DESHERPATRO

Tuesday, July 30, 2013

এসলামে মারেফত ও শরিয়তের ভারসাম্য বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ (৮ম অংশ)

এসলামে মারেফত ও শরিয়তের ভারসাম্য বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ (৮ম অংশ)

এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী 

মহানবীর (দ:) ভবিষ্যবাণী মোতাবেক ৬০/৭০ বছর পর যখন উম্মতে মোহাম্মদীর জাতি হিসাবে মৃত্যু হোলো তখন কি রইলো? রইলো জাতি হিসাবে মোসলেম। মোসলেম শব্দের অর্থ হলো- যে বা যারা আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থাকে তসলীম অর্থাৎ সসম্মানে গ্রহণ কোরে নিজেদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠা করে, অন্য কোন রকম জীবন বিধানকে স্বীকার করে না, সে বা তারা হলো মোসলেম।

এই জাতি রসুলাল্লাহর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ তার মাধ্যমে প্রেরিত দীনকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দেবার ফলে জাতি হিসাবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর সংজ্ঞা থেকে বিচ্যুত হোয়ে শুধু একটি মোসলেম জাতিতে পরিণত হলো। এ জাতির সংবিধান রইলো কোর’আন ও হাদীস, রাজনৈতিক, আর্থ সামাজিক সবরকম ব্যবস্থা শাসন ও দণ্ডবিধি (Penal Code) সবই রইলো ঐ কোর’আন ও হাদীস মোতাবেক। ওর বাইরে অন্য কোন রকম রাজনৈতিক বা আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে তারা শেরক বা বহু ঈশ্বরবাদ মনে কোরতেন। কিন্তু তাফেলেছিলেন, তাদের আকীদা বিকৃত হোয়ে গিয়েছিলো। কাজেই তারা ঐ বিশাল ভূখণ্ডের শাসক হোয়ে পৃথিবীর আর দশটা রাজ্যের মত রাজত্ব কোরতে লাগলেন। এই অবস্থায় কয়েক’শ বছর পার হোয়ে গেলো।আমি এইখানে একটু থামবো। কারণ এই সময় থেকে নিয়ে কয়েকশ’ বছর পর এই জাতির পতন ও ইউরোপের অন্যান্য জাতিগুলির কাছে যুদ্ধে হেরে যেয়ে তাদের গোলামে পরিণত হওয়া পর্যন্ত কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিন্তা করার আছে। উদ্দেশ্য ভুলে যেয়ে পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম যখন এই জাতি বন্ধ করলো, ঠিক তখনকার পরিস্থিতি এই রকম।

ক) পৃথিবীর দুইটি বিশ্ব শক্তিকে উম্মতে মোহাম্মদী সশস্ত্র সংগ্রামে পরাজিত কোরেছে।খ) একটি (পারস্য) এই শেষ জীবন ব্যবস্থাকে স্বীকার ও গ্রহণ কোরে এই জাতির অন্তর্ভুক্ত হোয়ে গেছে ও অন্যটি (পূর্ব রোমান অর্থাৎ বাইজেনটাইন) তার সাম্রাজ্যের বেশীর ভাগ হারিয়ে শক্তিহীন ও দুর্বল হোয়ে গেছে। খ্রীস্টান শক্তি বোলতে তখন ইউরোপের ছোট ছোট কয়েকটি রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছু নেই।গ) উম্মতে মোহাম্মদী যদি তখন তাদের উদ্দেশ্য ভুলে না যেতো তবে পৃথিবীময় এই শেষ জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠায় আর কোন বড় বাধা ছিলো না। থাকলেও তা ঐ দুই বিশ্বশক্তির মতই পরাজিত হতো। সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি (এসলাম) প্রতিষ্ঠিত হতো, আল্লাহ তার শেষ রসুলকে (দ:) যে দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন’ (কোর’আন- সূরা আল ফাতাহ ২৮। আত তওবা ৩৩, আস্ সাফ ৯) তা পূর্ণ হতো, পৃথিবী থেকে অন্যায় অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত বন্ধ হোয়ে পূর্ণ শান্তিতে মানব জাতি বাস কোরতে পারতো, মালায়েকদের আশংকা মিথ্যা হতো, ইবলিসের মাথা নত হোয়ে যেতো, বিশ্বনবীকে আল্লাহর দেয়া রহমাতুল্লীল আলামীন উপাধির অর্থ পূর্ণ হতো।

