আল্লাহর শেষ নবী মুহাম্মাদ
(স)এসে মানুষকে আল্লাহর সাথে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ করেছিলেন, কোন
উদ্যশ্যের পানে ওই মানুষ গুলোকে নিয়ে দুর্ণিবার
গতিতে ছুটে চলেছিলেন?
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন , “ যখন তোমার প্রতিপালক
মালায়েকদের ( ফেরেস্তাদের) বললেন ,
আমি পৃথিবীতে খলিফা(প্রতিনিধি/representitive) সৃষ্টি করিতেছি,
তারা বলিল, “ আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন
যে অন্যায় ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্তুতিগান ও
পবিত্রতা ঘোষনা করি। তিনি বললেন, “
আমি জানি যা ,তোমরা তা জাননা”। সুরা বাকারা, আয়াত ৩০।
তাহলে সহজ হয়ে গেলো, যদি আমরা সবাই মিলে খলিফার দায়ীত্ব
পালন করতে পারি তবেই আমরা জান্নাত পাব, পৃথীবিতে ও অন্যায়
অশান্তি হবে না। আর একটু স্পস্ট হওয়া যাক। মনে রাখতে হবে লক্ষ্য যত
স্থির হবে আমাদের সব ছোট খাট মতভেদ দূর করে , একে অন্যের দোষ-
ত্রুটি ক্ষমা করে , সেই মনজিলে মকসুদে পৌছাতে পারব। কারন
আমরা সবাই জানি আমাকে আপনাকে যে কাজের উদ্যেশ্যে এই
দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে , আমাদের দারা তাই যদি না হয়
তবে আমরা যে যত ভাল কাজ ই করি না কেন, আমল করি না কেন , আমার
প্রকৃত কাজ ই অপুর্ণ রইল, আমার দুনিয়ার জীবনের পরীক্ষায় আমি ফেল
করলাম।
তাহলে আমাদের জন্যে এটা জানা একান্ত
জরুরী যে খালীফা হিসেবে আমাদের কাজ কি। খলীফার
কাজকে বলে খেলাফাত। খেলাফাত মানে কারও প্রতিনিধিত্ব করা।
কোনো একজনের কাজ তার হয়ে অন্য আর কেউ করা । আল্লাহ কি করেন?
আল্লাহ তার নিজ গুনে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পর তা শাষন করেন ,
পরিচালনা করেন। কিন্তু পৃথীবি পরিচালনার ভার আল্লাহ
সরাসরি নিলেন না। আল্লাহ মানুষ কে দিলেন পৃথীবির মানব
জাতিকে পরিচালনার ভার। মানুষ আল্লাহর গুনে গুনান্বিত হয়ে ,
আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী পৃথীবির মানব সমাজ পরিচালনা করবে।
এটাই আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব। আজ ও পৃথিবীর মানুষ তাদের সমাজ রাষ্ট্র
পরিচালনা করছে, কিন্তু প্রতিনিধিত্ব করছে ইবলিশ-শয়তানের। কারন
পৃথীবির মাণূষ আল্লাহর দেয়া বিধান বাদ দিয়ে নিজেরা ই জীবন-
বিধান তৈরি করে নিচ্ছে। তার ফলাফল হিসেবে অন্তহীন অন্যায়
অশান্তি ও রক্তপাতে নিমজ্জিত আছে। এটাই আল্লাহর সাথে ইবলিশের
চ্যালেঞ্জ ।যে ইবলিশ মানুষ কে দ্বারা আল্লাহর বিধান অমান্য করিয়ে,
সামষ্টিক জীবনে অন্যায় রক্তপাতে পুর্ন করবে, ফেরেস্তাদের
ধারনা সঠিক প্রমান করবে। খলীফা বলতে আমারা সাধারনত
বুঝি রাসুলের ঐ সকল সাহাবীদের যারা আল্লাহর দেয়া জীবন
ব্যাবস্থা , দীন প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী নেতা একজন ই হবেন, তার
নেতৃত্বে যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানব সমাজ পরিচালিত হয়
তবেই আমরা সম্মিলি্ত ভাবে আমাদের উপর অর্পিত দায়ীত্ব পালন
করলাম। আমরাও আল্লাহর খলীফার দায়ীত্ব পালন করলাম। আল্লাহর
খেলাফাত করলাম, ইবলিশের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ কে জয়ী করলাম।
মনে রাখতে এটাই আমাদের কাজ। বর্তমানে এই কাজ কিন্তু
আমরা করতে ব্যর্থ, বহুকাল -কমপক্ষে হাজার বছর যাবত এই কাজ
থেকে মুসলিম নামক জাতিটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । তার
মানে আমরা ব্যর্থ, আমাদের জীবন অর্থহীন। তাই দুনিয়ার
জীবনে আল্লাহ কে বাদ দিয়ে অন্য হুকুম দাতা , অন্য বিধাতা , অন্য প্রভু
মানার কারনে আল্লাহর সাহাজ্য হতে বিতারিত। তাই সারা দুনিয়ায়
১৬০ কোটি মুসলিম থাকা সত্বেও তারা সবচেয়ে অপমানিত , লাঞ্চিত ,
নির্জাতিত জাতি।
কেউ বলতে পারেন আমাদের আল্লাহ সৃষ্ট করেছেন তার ইবাদাত করার
জন্যে।সুরা আল-যারিয়াত, আয়াত ৫৬।আর ইবাদাত মানে তারা বুঝেন
শুধু নামাজ রোজা তাসবীহ তাহলিল ইত্যাদি।ইবাদাত শব্দের অর্থ
কারো গোলামি করা, বন্দেগী করা, যে কাজের
জন্যে সৃষ্টি বা যে কাজের জন্যে কাউকে নিযুক্ত করা সেই কাজ করা।
যেমন কলম সৃষ্টি লেখার জন্যে তাই লেখাই কলমের ইবাদাত। মনে করুন
আপনার ফুলের বাগানে একজন মালি নিজুক্ত করেছেন, যার কাজ ফুলের
গাছে পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, ক্ষয় ক্ষতির হাত থেকে ফুল
গাছ গূলোকে রক্ষা করা। সে যদি এই কাজ গুলো না করে কিন্তু
আপনাকে খুব ভক্তি করে সালাম দেয়, আপনি দয়ালু দাতা বলে লোকের
কাছে প্রশংসা করে , আপনার সামনে মাথা নিচু
করে দারিয়ে থাকে আপনি কি তাকে প্রতিদান হিসেবে বেতন
ভাতা দিবেন, নিজ বাড়িতে রেখে নিরাপত্বা দিবেন? দিবেন না।
তদ্রুপ আমাদের ইবাদাত হলো আল্লাহ যে কাজের জন্যে আমাদের
সৃষ্টি করেছেন, সেই কাজ , সেই খলীফার কাজ করা, ইবলিশের
চ্যালেঞ্জে আল্লাহ কে জয়ী করে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠা করা। খেলাফার না করে বাকী যতই আমল করি, যত
ভক্তি দেখাই আল্লাহর কাছে তার কোন দাম নেই।আল্লাহ
কোরআনে বলেছেন, “আমি মুমিনদের ওয়ালী-অবিভাবক-রক্ষক”।
সুরা বাকারা , আয়াত ২৫৭। কিন্তু আজ পৃথিবীতে মুমিন-মুসলিম
দাবীদার এই জাতি এত মার খাচ্ছে, এত অপমানিত হচ্ছে কিন্তু আল্লাহ
তার অবিভাবকের দায়ীত্ব পালন করছেন না। কারন আল্লাহর চোখে আজ
আমরা সেই জাতি নেই, মুমিন নই। আমাদের হাজার বছরের লালিত
বিশ্বাস থেকে আমরা হয়ত বলে উঠব না আমরা মুমিন-মুসলিম ঠিক ই
আছি কিন্তু আল্লাহ আমদের দুঃখ কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করতেছেন, আর
অযথার্থ যুক্তি হিসেবে আমরা রাসুল ও তার সাহাবীদের নির্জাতিত
হবার ইতিহাস তুলে ধরতে পারি। কিন্তু আপনি ভাল করে জানেন এই
নির্জাতিত হবার ঘটনা মক্কার জীবনের প্রাথমিক দিককার, আর তখন
মুসলিম দের হাতে কতৃত্ব ছিলনা, মুসিলিমদের হাতে খেলাফাত তখন ও
আল্লাহ তুলে দেন নাই আর সংখায় ও তারা ছিলেন অতি অল্প। আর যখন
আল্লাহ ওই মুমিনদের খেলাফাত দিলেন তারা যদিও সংখায় খুব
বেশী ছিলেন না তারপর ও তারা অর্ধ-পৃথিবীর শাষনকর্তা ছিলেন,
অপমান নির্যাতন তো দুরের কথা দুনিয়ার অপর কেউ তাদের দিক চোখ
তুলেও তাকাত না, তাকাতে সাহস করতো না। অপর দিকে আজ
মুসলিমদের সংখা মোট মানুষের চার ভাগের এক ভাগ, ভোগোলিক দিক
দিয়ে পৃথীবির বিরা্ট অংশ আমাদের দখলে তবুও তারা আজ নির্যাতিত ,
লাঞ্চিত।
তাহলে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ইবাদাতে সচেষ্ট না হই বরং দীনের
বিভিন্ন খুটি-নাটি আমল মাসায়েল নিয়ে পরে থাকি তবে আমাদের
কাজটি হবে নির্বোধ আহাম্বকের কাজ। আপনি হয়ত