ঘ) এই সংগ্রাম যখন আরম্ভ হোয়েছিলো তখন উম্মতে মোহাম্মদীর মোট জনসংখ্যা পাঁচ লাখেরও কম। কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই, পৃথিবীর দরিদ্রতম জাতিগুলির অন্যতম, যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র নিুতম প্রয়োজনের চেয়েও কম। আর প্রতিপক্ষ তদানিন্তন পৃথিবীর দুই মহাশক্তি, জনসংখ্যায়, সম্পদে সুশিক্ষিত সৈন্যের সংখ্যায় অস্ত্র ও সরঞ্জামে এক কথায় কোনদিক দিয়েই তুলনা চলে না। আর ৬০/৭০ বছর পর যখন এ সংগ্রাম বন্ধ করা হলো তখন পরিস্থিতি ঠিক উলটো। এই নিঃস্ব জাতি আটলান্টিকের তীর থেকে চীনের সীমান্ত আর উত্তরে উরাল পর্বতমালা থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের তীর পর্যন্ত বিশাল এলাকার শাসনকর্তা। তখন আর নিঃস্ব নয়, তখন সম্পদে, সামরিক শক্তিতে জনবলে প্রচণ্ড শক্তিধর পৃথিবীর কোন শক্তির সাহস নেই এই জাতির মোকাবেলা করার। অর্থাৎ প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী যারা নিঃসংশয়ে জানতেন তাদের নেতার (দ:) জীবনের উদ্দেশ্য কী ছিলো এবং তাদের নিজেদের জীবনের উদ্দেশ্যই বা কী তারা ডাইনে বামে কোনও দিকে না চেয়ে একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) সেই উদ্দেশ্য অর্জনে পার্থিব সব কিছু কোরবান কোরে পৃথিবীতে বের হোয়ে পড়ে ছিলেন। আল্লাহ তার প্রতিশ্র“তি মোতাবেক তাদের সঙ্গে ছিলেন। আর স্বয়ং আল্লাহ যাদের সাথে তারা কেমন কোরে বিফল হবে, কেমন করে পরাজিত হবে? তাই মানব ইতিহাসে দেখি এক অবিশ্বাস্য অধ্যায়। অজ্ঞাত, উপেক্ষিত ছোট্ট একটি নিঃস্ব জাতি অল্প সময়ের (৬০/৭০ বছর) মধ্যে মহাপরাক্রমশালী দুইটি বিশ্ব শক্তিকে পরাজিত কোরে প্রায় অর্দ্ধেক পৃথিবীতে ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করলো। উম্মাহর উপর দায়িত্ব দেয়া কাজের এই পর্যন্ত অগ্রগতি হওয়ার পর দুর্ভাগ্যক্রমে এই উম্মাহ তার আসল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভুলে গেলো, এর আকীদা নষ্ট হোয়ে গেলো, পৃথিবীতে শান্তি (এসলাম) প্রতিষ্ঠার বদলে তাদের আকীদা হোয়ে গেলো রাজত্ব করা, অন্য দশটা সাম্রাজ্যের মত। এই উম্মাহকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হোয়েছিলো সে কাজ ত্যাগ কোরে সে অন্য পথ ধরলো।কিন্তু আসল উদ্দেশ্য ত্যাগ কোরলেও যেহেতু তারা এই শেষ জীবন ব্যবস্থা, দীনের উপরই মোটামুটি কায়েম রোইলো তাই এর সুফলও তারা লাভ করলো। কোর’আনের ও হাদীসের নির্দেশ মোতাবেক শাসন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করার ফলে জাতি আইন শৃঙ্খলা ও সম্পদ বিতরণে অপূর্ব সাফল্য লাভ করলো, আল্লাহ ও রসূলের (দ:) জ্ঞান আহরণের আদেশ উৎসাহ ভরে পালন কোরে অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর শিক্ষকের আসনে উপবিষ্ট হলো। যে সময়টার (চবৎরড়ফ) কথা আমি বোলছি অর্থাৎ জাতি হিসাবে সংগ্রাম ত্যাগ কোরে উম্মতে মোহাম্মদীর সংজ্ঞা থেকে পতিত হওয়া থেকে কয়েকশ’ বছর পর ইউরোপের বিভিন্ন জাতির পদানত ও গোলামে পরিণত হওয়া পর্যন্ত এই যে সময়টা, এই সময়টা পার্থিব হিসাবে অর্থাৎ রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ইত্যাদিতে এক কথায় উন্নতি ও প্রগতি বোলতে যা বোঝায় তাতে এই জাতি পৃথিবীর সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হোয়ে রোইলো।

শেষ নবীর (দ:) মাধ্যমে শেষ জীবন ব্যবস্থা মোটামুটি নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করার অনিবার্য ফল হিসাবে এই জাতি এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হলো যে, তদানিন্তন বিশ্ব সভয়ে ও সসম্ভ্রমে এই জাতির সামনে নতজানু হোয়ে পড়েছিলো। এই সময়ে এই জাতির সাফল্য, কীর্তি, বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে জ্ঞানার্জন, গবেষণা, পৃথিবীর অজানা স্থানে অভিযান ইত্যাদি প্রতি বিষয়ে যে সাফল্য লাভ কোরেছিলো তার বিবরণ এখানে দেওয়ার স্থান নেই এবং প্রয়োজনও নেই। এ ব্যাপারে বহু বই কেতাব লেখা হোয়ে গেছে। এই সময় (চবৎরড়ফ) টাকেই বলা হয় এসলামের স্বর্ণযুগ।কিন্তু এত কিছুতেও কোন লাভ নেই- কারণ আসল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হোলে বাকি আর যা কিছু থাকে সবই অর্থহীন। এ সত্য রসুলাল্লাহর (দ:) ঘনিষ্ঠ সহচর এই জাতির প্রথম খলিফা আবু বকর (রা:) জানতেন। তাই খলিফা নির্বাচিত হোয়ে তার প্রথম বক্তৃতাতেই তিনি উম্মতে মোহাম্মদীকে সম্বোধন কোরে বলেছিলেন- হে মোসলেম জাতি! তোমরা কখনই সংগ্রাম (জেহাদ) ত্যাগ কোরোনা। যে জাতি জেহাদ ত্যাগ করে- আল্লাহ সে জাতিকে অপদস্থ, অপমানিত না কোরে ছাড়েন না। আবু বকর (রা:) এ কথা তার প্রথম বক্তৃতাতেই কেন বোলেছিলেন? তিনি বিশ্বনবীর (দ:) ঘনিষ্ঠতম সাহাবাদের একজন হিসাবে এই দীনের প্রকৃত মর্মবাণী, হকিকত তার নেতার কাছ থেকে জেনেছিলেন।

বিশ্বনবীর কাছ থেকে জানা ছাড়াও আবু বকর (রা:) আল্লাহর দেয়া সতর্কবাণীও কোর’আনে নিশ্চয়ই পড়েছিলেন যেখানে আল্লাহ এই মো’মেন জাতি ও উম্মতে মোহাম্মদীকে লক্ষ্য কোরে বোলছেন- যদি তোমরা (জেহাদের) অভিযানে বের না হও তবে তোমাদের কঠিন শাস্তি (আযাব) দেবো এবং তোমাদের বদলে (তোমাদের পরিত্যাগ কোরে) অন্য জাতিকে মনোনীত করবো (কোর’আন- সূরা আত তওবা ৩৮)।

 এই জাতি যে একদিন তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থেকে ভ্রষ্ট হোয়ে যাবে, সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দেবে ফলে আল্লাহর গযবে পতিত হবে তাও বোধহয় তিনি তার প্রিয় নেতার (দ:) কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেন। তাই খলিফার দায়িত্ব হাতে নিয়ে তিনি সর্বপ্রথম সেই সম্বন্ধেই জাতিকে সতর্ক কোরে দিলেন। শুধু আবু বকর (রা:) নয়, তারপর ওমর (রা:), ওসমান (রা:) এবং আলী (রা:) ও যে ঐ মর্মবাণী সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সজাগ ছিলেন তার প্রমাণ এই যে, তাদের সময়েও এই শেষ জীবন ব্যবস্থাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়া হোয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদা তো নয়ই এমনকি মহানবীর (দ:) একজন মাত্র সাহাবাও কোনদিন এই সশস্ত্র সংগ্রামের বিরতির জন্য একটিমাত্র কথা বোলেছেন বোলে ইতিহাসে প্রমাণ নেই। বরং প্রতিটি সাহাবা তাদের পার্থিব সব কিছু কোরবান কোরে স্ত্রী পুত্রকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়ে বছরের পর বছর আরব থেকে বহু দূরে অজানা অচেনা দেশে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। আবু বকরের (রা:) মত তারাও জানতেন যে, এই সংগ্রাম বিশ্বনবীর (দ:) উপর আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব, যা তার উম্মাহ হিসাবে তাদের উপর এসে পড়েছে। তারা জানতেন এ সংগ্রাম ত্যাগ করার অর্থ উম্মতে মোহাম্মদীর গণ্ডি থেকে তাদের বহিষ্কার, আল্লাহর রোষানলে পতিত হওয়া ও পরিণামে আল্লাহর শত্র“দের হাতে পরাজিত, অপমান, অপছন্দ ও লাঞ্ছনা, যা আবু বকর (রা:) বলেছিলেন। (চোলবে…)

[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত এসলামের যে জ্ঞান দান কোরেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা কোরেছেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত।যোগাযোগ: হেযবুত তওহীদ, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫, ০১১৯১৩৬৭১১০]

 - See more at: http://desherpatro.com
www.hezbuttawheed.com

No comments:

Post a Comment