এখনো বুঝতে বা মেনে নিতে পারছেন না যে শুভংকরের
ফাকি টা কোনখানে। আমরা জানিই না আমাদের কাজ কি, কি উদ্যশ্য
আমাদের সৃষ্টি করা হল, কোন কাজের ফল হিসেবে আমাদের আল্লাহ
জান্নাতের মত পুরষ্কার দিবেন, তবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবার
কথা চিন্তা করি কিভাবে? ঐক্যবদ্ধ হয়ে করব কি?
যা বলছিলাম, আজ এই মুসলিম নামক জাতি তথা পুরো মানব জাতির
ঐক্যের একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষ হিসেবে আমারা কেনো সৃষ্টি হলাম
তার উদ্যেশ্য সম্পর্কে সু-নিশ্চিত হওয়া।আমি জানিনা আপনি আমার
কথার সাথে একমত হতে পেরেছেন কিনা যে আমাদের প্রধান দায়ীত্ব
আল্লাহর খেলাফাত করা, আল্লাহর হয়ে আল্লাহর দেয়া আইন-বিধান
অনুযায়ী পুরো মানব জাতিকে পরিচালনা করা। ইবলিশের
চ্যালেঞ্জে আল্লাহ কে জয়ী করে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠা করা।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, “আমি তোমার পুর্বে এমন কোন
রাসুল প্রেরণ করি নাই তাহার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত
অন্য কোন ইলাহ নাই; সুতারং আমারই ইবাদাত কর”।
( সুরা আম্বিয়া আয়াত ২৫) ইলাহ শব্দের অর্থ হুকুমদাতা, যার হুকুম ব্যতীত
অন্য কারও হুকুম মানা যায় না তাকে বলা হ্য় ইলাহ। এক কথায় সার্বভৌম
ক্ষমতার মালিক। এটাই আল্লাহর সাথে করা আমাদের চুক্তি। আর
ইবাদাত মানে হল ওই হুকুমদাতার হুকুম মেনে ব্যক্তিক, সামষ্টিক জীবন
পরিচালনা করা, শাষন করা। এর ফলাফল কি? এর ফলাফল জীবনের
প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য, ন্যায় এক কথায় শান্তি।
পক্ষান্তরে আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান বাদ দিয়ে শয়তান ও তার
অনুশারী মানুষদের হুকুম, বিধান দ্বারা অর্থনীতি,
দন্ডবিধি ইত্যাদি পরিচালনা মানে হচ্ছে শয়তানের ইবাদাত করা,
শয়তানের পথ অনুশরন করা, পথভ্রষ্ট জাহান্নামী হওয়া।ইবলিশের
চ্যালেঞ্জে আল্লাহ কে পরাজিত করে শান্তি, নিরাপত্তা ও
ন্যায়বিচারহীন জীবন যাপন করা। যার প্রমান বর্তমান পৃথিবী ।
তাতে আপনি যতই মুত্তাকি পরহেযগার হন না কেন, যত আমল ই করেন
না কেন। তাই সব নবী রাসুল সহ শেষ রাসুলও মক্কাবাসীকে আহবান
করেছেন বল “লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ , মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” , বল নেই
কোন হুকুমদাতা আল্লাহ ছাড়া , আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের
প্রতি রাসুল, নেতা”। খুব স্বাভবিক যে ঐ রাসুল (স) বা নেতার কাজ
ছিল একটি ইস্পাত কঠিন জাতি নিয়ে আল্লাহ
কে হুকুমদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, আল্লাহর বিধান দ্বারা সমাজ ,
রাষ্ট্র পতিচালনা করা,আল্লহর খেলাফাত করা। সুপ্রিয় পাঠক , রাসুলের
উম্মত দাবী করতে চাইলে আপনার আমার ও দায়ীত্ব ঐ ভাবে আল্লাহ
কে একমাত্র হুকুমদাতা- ইলাহ
মেনে আল্লাহকে হুকুমদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সেই
অনুযায়ী মানবজাতিকে পরিচালনা করা, শান্তি –নিরাপত্তায়
পৃথীবিকে জান্নাতে পরিনত করা , আল্লাহর খেলাফাত করা। এই মহাগুরু
দায়ীত্ব বাদ দিয়ে টুপি গোল না লম্বা হবে, কোর্তা লম্বা পরা হল
না খাট এই নিয়ে তর্ক করার কোন মানে থাকতে পারে?
কোরআনের আরো একটি আয়াত দেখুন । দেখে ভাবুন আমরা ইসলামের
যে রুপটা চিনি আর তা নিয়ে মতভেদ, ফেরকা করে মুমিন হবার
আহাম্বকের মত দাবী করি সেটা রাসুলের দ্বারা আনীত ইসলাম
থেকে কতটা ভিন্ন। “ তিনি (আল্লাহ) তার রাসুলকে হেদায়াহ ও সঠিক
দীন সহকারে পাঠিয়েছেন এই জন্য যে তিনি এটাকে (দীনকে) অন্য সব
দীনের উপর জয়যুক্ত করেন, এতে মুশরিকদের যতই অপ্রিতিকর
মনে হোক” (সুরা তওবা, আয়াত ৩৩)। ঠিক অনুরুপ কথা আল্লাহ আবারও
ঘোষনা করেছেন সুরা ফাতাহ এর ২৮ নং আয়াতে। সুরা সফ এর ৯
নং আয়াতে। যেনে রাখা ভাল হেদায়াতের
মানে হচ্ছে কলেমা “লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ” তে সাক্ষ্য দেয়া, আর
আল্লাহর দেয়া বিধানের সমষ্টি ই হচ্ছে দীন, দীনুল হক বা সঠিক দিন।
আর রাসুল কে এই দুটি জিনিষ আল্লাহ দিয়ে দায়ীত্ব হিসেবে আল্লাহ
দিলেন এই দীন কে মানব জীবনে কার্যকর করার। কারন আল্লাহর
দেয়া বিধান আছে, মানব জাতির সব সমস্যার সমাধান আছে কিন্তু
তা যদি প্রয়োগ না থাকে তবে তার কোন মুল্য নেই । রাসুল তাই করলেন
গুটি কয়েক মানুষ নিয়ে দীন প্রতিষ্ঠার আমরন সংগ্রাম করে গেলেন, দীন
প্রতিষ্ঠা করলেন, আল্লাহর খেলাফার করলেন, শুরু করলেন আল্লাহর প্রকৃত
ইবাদাত , তারপরে এই কাজের দায়ীত্ব দিয়ে গেলেন নিজ
হাতে গড়া উম্মতের উপর। এইভাবে রাসুল (স) শয়তান
কে হটিয়ে আল্লাহর খেলাফাত করলেন, ইবাদাত করলেন। সেই কাজ
থেকে অভিশপ্ত এই মুসলিমেরা নিযুত মাইল দূরে,
তাতে সে যে মাযহাবের ই হোক, নাকি লা-মাযহাবের হোক
বা সে শিয়া সুন্নী যাই হোক। তবে কি হয় নি সময় নিজ নিজ অহংকার
ভুলে, বিভেদ মাটি চাপা দিয়ে নিজেকে জাহান্নামের আগুন
থেকে বাচাবার? একজন নেতার নেতৃত্বে আল্লাহ
কে হুকুমদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার?
আগেই বলে এসেছি অনৈক্যের প্রধান কারন মতভেদ, দীনের বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত। কিন্তু দীনু ইসলামে এই মতভেদের কোন
সুযোগ আল্লাহ ও তার রাসুল রাখেন নি । একদিন রাসুল (স) দেখলেন দুই
সাহাবী পাক কুরআনের একটি আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক করছেন, এ
দেখে রাসুলের চেহারা মোবারক রাগে রক্ত লাল হয়ে গেলো।
তিনি রাগস্বরে বললেন, “কুরআনের আয়াত নিয়ে মতভেদ করা কুফরী।
তোমাদের পুর্ববর্তী জাতি গুলো ও নিজেদের ভিতর মতভেদ করে ধ্বংশ
হয়ে গেছে”। শুধু কুরআনের আয়াত নয় যে কোন বিষয় নিয়ে মতভেদ করাই
কুফরী। একটু ভিতর থেকে উপলব্ধি করুন। আমাদের চোখে সামান্য একটু
তর্কা- তর্কিকে আল্লাহর রাসুল কুফর বলে দিলেন?অথচ আমাদের মুসলিম
নামক এই জাতির মাঝে কি অবস্থা? এবার আসুন কেন এই কাজ
কুফরী তা একটু ভেবে দেখা যাক। মুমিনেরা ঐক্যবদ্ধ হয় সংগ্রামের
মাধ্যমে মানুষের জীবন ব্যবস্থা উপড়ে ফেলে আল্লাহর দেয়া জীবন
ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে।ঐক্য না থাকলে এই কাজ কখনও সম্ভব নয়।
মানুষকে আল্লাহ কাজ দিলেন খেলাফাত করার। আল্লাহর বিধান
দিয়ে শাষন করার। যদি আপনার আমার অনৈক্যের কারনে মুমিন
দলটি দীন কায়েম করতেই ব্যর্থ হয় তবে আমার মুমিন হওয়া বা না হওয়ায়
আল্লাহর কিছুই আসে যায় না, আমার হাজারও আমল দিয়ে আল্লাহ
কি করবেন? যে কাজের জন্যে আমি , সেই কাজ ই
যদি আমাকে দ্বারা না হয় তবে আমি মুমিন নই। আর মুমিন
না হওয়া মানেই কাফের বা মুশরিক হওয়া।
এখন আপনি জানলেন আপনার কাজ কী, কি কাজের তরে আপনার দুনিয়ায়
আবির্ভাব।তাহলে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থে এই কাজে ঐক্যবদ্ধ
ভাবে লড়াই করা ছাড়া অন্য উপায় আছে কি?
জানি আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আছে? অনেক প্রশ্ন , শংসয়
দানা বেধেছে। তার উত্তরও আছে। কিন্তু লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।
তাই সংক্ষেপে শেষ করব।
আরো একটি কুরআনের আয়াত লক্ষ্য করুন। সুরা আল বাইয়্যেনাহ ৪ ও ৫
নং আয়াত।আল্লাহ বলেন-যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল (ইহুদী,
খ্রীষ্টান, ইত্যাদি) তারা তো বিভক্ত হয়ে গেল তাদের নিকট সুস্পষ্ট
প্রমাণ আসার পর। তাহাদের এর চেয়ে বেশি আদেশ করা হয় নাই
যে আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদাত
করবে এবং সালাত (নামাজ) কায়েম করিবে ও যাকাত দিবে, ইহাই
চিরন্তন দীন”। এই আয়াত আমাদের জন্য মারাত্তক সাবধানবাণী ।দেখুন
এখানে আল্লাহ ইবাদাত ও সালাত কে আলাদা ভাবে বর্ননা করেছেন।
প্রচলিত ভাবে আমরা বুঝি সালাহ সওম ইত্যাদি হচ্ছে আল্লাহর
ইবাদাত। তাই কালেমার অর্থ “আল্লাহ ছাড়া হুকুম দাতা নেই” এর
পরিবর্তে “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই” করা হয়।কিন্ত আল্লাহ
বলে দিলেন ভিন্ন কথা।যে সালাহ ও ইবাদাত ভিন্ন। ইবাদাত
হচ্ছে আল্লাহর খলিফা হিসেবে তার বিধান দ্বারা সমাজ,
ব্যাক্তি রাষ্ট্র জীবন পরিচালনা করা। আর পুর্ববর্তীদের মত আমাদেরও
আল্লাহ এই একই হুকুম দিয়েছেন, একই কাজের দায়ীত্ব দিয়েছেন। কিন্তু
আমরা অতি মুসলিমরা আল্লাহর খেলাফাত বাদ দিয়ে,
সেটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে বাদ দিয়েছি। তার স্থলে মানুষের
আইন-বিধান মেনে সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনা করছি, পরিচালিত হচ্ছি।
পরিনামে সরাসরি কাফের ও মুশরিক হচ্ছি।অন্যদিকে সঠিক দীন
আল্লাহর পক্ষ থেকে আসার পরও পরস্পর বিভক্ত হয়ে গেছি। তাহলে প্রশ্ন
জাগে সালাত বা নামাজের এত গুরুত্ব কেন? খেলাফাত করার জন্যে,
জিহাদ বা সর্বাত্তক সংগ্রামে বিজয়ী হবার জন্যে যে চরিত্র দরকার
সালাত সেই চরিত্র দান করে। সেই গুন গুলো ছাড়া কোন ভাবেই
জিহাদে বিজয় সম্ভব নয়, তাই খেলাফাত করা সম্ভব নয়। যেমন সালাত
মানুষকে ঐক্যের প্রশিক্ষন দেয়। ইমামের বা নেতার তাকবীরের
সাথে সাথে রুকু- সেজদা আমাদের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।
অসংখ্য আরকান আহকাম আমাদের শৃংখলার প্রশিক্ষণ দেয়।
আশা করি আপনি আপনার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। দীনের
উদ্যেশ্য সম্পর্কে নিশ্চত হয়েছেন। আপনার দায়ীত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত
হয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মুমিনের সংগা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,”
মুমিন তো কেবল তারাই , যারা আল্লাহ ও রসুলে ইমান আনে আতঃপর
কোন সন্দেহ না করে জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ
করে” (সুরা আল হুজরাত আয়াত ১৫)। আল্লাহ ও রসুলে ইমান আনার অর্থ
আল্লাহ কে একমাত্র হুকুমদাতা হিসেবে মানা, আল্লাহর দীন
কে স্বীকৃতি দেয়া, আর রাসুল যা বলেছেন তা পক্ষান্তরে আল্লাহর ই
কথা, তাই সগুলোও দীনের অংশ। আর জিহাদ হল এই দীন
কে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সর্ব রকম চেষ্টা করা। তার অর্থ এই দাঁড়ায়
যে আল্লাহর খেলাফাত প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা। মানুষের একমাত্র
কাজ যে খেলাফাত তা আল্লাহর দেয়া মুমিন হবার এই শর্ত থেকে আর ও
একবার নিশ্চিত হওয়া গেল। এরকম আরো অনেক কোরআনের আয়াত ও
হাদিস দ্বারা নিশ্চিত হওয়া যায় ।
তাই আমাদের সামনে একটাই পথ, ইসলাম সম্পর্কে সব ভুল ধারনা বাদ
দিয়ে আল্লাহ কে ইলাহ-হুকুমদাতা মেনে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর
পথে জান মাল দিয়ে সংগ্রাম করা। আল্লাহর দীন তথা খেলাফাত
প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এই কাজ আল্লাহর একজন মনোনীত ইমাম-
নেতা ছাড়া কোন ভাবেই সম্ভব না, যাকে আল্লাহ তার চলার
পথে সাহাজ্য করবেন। যিনি হবেন এই যামানার ইমাম।
আমরা বামে ডানে না তাকিয়ে হব তার একনিষ্ঠ সাথী।
“ তোমাদের কি হইল যে, তোমরা যুদ্ধ করিবে না আল্লাহর
পথে এবং অসহায় নরনারী এবং শিশুদের জন্যে, যারা বলে, হে আমাদের
প্রতিপালক! এই জনপদ-যাহার অধিবাসী যালিম, উহা হইতে আমাদের
অন্যত্র লইয়া যাও; তোমার নিকট হইতে কাহাকেও আমাদের অভিভাবক
কর এবং তোমার নিকট হইতে আমাদের সাহাজ্যকারী দান কর”।
সুরা নিসা আয়াত ৭৫। তাহলে আমাদেরও ফরিয়াদ হে আল্লাহ! আমাদের
কে তোমার পক্ষ থেকে সাহায্যকারী, অভিভাভক দাও, এ যামানার
ইমাম দাও। যার নেতৃত্ব আমরা তোমার খেলাফাতের জন্যে ঐক্যবদ্ধ হব,
ইবলিশের চ্যালেঞ্জে তোমাকে জয়ী করে শান্তি, নিরাপত্তা ও
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব।আমীন।।
No comments:
Post a Comment